কেনিয়ায় আদানির বিমানবন্দর চুক্তি স্থগিত, তবু কেন থামছে না বিক্ষোভ

আদানি গ্রুপ
আদানি গ্রুপ : আবারও আলোচনায় আদানি গ্রুপ। প্রতিবেশী বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি নিয়ে সমালোচনার মধ্যে ভারতীয় এই প্রতিষ্ঠানটি বিতর্কে পড়েছে সুদূর পূর্ব আফ্রিকাতেও। এই বিতর্ক কেনিয়ার প্রধান বিমানবন্দরে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের বিনিময়ে ৩০ বছরের ইজারা নিয়ে।

আবারও আলোচনায় আদানি গ্রুপ। প্রতিবেশী বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি নিয়ে সমালোচনার মধ্যে ভারতীয় এই প্রতিষ্ঠানটি বিতর্কে পড়েছে সুদূর পূর্ব আফ্রিকাতেও। এই বিতর্ক কেনিয়ার প্রধান বিমানবন্দরে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের বিনিময়ে ৩০ বছরের ইজারা নিয়ে।

সম্প্রতি কেনিয়ার হাইকোর্ট আদানি গ্রুপের বিমানবন্দর চুক্তিটি স্থগিত করলেও কেনিয়া অ্যাভিয়েশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নতুন দাবি, প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুতোর সরকার যেন চুক্তির বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আনে।

আজ শনিবার জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, চুক্তিবিরোধীতার ধারাবাহিকতায় বিমানবন্দর কর্মীদের কর্মবিরতির একদিন পর এই দাবি জানানো হলো।

চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে যাতে কর্মী ছাঁটাই না হয় তা নিশ্চিত করতে শ্রমিক সংগঠনটি আদানি গ্রুপের সঙ্গে সরকারের আলোচনায় অংশ নিতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন তারা চুক্তিটি সম্পূর্ণ বাতিলের দাবি করছে।

শ্রমিক সংগঠনটির এক নেতা মস নদিমা গণমাধ্যমকে বলেন, 'আমরা বলিনি যে আদানি গ্রুপকে মানব না। আমরা চাই আমাদের আপত্তি করার ক্ষমতা থাকুক। চুক্তিটি এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের সম্মতির প্রয়োজন। যদি এটি খারাপ চুক্তি হয়, তাহলে আমরা চুক্তির পক্ষে সায় দেব না।'

চুক্তি স্থগিত ও 'জনগণের বিজয়'

কেনিয়ার প্রধান বিমানবন্দরটি ৩০ বছরের জন্য ভারতীয় প্রতিষ্ঠান আদানি গ্রুপকে ইজারা দেওয়ার বিতর্কিত চুক্তিটি আটকে দিয়েছে সেখানকার হাইকোর্ট।

গত মঙ্গলবার উচ্চ আদালত প্রাথমিকভাবে চুক্তির বাস্তবায়ন রদ করে। তবে চুড়ান্ত রায়ের তারিখ এখনো ঠিক করা হয়নি।

সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, চুক্তির বিরোধিতাকারীরা আদালতের এই উদ্যোগকে 'কেনিয়ার জনগণের বিজয়' হিসেবে অভিহিত করেছেন।

রাজধানী নাইরোবিতে জোমো কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটিতে এক দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের বিনিময়ে ৩০ বছরের জন্য ইজারা নেওয়ার জন্য আদানি গ্রুপ কেনিয়ার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছিল।

আদানি গ্রুপ
নাইরোবি বিমানবন্দরে বিক্ষোভকারীদের পাশ দিয়ে যাচ্ছেন কেনিয়া এয়ারওয়েজের কর্মীরা। ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪। ছবি: রয়টার্স

গত সোমবার দ্য ল সোসাইটি অব কেনিয়া ও কেনিয়া হিউম্যান রাইটস কমিশন এর বিরোধিতা করে আদালতে যায়। তাদের ভাষ্য, বিমানবন্দর ইজারা দেওয়ার চুক্তি 'সুশাসন, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও সরকারি অর্থের দায়িত্বশীল ব্যবহারের নীতিগুলোকে অবজ্ঞা করেছে'।

আদালত তাদের আবেদন গ্রহণ করে চুক্তিটি সাময়িকভাবে আটকে দেয়। সরকার চুক্তির পক্ষে কথা বলতে গিয়ে জানায়, এটি কেনিয়ার বিমানবন্দরটিকে ঢেলে সাজানোর জন্য জরুরি।

যে কারণে বিক্ষোভ

আদানি গ্রুপের সঙ্গে কেনিয়া সরকারের সম্ভাব্য চুক্তিটি তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। অনেকের যুক্তি, এটি বাস্তবায়িত হলে স্থানীয়রা চাকরি হারাবেন। ভবিষ্যতে বিমানবন্দর থেকে পাওয়া মুনাফা তছরুপ হবে।

এই বিমানবন্দর থেকে যা আয় হয় তা কেনিয়ার জিডিপির পাঁচ শতাংশ।

জোমো কেনিয়াত্তা আফ্রিকার অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর। ২০২২-২৩ সালে এই বিমানবন্দর দিয়ে যাত্রী চলাচল করেছে প্রায় ৯০ লাখ। পণ্য পরিবহন হয়েছে তিন লাখ ৮০ হাজার টন।

তবে বিমানবন্দরটিতে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়।

কেনিয়া বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, চুক্তি অনুসারে আদানির প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয় রানওয়ে তৈরির পাশাপাশি প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের উন্নয়ন ঘটাবে।

ল সোসাইটি ও হিউম্যান রাইটস কমিশনের পক্ষের আইনজীবী ওচিয়েল দুদলে বার্তা সংস্থাটিকে বলেন, 'আদালতের এই আদেশ কেনিয়ার জনগণের বিজয়। এই ধোঁয়াশাপূর্ণ চুক্তিটি নিয়ে যারা উদ্বিগ্ন ছিলেন তাদের উদ্বেগকে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা অবজ্ঞা করেছেন।'

কর্মবিরতির ঘোষণাপত্রে কেনিয়া বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী হেনরি ওগোয়ে বলেছিলেন, 'শ্রমিক ইউনিয়নের অভিযোগ সরকার তাদের দাবি মানতে ব্যর্থ হয়েছে।'

আদানি গ্রুপ
নাইরোবি বিমানবন্দরে কর্মীদের কর্মবিরতির কারণে বিপাকে যাত্রীরা। ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪। ছবি: রয়টার্স

যা আছে চুক্তিতে

ডয়েচে ভেলে জানায়, অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রির্পোটিং প্রজেক্টের প্রতিবেদন অনুসারে আদানির প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার প্রস্তাবে বিমানবন্দর সংস্কার, ট্যাক্সিওয়ের উন্নয়ন ও সম্ভাব্য একটি নতুন রানওয়ের তৈরির কথা বলা হয়েছে।

এসবের খরচ মেটানো হবে বিমানবন্দর থেকে পাওয়া আয় থেকে। বিমানবন্দরের ফি বাড়ানোর পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থের জোগান আসার কথাও এতে বলা হয়েছে।

চুক্তি অনুসারে ৩০ বছর পর আদানি গ্রুপ বিমানবন্দরের ১৮ শতাংশ মালিকানা পাবে।

আদানির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের সাফল্য নির্ভর করবে 'অনুকূল রাজস্বনীতির ওপর'।

কেনিয়া সরকারকে কয়েক বছরের জন্য করপোরেট আয়কর থেকে মুক্তির প্রস্তাবও দিয়েছে আদানি গ্রুপ।

তরুণ প্রজন্মের বিরোধিতা

কেনিয়া সরকার আদানির চুক্তি নিয়ে বারবার জনগণকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেও দেশটির তরুণ প্রজন্ম সরকারের ওপর থেকে তাদের সন্দেহের তির সরাচ্ছে না।

নাইরোবির এক বাসিন্দা পিটার মিতেনগা ডয়েচে ভেলেকে বলেন, 'আদানির কাছে বিমানবন্দর বিক্রি বা ৩০ বছরের জন্য ইজারা এবং চুক্তির শর্ত যাই হোক না কেন, তা কেনিয়ার জন্য ক্ষতিকর। এমনিতেই আমাদের কাঁধে ঋণের বোঝা। তারপর চুক্তির কিছু শর্ত খুবই বিরক্তিকর।'

শিক্ষার্থী লিসা নগেনো বলেন, 'রিতোর প্রশাসন মিথ্যা বলছে। প্রতারণা করছে।'

Comments

The Daily Star  | English
enforced disappearance in Bangladesh

Enforced disappearance: Anti-terror law abused most to frame victims

The fallen Sheikh Hasina government abused the Anti-Terrorism Act, 2009 the most to prosecute victims of enforced disappearance, found the commission investigating enforced disappearances.

8h ago