তারল্য সংকটে আরও বেড়েছে সুদহার

বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বাংলাদেশের কোটিপতি,

দীর্ঘদিন ধরে তারল্য সংকটের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ও ব্যাংক খাত। ফলে ট্রেজারি বিল, বন্ড ও ব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়েছে।

এদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমাতে গত ১৭ জানুয়ারি চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমানে দেশের মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে আছে। তাই মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে মুদ্রানীতিতে সুদহার আরও বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত বছরের অক্টোবরে ঋণের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছিল ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশে, যা একই বছরের জুনে ছিল ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদহারের সীমা প্রত্যাহার করে নতুন ফর্মুলা চালুর পর থেকে সুদহার বাড়তে শুরু করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন ফর্মুলা অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ব্যাংক ঋণের সুদহার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশে। আগামীতে এই সুদহার ১২ শতাংশ পেরিয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের মুভিং এভারেজ রেটের ওপর ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ পয়েন্ট মার্জিন আরোপ করতে পারে, যা স্মার্ট নাম পরিচিত। চলতি মাসে স্মার্ট হার ছিল ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ, গত বছরের জুলাইয়ে ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ।

শুধু ব্যাংক ঋণ নয়, ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহারও এখন উচ্চমাত্রায় পৌঁছেছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপানো বন্ধ করায় চলতি অর্থবছরে সুদহারের এই বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, কয়েক মাস আগে ট্রেজারি বন্ডের সুদহার ৭ থেকে ৮ শতাংশ থাকলেও এখন তা ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

এদিকে ঋণের চাহিদা কমলেও সুদহার ঊর্ধ্বমুখী। নভেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ, যা আগের মাসের ১০ দশমিক ০৯ শতাংশ থেকে কম।

ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঋণের চাহিদা বাড়লে সুদহার বাড়বে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কেটে যাওয়ায় সামনের দিনগুলোতে ঋণের চাহিদা বাড়বে।'

গত ২৪ জানুয়ারির নিলামে ৩৫টি ব্যাংক ও একটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান তারল্য ঘাটতি মেটাতে রেপো সুবিধার আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১৫ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।

এমরানুল হকের মতে, বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে অস্থিতিশীলতার কারণে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটের পড়েছে। তাই এখন তারল্য প্রবাহ বাড়ানো বড় একটি চ্যালেঞ্জ।

'রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়লে ব্যাংকগুলোর তারল্য প্রবাহ বাড়বে,' বলেন তিনি।

এখানে উল্লেখ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২১ সালের আগস্ট থেকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। যা তারল্য সংকটের অন্যতম একটি কারণ। কারণ, ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা ২০২১ সালের আগস্ট থেকে প্রায় ২৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে ব্যাংকিং খাত থেকে সমপরিমাণ টাকা তুলে নিয়েছে।

পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি নিয়েছে, তাই তারল্য সংকট প্রত্যাশিত ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন মুদ্রানীতিতে পলিসি রেট বা রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করেছে। ২০২২ সালের মে মাস থেকে কঠোর অবস্থানে যায় বাংলাদেশ ব্যাংক, তারপর থেকে এই নিয়ে অষ্টমবারের মতো বাড়ানো হলো রেপো রেট।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো ঋণের ব্যয় বাড়ানো।

মোহাম্মদ আলী বলেন, উচ্চ সুদহারের কারণে আগামীতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হবে না। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ বেঁধে দেওয়া হয়েছিল সুদহার

তিনি আরও বলেন, 'আবার বেকারত্ব বাড়ারও ঝুঁকি আছে, যা আরেকটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।

তবে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এলে তারল্য সংকট থাকবে না বলে জানান তিনি।

ঋণের চাহিদা কমাতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

(এই প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন রবিউল কমল)

Comments

The Daily Star  | English

India launches strikes on Pakistan, Islamabad vows retaliation

Islamabad claims missiles hit civilians, vows retaliation; at least three killed; intense shelling reported at some points along Kashmir border; Trump says he hopes the fighting ‘ends very quickly’

1h ago