ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকের পর স্তব্ধ ইউক্রেন, পাশে থাকার আশ্বাস ইউরোপের

হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: এএফপি

হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উত্তপ্ত বৈঠক ইউক্রেন ও ইউরোপজুড়ে হতাশা ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বৈঠকের পর ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশগুলোর নেতারা দ্রুত ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের কাছে এই বৈঠক নিয়ে একজন ইউক্রেনীয় এমপি বলেন, 'কথাগুলো শুনে আমি কেবল কেঁদেছি।'

বৈঠকের ভিডিও দেখে 'স্তব্ধ' ইউক্রেনীয় সামরিক কর্মকর্তা ওলেক্সান্ডার বলেন, 'আমাদের সামনে এখনো অনেক কাজ বাকি। লজ্জাজনক শান্তির চেয়ে যুদ্ধ ভালো।'

ওয়াশিংটন পোস্ট ও সিএনএন জানায়, বৈঠকের পর ইউরোপীয় নেতারা তাদের হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে জেলেনস্কির পাশে দাঁড়িয়েছেন। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া, মলদোভা, সুইডেন, লাটভিয়া এবং নরওয়ের মতো অনেক পশ্চিমা দেশের নেতারা জেলেনস্কি ও ইউক্রেনের প্রতি সংহতি জানিয়ে একের পর এক পোস্ট বা বিবৃতি দিয়েছেন।

বৈঠকের পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের মুখপাত্র বলেন, 'ইউক্রেনের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অটল সমর্থন বজায় থাকবে। ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার ওপর ভিত্তি করে একটি স্থায়ী শান্তির পথ খুঁজে বের করার লক্ষ্যে তিনি কাজ করছেন।'

সম্প্রতি রাজা চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন স্টারমার। আজকের বৈঠকের পর এই আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের একাধিক এমপি।

দেশটির অনেক রাজনীতিবিদ ট্রাম্প ও তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের আচরণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ট্রাম্প ও জেলেনস্কি। ছবি: এপি

কনজারভেটিভ পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতা রবার্ট জেনরিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে লিখেন, 'ওভাল অফিসের সেই কক্ষে (যেখানে বৈঠক হয়েছে) উইনস্টন চার্চিলের ভাস্কর্য ছিল। তিনি এই ঘটনা দেখলে খুবই ক্ষুব্ধ হতেন। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির নেতৃত্বে ইউক্রেনের জনগণ সাহসিকতার সঙ্গে পুতিনকে প্রতিহত করে যাচ্ছে।'

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, 'এখানে একটি আগ্রাসী শক্তি আছে, সেটি হচ্ছে রাশিয়া। আর একটি গোষ্ঠী আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে, সেটি ইউক্রেন।'

'তিন বছর আগে ইউক্রেনকে সাহায্য করা এবং রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। এটি অব্যাহত রাখা উচিত,' যোগ করেন তিনি।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্সে দেওয়া এক পোস্টে লিখেন, 'শান্তি ইউক্রেনের চেয়ে বেশি কেউই চায় না। তাই আমরা একটি স্থায়ী ও ন্যায়সঙ্গত শান্তির লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করছি। জার্মানি ও ইউরোপের ওপর নির্ভর করতে পারে ইউক্রেন।'

সাম্প্রতিক নির্বাচনে জয়ী, জার্মানির পরবর্তী চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ বলেন, 'ভালো সময় ও সংকটের সময়; সব বেলাতেই আমরা ইউক্রেনের পাশে আছি।'

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক এক্সে লিখেছেন, 'প্রিয় জেলেনস্কি, প্রিয় ইউক্রেনীয় বন্ধুরা, আপনারা একা না।'

ডাচ প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কোফ বলেন, তার দেশ 'ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়া অব্যাহত রাখবে, বিশেষ করে এখন।'

ইউরোপের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র দেশগুলো থেকেও ইউক্রেনের প্রতি জোরালো সমর্থন এসেছে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, তার দেশ ইউক্রেনের পাশেই থাকবে।

'রাশিয়া অবৈধভাবে এবং অযৌক্তিকভাবে ইউক্রেন আক্রমণ করেছে। তিন বছর ধরে ইউক্রেনীয়রা অসীম সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে লড়াই করে আসছে। গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য তাদের এই সংগ্রাম আমাদের সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ,' এক্সে দেওয়া এক পোস্টে লিখেন ট্রুডো।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজও কিয়েভের প্রতি তার দেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

'আমরা ইউক্রেনের সংগ্রামের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন জানাই, কারণ এটি আন্তর্জাতিক আইন রক্ষার সংগ্রাম,' বলেন অ্যালবানিজ।

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লাকসনও একইভাবে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন ব্যক্তি করেছেন।

Comments

The Daily Star  | English
Magura child rape case

Magura rape: Main accused charged with murder

A month after the death of the eight-year-old girl, who was brutally raped while visiting her sister’s in-laws in Magura, police have pressed murder charges against the main accused.

4h ago