ট্রাম্প-শুল্ক কমানোর শেষ চেষ্টায় বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। ছবি: সংগৃহীত

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি না থাকা দেশগুলোর ওপর ব্যাপক নতুন শুল্ক আরোপ করছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। বাংলাদেশের ওপর ধার্য করার পরিকল্পনা আছে ৩৫ শতাংশ শুল্ক। সেই হুমকির পর দেশের রপ্তানিখাতকে রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে শেষ সময়ের আলোচনায় রয়েছে বাংলাদেশ।

এর আগে গত ২৮ জুলাই ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন, যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে ব্যর্থ হবে, তাদের ওপর ১৫-২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এপ্রিলে আরোপ করা ১০ শতাংশ প্রাথমিক শুল্কের পর ট্রাম্পের এই নতুন ঘোষণা বিশ্বজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে। পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, কানাডাসহ অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য শেষ সময়ের আলোচনায় রয়েছে।

এরই মধ্যে গতকাল বুধবার ট্রাম্প বলে দিয়েছেন, ভারতের ওপর তিনি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।

ওদিকে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চলছে বাংলাদেশের। ১ আগস্টের সময়সীমার আগেই চুক্তি চূড়ান্ত করতে মরিয়া প্রতিনিধি দলটি।

বাণিজ্য উপদেষ্টা এসকে বশির উদ্দিনের নেতৃত্বে ওয়াশিংটন ডিসিতে চূড়ান্ত আলোচনার দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল অংশ নিতে যাচ্ছে। উপদেষ্টার সঙ্গে রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান ও অতিরিক্ত বাণিজ্য সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী।

আলোচনায় মার্কিন পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করছেন দেশটির সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডান লিঞ্চ। তার সঙ্গে আছেন বাণিজ্য ও শুল্কবিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশের অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ওপর, বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। ২০২৪ সালে মার্কিন বাজারে রপ্তানিকৃত ৮.২ বিলিয়ন ডলারের অধিকাংশই এসেছিল তৈরি পোশাক থেকে।

বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, বর্তমানে যে পরিমাণ শুল্ক রয়েছে, তারচেয়ে সামান্য বেশি শুল্ক ধার্য করা হলেও রপ্তানি প্রতিযোগিতায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। সেইসঙ্গে ধস নামবে শ্রমবাজারেও।

ওয়াশিংটন থেকে বাণিজ্য সচিব রহমান আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, 'আমাদের অবস্থান গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে। বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষায় আমরা বড় ধরনের প্রস্তাব দিয়েছি। এখানে আলোচনার পরিবেশ খুবই ইতিবাচক।'

গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলটি আলোচনাকৌশল নতুন করে সাজিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ছয় বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ঘাটতি দূর করতে নানা প্রস্তাবনা দিয়েছে।

আগামী পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩৫ লাখ টন গম আমদানি এবং কয়েক বিলিয়ন ডলার চুক্তির আওতায় ২৫টি বোয়িং উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনা করেছে সরকার। পাশাপাশি, মার্কিন তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), তুলা, সয়াবিন ও অন্যান্য কৃষিপণ্য আমদানি বাড়ানোরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

শুল্ক নিয়ে এই আলোচনার চূড়ান্ত ফল কী হবে, সেটা জানা যাবে শিগগির।

ভেস্তে গেছে মার্কিন-ভারত আলোচনা

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনায় কিছু দেশ বাংলাদেশের চেয়েও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারত ইতোমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে ২৫ শতাংশ শুল্কের ধাক্কা খেয়েছে। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার কাছ থেকে সামরিক ও জ্বালানি পণ্য কেনায় ভারতের ওপর আরও শাস্তি আসতে যাচ্ছে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে।

ভারত ও মার্কিন আলোচকদের মধ্যে কয়েক মাস ধরে চলা আলোচনা ভেস্তে গেছে। কারণ, দিল্লি মার্কিন কৃষিপণ্যের জন্য তাদের বাজার উন্মুক্ত করতে রাজি হয়নি। ওয়াশিংটন গম, চাল, ভুট্টাসহ বেশকিছু পণ্য ভারতে রপ্তানি করতে চেয়েছিল। কিন্তু, প্রান্তিক কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষার কারণ দেখিয়ে ভারত তাতে সায় দেয়নি।

ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে দিল্লির রপ্তানিকারকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, যেখানে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি ছিল ৮৭ বিলিয়ন ডলার।

এখন বাংলাদেশ যদি এই চুক্তি যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারে এবং ট্রাম্প-শুল্ক অন্য দেশগুলোর চেয়ে কমাতে পারে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির বাজার ধরার এগিয়ে থাকবে। এই পার্থক্য আগামী কয়েক বছরের জন্য দেশের অর্থনীতির গতিপথ নির্ধারণ করতে পারে।

দেশের তৈরি পোশাক খাতে ৪০ লাখের বেশি মানুষ কাজ করে। ইতোমধ্যেই নূন্যতম মুনাফা করে দেশের এই খাত বিকশিত হচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য ট্রাম্প-শুল্ক যদি ১৫ শতাংশও হয়, সেটাও দেশের রপ্তানিকারকদের চাপে ফেলবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভিয়েতনাম ও চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা কঠিন করে তুলবে। কেননা, দেশ দুটি ইতোমধ্যে কৌশলগতভাবে মার্কিন বাজারে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে ফেলেছে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি পোশাক তৈরিকারক প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষায়। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সবচেয়ে বড় বাজার। ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হলে এই বাজার আর ধরে রাখতে পারব না। এমনকি ১৫ শতাংশ শুল্ক হলেও বিষয়টা অনেক বেশি কঠিন হবে। এর নিচে আসতে হবে শুল্ক।'

Comments

The Daily Star  | English
National election

Political parties must support the election drive

The election in February 2026 is among the most important challenges that we are going to face.

4h ago