ট্রাম্প-শুল্কের প্রভাব পড়ছে মার্কিনিদের পকেটে

রয়টার্স ফাইল ফটো

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত বাড়তি হারে শুল্ক পেলেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে মার্কিন নাগরিকদের ওপর। দেশটির কোম্পানিগুলো স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, এই বাড়তি খরচ তারা আমেরিকান ভোক্তাদের ওপর চাপাবে।

শুরুতে দেশটির খুচরা বিক্রেতা ও ভোগ্য পণ্য উৎপাদনকারীরা সতর্ক করেছিল, আমদানি পণ্যের ওপর বাড়তি এই শুল্ক তাদের ওপর চাপ তৈরি করবে। এর ফলে, মুনাফা কমানো অথবা ভোক্তাদের কাছ থেকে বাড়তি খরচ আদায় করার যেকোনো একটি উপায় বেছে নিতে হবে।

আজ বুধবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির উৎপাদক থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতারা পর্যন্ত বার্তা দিয়েছে, তারা আগামী সপ্তাহ থেকে কিছু মার্কিন পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হবে।

আগামীতে কোম্পানিগুলোর এই চ্যালেঞ্জ ভোক্তাদের ওপর প্রভাব ফেলবে। পিঅ্যান্ডজি জানিয়েছে, নতুন শুল্ক ব্যয় সামলাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় এক-চতুর্থাংশ পণ্যের দাম বাড়াবে।

এ বছর প্রযুক্তিখাতে বিপুল বিনিয়োগের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের স্টক সূচকগুলো রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছালেও, অনেক ভোগ্যপণ্য কোম্পানি কঠিন সময় পার করছে।

ট্রাম্পের গত ২ এপ্রিল 'লিবারেশন ডে' শুল্ক ঘোষণার পর থেকে পিঅ্যান্ডজি'র শেয়ারের দাম ১৯ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া, নেসলে ২০ শতাংশ, কিম্বারলি-ক্লার্ক ১১ শতাংশ ও পেপসিকো প্রায় ৭ শতাংশ দাম হারিয়েছে। বিপরীতে বেঞ্চমার্ক সূচক এসঅ্যান্ডপি৫০০ ১৩ শতাংশ বেড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারির পর ভোগ্যপণ্য এবং খাদ্য ও পানীয় কোম্পানিগুলোর বিক্রি কমেছে। নেসলে গত সপ্তাহে জানায়, উত্তর আমেরিকার ভোক্তারা এখনও বাড়তি দাম দেওয়ার ব্যপারে সতর্ক। আবারও যদি দাম বাড়ে, তাহলে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বাড়াবে।

মেডট্রনিকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সিইও এবং হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের নির্বাহী এডুকেশন ফেলো বিল জর্জ বলেন, 'ওয়ালমার্ট, অ্যামাজন ও বেস্ট বাইয়ের মতো কোম্পানিগুলো বাড়তি দাম ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। মানুষ এখনো এই শুল্ক বাড়ানোর পুরো প্রভাব দেখেনি। সামনে দেখতে পারে।'

১৬ থেকে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে রয়টার্সের গ্লোবাল ট্যারিফ ট্র্যাকার অনুযায়ী কোম্পানিগুলো পুরো বছরে মোট ৭ দশমিক ১ বিলিয়ন থেকে ৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির আশঙ্কা করছে।

জেনারেল মোটরস, ফোর্ড ও অন্যান্য গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পর্যন্ত বিলিয়ন ডলারের শুল্কের ভার নিজেরাই বহন করছে।

অনেক কোম্পানি শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বেশি পরিমাণ পণ্য ও কাঁচামাল পাঠিয়েছে। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই মজুত থাকায় কিছু কোম্পানি দেরিতে দাম বাড়াতে পারছে। এজন্যই ট্রাম্প-শুল্কের প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যানে এখনো দৃশ্যমান না।

ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের উপ-মহাসচিব অ্যান্ড্রু উইলসন ধারণা করছেন, কোম্পানিগুলোর মজুত শেষ হলে মূল্যস্ফীতির প্রভাব টের পাওয়া যাবে। সেটা এ বছরের শেষাংশে বা আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে হতে পারে।

রে-ব্যান প্রস্তুতকারক এসিলরলাক্সোটিকাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

সুইস ঘড়ি ও গয়না প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সোয়াচ এপ্রিলে ট্রাম্প-শুল্ক ঘোষণার পর প্রায় পাঁচ শতাংশ দাম বাড়িয়েছে। অথচ, তাদের দামে এর কোনো প্রভাব পড়েনি বলে সম্প্রতি রয়টার্সকে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সিইও নিক হায়েক।

তিসো ঘড়ির মতো দামি ব্র্যান্ডগুলো দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে তুলনামূলক কম চিন্তিত। দামি ঘড়ি কিনতে আগ্রহী যারা আছেন, তারা কম করের দেশে বেড়াতে গিয়ে সেখান থেকেও কিনে ফেলতে পারেন বলে জানান হায়েক।

তিনি বলেন, 'গাড়ি বা যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে করা না গেলেও ঘড়ির ক্ষেত্রে সম্ভব। তাই আমাদের জন্য এটি তেমন একটা সমস্যা না।'

Comments

The Daily Star  | English

Manifesto for a new Bangladesh on Aug 3

National Citizen Party Convener Nahid Islam yesterday said they will declare the manifesto for a new Bangladesh on August 3 at Central Shaheed Minar.

4h ago