রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিদেশি অতিথি কম, বিলাসবহুল হোটেল ব্যবসায় ভাটা

দেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিদেশি অতিথির সংখ্যা কমেছে। বিলাসবহুল হোটেল ব্যবসায় দেখা দিয়েছে ভাটা। সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই বলেছেন এই শিল্প-সংশ্লিষ্ট এক শীর্ষ নির্বাহী।

দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা, শেরাটন ঢাকা ও হানসার মালিক ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টর্সের প্রধান নির্বাহী শাখাওয়াত হোসেন জানান, বিদেশি পর্যটক কমে যাওয়ায় অভিজাত হোটেলগুলোর ব্যবসা চাপে আছে।

বিদেশি ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের ওপর এসব হোটেলের ব্যবসা ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'বর্তমানে এমন অনিশ্চিত পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছি যেখানে কোনো কিছুই স্পষ্ট নয়।'

তিনি জানান, জাপান ও কোরিয়ার নাগরিকদের বাংলাদেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মার্কিন ভ্রমণকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ভিসা বিধিনিষেধ বহাল আছে।

আর্থিক পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, '২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমাদের প্রতিষ্ঠান ২০ কোটি টাকা আয় করলেও চলতি বছরের একই মাসে আয় নেমে এসেছে ১৭ কোটি টাকায়।'

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ছিল। এমন সময়গুলোতে হোটেল ব্যবসা স্বাভাবিক সময়ের মতো হয় না জানিয়ে, তিনি ২০২৪ সালের বদলে তাদের বর্তমান ব্যবসা পরিস্থিতির তুলনা করেছেন ২০২৩ সালের সঙ্গে।

অতিথির সংখ্যা শতভাগ হলেও অতিথিরা কম খরচ করছেন। তার ভাষ্য, 'আয় কমলেও খরচ একই আছে।'

আগে বিদেশি অতিথিদের বেশিরভাগই ছিলেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক অথবা প্রধান নির্বাহী।

এখন মূলত মাঝারি পর্যায়ের কর্মকর্তা, স্টার্টআপ কর্মকর্তা বা এনজিও প্রতিনিধিরা এসব হোটেলে থাকছেন। ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরাও অনেকে আসছেন।

আগে অতীতে অতিথিদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ভারত থেকে আসতেন। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাদের সংখ্যা দ্রুত কমেছে।

একইভাবে জাপানি ও কোরিয়ান পর্যটক নেই। ইউরোপের অধিকাংশ দেশের ব্যবসায়ীরাও আসছেন না।

দেশের পর্যটন ও আতিথেয়তা শিল্পে ২০ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই কর্মকর্তা মনে করেন, 'বর্তমানে বিলাসবহুল হোটেলের চাহিদা কম। আবার হোটেলের সংখ্যা বেশি।'

এই পরিস্থিতিতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হোটেলগুলোকে রুম ভাড়া কমাতে হয়েছে। আগে তাদের হোটেলে এক রাত থাকার খরচ ২০০ ডলার হলে এখন তা ১৫০ ডলারে পাওয়া যাচ্ছে।

'রুম খালি থাকলে আমাদের পেটে ভাত জুটবে না। এখন মূল লক্ষ্য মার্কেট শেয়ার ধরে রাখা। পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা আইনশৃঙ্খলা নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন।'

'আগে প্রতিষ্ঠানটির ১০ শতাংশ মুনাফা থাকলেও এখন তা আট শতাংশে নেমে এসেছে,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'দিন শেষে পরিচালন খরচ অপরিবর্তিত থাকে। মাস শেষে কর্মীদের বেতন দিতে হয়। এ ছাড়াও, বছর শেষে অংশীদারদের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণ করতে হবে।'

প্রতিষ্ঠানটির আয়ের ৫০ শতাংশেরও বেশি আসে রুম ভাড়া থেকে। খাদ্য ও পানীয় বিক্রি থেকে আসে ৪৫ শতাংশ। বাকি পাঁচ শতাংশ আসে পরিবহন, ফিটনেস ও স্পা সেবা থেকে।

অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের সঙ্গে ব্যবসা করতে আগ্রহী। কিন্তু বর্তমানে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ নেই, বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সৌদি আরব, আরব আমিরাত, জাপান ও চীনের সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও অন্যান্য ব্যবসায়িক সংকট নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে জানানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'হোটেলের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার পণ্য ও আসবাবপত্রের ওপর কর ২০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। আগে তা ছিল প্রায় ২০ শতাংশ।'

এ ছাড়াও, উন্নতমানের মাংস আমদানি বন্ধ। মদ আমদানিতে গড়ে ৬০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এগুলো বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

'এমন কোনো নীতিনির্ধারক নেই যারা সত্যিকার অর্থে এই শিল্পের সংকটগুলো বোঝেন। মন্ত্রণালয় পর্যায়ে আমাদের অভিজ্ঞ পেশাজীবী দরকার।'

তার মতে—দেশে স্বাধীন পর্যটন কর্তৃপক্ষ থাকা দরকার। মন্ত্রণালয় শুধু নীতিনির্ধারণের দিকে মনোযোগ দেবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে দেশ অনেক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

তিনি অতিথি সেবায় আগ্রহী তরুণদের এই খাতে ক্যারিয়ার গড়তে উত্সাহিত করে বলেন, 'এটি এমন এক মহাসড়ক সেখানে যানবাহনের অভাব। এটি সমৃদ্ধির সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ।'

এই শিল্পের সংকট মোকাবিলায় তিনি তিনটি প্রধান অগ্রাধিকার তুলে ধরে বলেন, 'মন্ত্রণালয় পর্যায়ে প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ ও আন্তর্জাতিকভাবে অভিজ্ঞ পেশাজীবী নিয়োগ দিতে হবে। স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি আমদানি পণ্যের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক কমাতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Tax authority to split. Will it bring the desired outcome?

Touted as a historic overhaul, the move has ignited debate over whether it will drive meaningful reform or merely deepen the layers of bureaucracy, given the NBR's persistent failure to meet its targets.

14h ago