সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ না হওয়ায় পরীক্ষামূলক কার্যক্রমে দেরি

পদ্মার ওপর সঞ্চালন লাইন বসানোর কাজ শেষ হতে আরও এক বছর বেশি সময় লাগছে। ফলে আরও এক বছর পিছিয়ে চলতি বছরের শেষের দিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হতে পারে।
গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার প্রাথমিকভাবে গত বছরের ডিসেম্বরে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ইউনিটের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করেছিল।
জানুয়ারির শেষে অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, রুশ সংস্থা রসাটম বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছে যে তারা আগামী এপ্রিলের মধ্যে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরুর চেষ্টা করছে।
গত সপ্তাহে রসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচোভ যখন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন, তখন তিনি পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালানোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বলতে পারেননি।
লিখাচোভ বলেছিলেন, 'মহড়া চলছে। শিগগিরই পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হবে।'
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'ইউনিট-১ এর নির্মাণকাজ ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। তবে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং পদ্মা ও যমুনার ওপর দিয়ে সঞ্চালন লাইন বসানোসহ সহায়ক প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে প্রত্যাশার তুলনায় বেশি সময় লাগছে।'
যমুনার ওপর সঞ্চালন লাইন তৈরির কাজ শেষ হতে সময় লাগলেও সরকার দ্রুত পদ্মার ওপর সঞ্চালন লাইন বসানোর কাজ শেষ করার চেষ্টা করছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের বৈশ্বিক পর্যবেক্ষক আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন ও প্রত্যয়নের পর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হবে।
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'পদ্মার ওপর সঞ্চালন লাইন বসাতে কিছুটা সময় লাগবে।'
গত জানুয়ারি পর্যন্ত পদ্মায় সঞ্চালন লাইনের ভৌত কাজের অগ্রগতি ছিল প্রায় ৮৫ শতাংশ।
তবে, এই দুটি ছাড়াও আরও দুটি সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত আছে। একটি রূপপুর থেকে বাঘাবাড়ী ও অন্যটি রূপপুর থেকে বগুড়া পর্যন্ত। এ দুটি দিয়েও পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন চালু করা যাবে।
রাশিয়া পদ্মার সঞ্চালন লাইন ব্যবহারের মাধ্যমেই পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরুর দিকে জোর দিচ্ছে বলে জানান দেলোয়ার হোসেন।
২০১৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি পদ্মা ও যমুনার ওপর সঞ্চালন লাইন প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল।
গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৪৪ শতাংশ ও আর্থিক অগ্রগতি ৩৩ শতাংশ।
ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যমুনায় সঞ্চালন লাইনের বাস্তব অগ্রগতি ৫০ শতাংশ বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ শুরু থেকেই বিলম্বিত হচ্ছিল। গত বছর দেশে ছাত্রদের আন্দোলনের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ভারতীয় সব কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ বন্ধ করে দেন।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশের তথ্য বলছে, দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য পদ্মা ও যমুনায় ১৬ কিলোমিটার নদী ক্রসিং লাইনসহ মোট ৬৬৯ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন প্রয়োজন।
তবে প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, তারা আবার কাজ শুরু করেছেন। শিগগিরই সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ করার ব্যাপারে তারা আশাবাদী।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক জাহেদুল হাসান বলেন, 'ইউনিট-১ এর ভৌত কাজ প্রায় শেষ হলেও সঞ্চালন লাইনের কাজ এখনো শেষ হয়নি।'
ফলে ইউনিটে বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে কারিগরি পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। সব পরীক্ষা শেষ করতে কমপক্ষে দুই মাস সময় প্রয়োজন।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে রিঅ্যাক্টর ভবনে জ্বালানি দিতে হবে। এতে আরও তিন মাস সময় লাগবে।
'সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ করে ইউনিট-১ চালু করতে "চেঞ্জ রিঅ্যাকশন" ধাপে পৌঁছাতে আমাদের পাঁচ থেকে ছয় মাস সময় লাগবে।'
প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে আইএইএর এক শীর্ষ কর্মকর্তা আগামী ৭ মার্চ বাংলাদেশে আসবেন।
জাহেদুল হাসান বলেন, 'আইএইএর পর্যবেক্ষণের পর আমরা পরবর্তী ধাপে যাব।'
রূপপুরে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মূল প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুসারে ইউনিট-১ ২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর, ইউনিট-২ ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর ও পুরো প্রকল্পটি ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরে শেষ হবে।
২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনিট-১ ও ২০১৮ সালের ১৪ জুলাই ইউনিট-২ এর নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
Comments