নেপালে গাইডবিহীন একক ট্রেকিং নিষিদ্ধ

ট্রেকিং খাতের মাধ্যমে প্রতি বছর নেপাল প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। তবে যখন কোনো অভিযাত্রী নিখোঁজ হন, তাকে খুঁজে পেতে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা দেশটির জন্য বেশ ব্যয়বহুল।
মাউন্ট এভারেস্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন একজন ট্রেকার। ফাইল ছবি: রয়টার্স
মাউন্ট এভারেস্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন একজন ট্রেকার। ফাইল ছবি: রয়টার্স

নেপাল সরকার ৫ বছর আগে একক অভিযাত্রীদের মাউন্ট এভারেস্ট পর্বতে আরোহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এবার সে নিষেধাজ্ঞা সারা দেশে সম্প্রসারিত করেছে দেশটি।

আজ মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

নেপালে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ৮টি পর্বত। এছাড়াও গ্রাম্য অঞ্চলে অসামান্য ট্রেকিং অভিজ্ঞতার নেওয়ার জন্য অনেক অভিযাত্রী প্রতিবছর দেশটি ভ্রমণ করেন। তবে নতুন নিয়ম অনুযায়ী কোনো অভিযাত্রী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ট্রেকিং করতে চাইলে তাকে সরকারী নিবন্ধনপ্রাপ্ত গাইডের সহায়তা নিতে হবে অথবা কোনো দলের সঙ্গে  যেতে হবে।

ট্রেকিং খাতের মাধ্যমে প্রতি বছর নেপাল প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। তবে যখন কোনো অভিযাত্রী নিখোঁজ হন, তাকে খুঁজে পেতে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা দেশটির জন্য বেশ ব্যয়বহুল।

নেপালের পর্যটন বোর্ডের পরিচালক মানি আর. লামিচ্ছানে বলেন, 'যখন আপনি একক অভিযানে যাবেন, তখন জরুরি পরিস্থিতিতে আপনাকে সহায়তা দেওয়ার কেউ থাকবে না। যদি পর্যটকরা শহরে ঘোরেন, তাহলে সমস্যা নেই, কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকার ক্ষেত্রে আমাদের অবকাঠামো যথেষ্ট নয়'।

'প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোনো পর্যটক নিখোঁজ হলে বা তাদের মরদেহ পাওয়া গেলেও এ বিষয়টি সরকারের গোচরে আসে না', যোগ করেন তিনি।

পল্লী অঞ্চলে পর্যটকদের হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টির পাশাপাশি অনিবন্ধিত ট্যুর গাইড ও প্রতিষ্ঠানও সরকারের মাথা ব্যথার কারণ। যেসব প্রতিষ্ঠানের সরকারি নিবন্ধন নেই, তারা কর দেয় না এবং বৈধ নেপালি গাইডদের কাজের সুযোগ কমিয়ে দেয়।

নতুন আইন সম্পর্কে পর্বতারোহণ ও ট্রেকিং সম্প্রদায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ট্রেকাররা মাউন্ট এভারেস্টের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। ছবি: নেপাল
ট্রেকাররা মাউন্ট এভারেস্টের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। ছবি: নেপাল

দীর্ঘদিন ধরে নেপালে কাজ করছে এরকম একটি সুপ্রসিদ্ধ গাইড ট্যুর প্রতিষ্ঠানের মালিক আয়ান টেইলর সিএনএনকে জানান, 'অসংখ্য মানুষ আজকাল দুরূহ পর্বতারোহণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, যার ফলে এ ধরনের উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ'।

'আগে শুধু অভিজ্ঞরা এই অঞ্চলে পাহাড়ে উঠতে বা ট্রেকিং করতে আসতেন। তাদের অনেকেই গাইড ছাড়াই অভিযানে যেতেন এবং তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলেন। তবে এখন অনেক বেশি মানুষ এ অঞ্চলে আসছেন যারা মূলত পর্যটক, ট্রেকার নন। কোনো বিপদে পড়লে তারা অসহায় হয়ে পড়েন এবং তাদের জন্য অবশ্যই অভিজ্ঞ গাইড প্রয়োজন', যোগ করেন তিনি।

টেইলর আরও জানান, নেপাল সরকারের পক্ষে সম্ভব নয় প্রত্যেক পর্যটকের অভিজ্ঞতা যাচাই করে তাদেরকে একা ট্রেকিং এ যাওয়ার অনুমতি দেওয়া। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের ঢালাও নিষেধাজ্ঞা ছাড়া গতি নেই।

তবে যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে অন্য মানুষের সাহচর্য ছাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য এটা খুবই হতাশাজনক পরিস্থিতি বলে মত দেন টেইলর।

'আমি কখনোই চাই না যে পাহাড়ে মানুষের প্রবেশাধিকার সংকুচিত হোক। তবে নেপালের পরিস্থিতি খুবই অনন্য এবং কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন', যোগ করেন টেইলর।

 

Comments