যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চূড়ান্ত দর-কষাকষিতে শুল্ক ১০-২০ শতাংশে নামানোর লক্ষ্য

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপ হতে যাওয়া নতুন শুল্কহার কমাতে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তৃতীয় ও চূড়ান্ত দফার আলোচনায় অংশ নিতে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে।

আগামী ২৯ জুলাই শুরু হয়ে আলোচনা চলবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত। অন্যদিকে, ১ আগস্ট থেকেই বাংলাদেশি পণ্যের ওপর নতুন করে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হওয়ার কথা রয়েছে।

দেশ ছাড়ার আগে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান ফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এখন পর্যন্ত আলোচনা আন্তরিক পরিবেশে হওয়ায় আমরা শুল্ক অনেকটাই কমার ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি আরও বলেন, 'আলোচনায় আমি ইতিবাচক ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছি।'

তিনি যোগ করেন, শুল্ক কমানো হয়েছে এমন কিছু দেশের মতো বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও শুল্কহার ১০ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ভিয়েতনাম ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন ১৯ শতাংশ, জাপান ১৫ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ১০ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ১৫ শতাংশ শুল্কহারে সমঝোতা করতে পেরেছে।

বাণিজ্যসচিব জানান, বাংলাদেশ আলোচনার কৌশল পরিবর্তন করেছে। যেমন, ১৪টির পরিবর্তে ২৫টি মার্কিন উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে, আগামী পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩৫ লাখ টন গম কেনার জন্য মার্কিন সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে চুক্তি সই করেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য আরেকটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে।

বেশি উড়োজাহাজ কেনার বিষয়ে বাণিজ্যসচিব বলেন, শুল্ক কমাতে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য দেশের উড়োজাহাজের বহর বড় করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ সরবরাহের তালিকা ইতিমধ্যে বেশ দীর্ঘ, এবং এখন অর্ডার না দিলে বাংলাদেশকে হয়তো অনেক দিন অপেক্ষা করতে হতে পারে। যেমন, ভিয়েতনাম ইতোমধ্যে ১০০টি বোয়িং উড়োজাহাজ কেনার ফরমায়েশ করেছে, ইন্দোনেশিয়া করেছে ৫০টির।

চুক্তিগুলো সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, চুক্তিতে উল্লেখ করা তারিখের পরেও পণ্যগুলো সংগ্রহ করার সুযোগ রয়েছে। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে এই চুক্তিগুলো থেকে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত লাভবান হবে, কারণ এগুলো দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাবে। উদাহরণ হিসেবে, আমাদের দেশে যে পরিমাণ গম উৎপাদিত হয় তা অভ্যান্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়, তাই আমদানি করা গমের ওপর নির্ভর করতে হয়। যুক্তরাষ্ট্র এখন গম আমদানির একটি প্রধান উৎস হবে।

তবে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পোশাক রপ্তানিকারক বলেন, 'আমার ধারণা আমরা ২৫ শতাংশের কম শুল্ক পাব না।'

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজে পোশাক তৈরি করে না বলে বাংলাদেশ বছরের পর বছর ধরে তাদের বাজারে একটি প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এখন রপ্তানি নির্ভর করবে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ভালো শুল্কচুক্তি করতে পারে কি না, তার ওপর।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য ২০ শতাংশ শুল্ক হলে ভালো হবে। ভিয়েতনাম ২০ শতাংশ শুল্কহার আদায় করতে পারলেও, তাদের কোনো পণ্য চীন থেকে পুনঃজাহাজীকরণ (ট্রান্সশিপমেন্ট) করা হয়েছে বলে প্রমাণিত হলে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। ভিয়েতনাম প্রচুর চীনা কাঁচামাল আমদানি করে, যার জন্য যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত তাদের পণ্যের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে, বাংলাদেশ ২০ শতাংশ শুল্ক নিয়ে কিছুটা প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Macroeconomic challenges to persist in Jul-Dec: BB

BB highlights inflation, NPLs, and tariff shocks as key concerns

3h ago