স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞায় প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানি আরও কমেছে

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

গত অর্থবছরে দেশের কৃষিপণ্য রপ্তানি কিছুটা বাড়লেও ভারতে রপ্তানি কমেছে। সম্প্রতি, ভোমরা ছাড়া দেশের সব স্থলবন্দর দিয়ে প্রক্রিয়াজাত খাবার, পোশাক, ফল ও কোমল পানীয়সহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ভারতে এসব পণ্যের রপ্তানি কমেছে।

স্থানীয় রপ্তানিকারকরা জাহাজীকরণে দেরি, ক্রমবর্ধমান সরবরাহ খরচ ও রপ্তানি কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। কারণ, পণ্যগুলো একটি বন্দর দিয়ে রপ্তানি করতে হয়। নতুন নিয়মে সব পণ্য পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ৯৮৯ মিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি করেছে। আগের অর্থবছরে তা ছিল ৯৬৪ মিলিয়ন ডলার।

শুকনো খাদ্যপণ্য রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ১৪ শতাংশ এবং চিনি ও কনফেকশনারি পণ্য রপ্তানি কমেছে ১৭ শতাংশ।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতে ১৪৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ইপিবির তথ্য অনুসারে, এর আগের অর্থবছরে তা ছিল ১৯২ মিলিয়ন ডলার।

রপ্তানি কমে যাওয়ার সঙ্গে স্থলবন্দরের মাধ্যমে ভারতের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার সরাসরি সম্পর্ক আছে।

ফলে, গত অর্থবছরে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে সার্বিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে দুই দশমিক ৫২ শতাংশ। গত অর্থবছরে তা ছিল তিন দশমিক নয় শতাংশ।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, গত মে মাসে ভারত বাংলাদেশের ভোমরা ছাড়া অন্যসব স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি বন্ধ না করলে কৃষিপণ্য রপ্তানি আরেকটু বাড়ত।

রপ্তানিকারকরা সতর্ক করে বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ছাড়া অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর প্রচেষ্টাকে হুমকিতে ফেলবে। বিশেষ করে, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো সুরাহা হয়নি।

দেশের প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানির অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুধু ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি চালু রাখায় ভারতে পণ্য রপ্তানি করতে ব্যবসায়ীরা হিমশিম খাচ্ছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা বাধ্য হয়ে সব পণ্য ভোমরা দিয়ে রপ্তানি করছি। পরিবহন সময় ও খরচ অনেক বেড়েছে। শুধুমাত্র ভোমরার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় লজিস্টিক খরচ বহুগুণ বেড়েছে।'

তিনি জানান, এখন ভারতে রপ্তানি করা প্রতিটি পণ্যের বাধ্যতামূলকভাবে ল্যাব টেস্ট হয়। আগে, সব পণ্যের জন্য তা দরকার হতো না। এটি মানের প্রশ্ন নয়, আমলাতন্ত্রের প্রশ্ন। ফলে ১০ দিন পর্যন্ত দেরি হয়।

ভারতের আসাম, মণিপুর ও ত্রিপুরা রাজ্যকে বাংলাদেশের শুকনো খাবার, মসলা ও প্রক্রিয়াজাত পণ্যের প্রধান বাজার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, ভোমরা দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি হলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। এতে পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে যায়।

কামরুজ্জামান কামাল বলেন, 'এই সমস্যা দূর করতে সরকারকে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক যদি বন্ধুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে এ ধরনের বাণিজ্য-বাধা থাকা উচিত নয়।'

বম্বে সুইটসের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অ্যান্ড কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্সের জেনারেল ম্যানেজার খুরশিদ আহমেদ ফরহাদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভারতে ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) রপ্তানি অনেক কমেছে।'

শুকনো খাবার রপ্তানি কমেছে ১৪ শতাংশ, চিনি ও কনফেকশনারি ১৭-১৮ শতাংশ, পানীয় এক দশমিক ৫২ শতাংশ এবং মসলা এক দশমিক ১৮ শতাংশ। 'এই সংখ্যা উদ্বেগজনক,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

'খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও প্লাস্টিক খাতে অনেক প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদি রপ্তানি ও বিনিয়োগের পরিকল্পনা আছে। এসব পরিকল্পনা এখন ঝুলে আছে।'

তবে সব প্রতিষ্ঠান সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কৃষিপণ্যের অন্যতম শীর্ষ রপ্তানিকারক স্কয়ার গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে ভোগ্যপণ্য রপ্তানি করায় এর প্রভাব অনেকটাই এড়াতে পেরেছে।

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী মো. পারভেজ সাইফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্দর নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারতের বাজারের ওপর নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এর আগে চলতি অর্থবছরে কৃষি-প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সেই লক্ষ্যমাত্রা এখন ক্রমেই অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে।

ব্যবসায়ী ও বাণিজ্যিক সংগঠনগুলো এই সমস্যার সমাধান এবং ভারতের সঙ্গে মসৃণ বাণিজ্যিক সম্পর্কের জন্য দ্রুত ও কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগের আহ্বান জানিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

'Shoot directly': Hasina’s order and deadly aftermath

Months-long investigation by The Daily Star indicates state forces increased deployment of lethal weapons after the ousted PM authorised their use

10h ago