শস্য চুক্তি থেকে রাশিয়ার সরে আসা

দেশের গমের বাজারের জন্য দুঃসংবাদ

বাংলাদেশে গমের বাজার
ফাইল ফটো

জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় কৃষ্ণসাগর দিয়ে শস্য রপ্তানি চুক্তি থেকে রাশিয়ার সরে আসায় বিশ্ববাজারের পাশাপাশি বাংলাদেশের গমের বাজারে নতুন করে অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আমদানিকারকরা।

গতকাল সোমবার এই ঘটনাকে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের বলে মন্তব্য করেন আমদানিকারকরা। দেশে গমের চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে।

জাতিসংঘ, তুরস্ক ও ইউক্রেনকে রাশিয়া জানিয়েছে যে তারা চুক্তিটি নবায়ন করবে না। এই চুক্তিতে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে ইউক্রেনকে খাদ্যশস্য রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

বিশ্বব্যাপী চলমান খাদ্য সংকট মোকাবিলায় গত বছরের জুলাইয়ে সম্পাদিত চুক্তিটি প্রতি ২ মাস পরপর নবায়নের কথা ছিল। গত সোমবার এর মেয়াদ শেষ হয়।

গত কয়েক মাস ধরে রাশিয়া বলে আসছিল যে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর শর্ত পূরণ করা হয়নি।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ গণমাধ্যমকে বলেন, 'কৃষ্ণ সাগর চুক্তি আজ (সোমবার) থেকে বৈধ হবে না।'

চুক্তি স্থগিতের কারণে গতকাল আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম টনপ্রতি ১০ থেকে ১৫ ডলার বেড়েছে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন দেশে গমের অন্যতম বৃহৎ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম।

তার মতে, 'বর্তমানে দেশের ব্যবসায়ীদের কাছে যে পরিমাণ গম মজুদ আছে তাতে আগামী অক্টোবর পর্যন্ত এর দাম বাড়বে না।'

বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বাশার চৌধুরীর আশঙ্কা—আগামী দিনগুলোয় বাজার পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'বর্তমানে গমের দাম টনপ্রতি ২৪০-২৭০ ডলার। চুক্তির আগে তা ছিল ৩৯০ থেকে ৪২০ ডলার। আমি মনে করি দাম আবারো বাড়বে।'

এ ঘটনা ইতোমধ্যে স্থানীয় বাজারে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে হচ্ছে।

গতকাল বন্দরনগরী চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে প্রতি মণ গমের দাম ছিল ১ হাজার ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৮২০ টাকা। এর আগের দিন ছিল ১ হাজার ৭২৫ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা।

দেশের অন্যতম বৃহৎ আমদানিকারক মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার ডেইলি স্টারকে বলেন, শস্য চুক্তি নবায়ন না হওয়া বা ভূরাজনৈতিক সংঘাতের মতো বৈশ্বিক ঘটনা দেশের বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে।

তিনি আরও বলেন, 'এসব অনিশ্চয়তা ও অপ্রত্যাশিত ঘটনা পণ্যের চাহিদা-সরবরাহ তথা সামগ্রিক বাজারের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। গত ২ মাসে বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব দেখেছি। শস্য চুক্তি হওয়ার পর পণ্যের দাম কমে গিয়েছিল।'

২০২২-২৩ অর্থবছরে টানা তৃতীয়বারের মতো দেশে গম আমদানি কমেছে। বেশি দামের কারণে ক্রেতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি ছিল ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোর এলসি খোলায় ধীর গতি।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে গমের আমদানি ৩ দশমিক ৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছিল ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার টনে। আগের বছর তা ছিল ৪০ লাখ ১২ হাজার টন।

গত অর্থবছরে শস্য আমদানি ৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। শস্য আমদানির জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববাজারের ওপর বেশ নির্ভরশীল।

আকিজ ইনসাফ গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক অনুপ কুমার সাহা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারে যখন গমের দাম কমতে শুরু করেছে, তখন রাশিয়া এই চুক্তি থেকে সরে এলো। এটি বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের।'

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, গতকাল ঢাকায় প্রতি কেজি খোলা আটার দাম ছিল ৫০ থেকে ৫২ টাকা। এক সপ্তাহ আগে তা ছিল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা।

প্রতি কেজি প্যাকেট আটার দাম ছিল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।

দেশে প্রতি বছর গমের চাহিদা ৭০ লাখ থেকে ৭৫ লাখ টন। এর ৮৫ শতাংশ আমদানি করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English
road accidents death in Bangladesh April

Road accidents killed 583 in April: Jatri Kalyan Samity

Bangladesh Jatri Kalyan Samity (BJKS), a passenger welfare platform, said that a total of 583 people were killed and 1,202 injured in 567 road accidents across the country in the month of April, citing media reports

5h ago