লেনদেন বন্ধের ঝুঁকিতে ৫ ইসলামি ব্যাংক

সংকটে থাকা শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংককে আগামী ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে চলতি হিসাবের টাকার ঘাটতি পূরণ করতে বলেছে বাংলাদেশে ব্যাংক।
 লেনদেন বন্ধের ঝুঁকিতে ৫ ইসলামি ব্যাংক

সংকটে থাকা শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংককে আগামী ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে চলতি হিসাবের টাকার ঘাটতি পূরণ করতে বলেছে বাংলাদেশে ব্যাংক। না হলে এই ব্যাংকগুলোর লেনদেন কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নিয়ম অনুযায়ী, বিভিন্ন ক্লিয়ারিং পেমেন্ট সিস্টেমের জন্য ব্যাংকগুলোর চলতি হিসাবে নির্ধারিত অর্থ রাখতে হয়। কিন্তু, ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাব গত এক বছর ধরে অর্থের ঘাটতিতে আছে

গত ২৮ নভেম্বর এই পাঁচ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) ২০ কার্যদিবসের মধ্যে টাকার ঘাটতি মেটাতে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলোর বেশিরভাগ চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, 'আপনার চলতি হিসাবের অর্থের পরিমাণ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ঘাটতিতে আছে এবং এটি সাধারণ ব্যাংকিং কার্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিষয়টি নিয়ে আপনাকে বারবার সতর্ক করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।'

এতে আরও বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থের ঘাটতি সমন্বয় করতে ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে সব ধরনের বা নির্দিষ্ট ক্লিয়ারিং প্লাটফর্মের লেনদেন থেকে নিষিদ্ধ করা হবে।

চিঠির বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এমডি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি ব্যাংকগুলোকে জাতীয় ক্লিয়ারিং সিস্টেম থেকে নিষিদ্ধ করে, তাহলে তারা অবৈধ হয়ে যাবে। কারণ তারা কোনো আন্তঃব্যাংক লেনদেন করতে পারবে না।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ হাবিব হাসনাত চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

তিনি জানান, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাবে টাকা উদ্বৃত্ত আছে।

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের মেয়ে মাইমুনা খানম গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান।

টাকার ঘাটতি মেটাতে বন্ড কেনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এখন সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে সংকট দেখা দিয়েছে, আমরাও সংকটে আছি।'

ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মনিরুল মওলার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসানুল আলম এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের বড় ছেলে।

দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক গতকাল ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করেন এবং মনিরুল মওলাকে তার রুম থেকে বের হতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি জাফর আলমে মন্তব্যের জানতে চাওয়া হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে গত ৪ ডিসেম্বর তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেছিলেন, 'গত এক সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তারল্য সহায়তার প্রয়োজন হয়নি।'

ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি এবিএম মোকাম্মেল হক চৌধুরী ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি দ্য ডেইলি স্টার।

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ আরও তিন আত্মীয় ব্যাংকটির পরিচালক।

সাইফুল আলমের জামাতা বেলাল আহমেদ সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান। তার বোন জেবুন্নেসা আকবর, ভাগ্নে আরশাদুল আলম ও মাহমুদুল আলম ব্যাংকটির বোর্ডে আছেন।

ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আছেন সাইফুল আলমের ভাই ওসমান গনি ও রাশেদুল আলমসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।

এস আলম গ্রুপের পরিচালক শহিদুল আলম, শাহানা ফেরদৌস ও ফারজানা বেগমসহ আরও পাঁচ আত্মীয় গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আছেন।

Comments