ঋণ-আমানতে সোনালীকে ছাড়িয়ে ইসলামী ব্যাংক এখন সর্ববৃহৎ

ইসলামী ব্যাংক
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

ঋণ কেলেঙ্কারি ও সংকট সত্ত্বেও আমানত পাওয়ার ক্ষেত্রে দেশের এক সময়ের সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংককে ছাড়িয়ে গেল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ।

২০২৩ সালে শরিয়াহভিত্তিক এই ব্যাংকটি এক লাখ ৫৩ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা আমানত পেয়েছে। এটি এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় নয় শতাংশ বেশি।

আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, দেশের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংক এক লাখ ৫০ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা আমানত পেয়েছে। এটি এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ছয় শতাংশ বেশি।

এর ফলে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণের (বিনিয়োগ) দিক থেকে ইসলামী ব্যাংক এখন দেশের সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এর ঋণ বেশ কয়েক বছর ধরে সোনালী ব্যাংকের তুলনায় অনেক বেশি। তবে এতদিন আমানত সংগ্রহে এগিয়ে ছিল সোনালী ব্যাংক।

বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটসের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইসলামী ব্যাংক মূলত ধর্মীয় অনুভূতির কারণে বেশি আমানত পায়।'

তার মতে, 'এ ছাড়াও, দেশে টাকা নিরাপদে রাখার সুযোগ কম। অনেকে জমি ও ফ্ল্যাট কেনেন। কিন্তু, সেখানে প্রতারণাও হয়। তাই ব্যাংকগুলো মানুষের আস্থা ধরে রাখতে পেরেছে।'

১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রথম শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক। ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ অধিগ্রহণের পর থেকে এই ব্যাংকটি সংকটে পড়েছে। এরপর থেকে, ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে এবং অনেক পৃষ্ঠপোষক ইতোমধ্যে সরে গেছেন।

সম্প্রতি ব্যাপক আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে ব্যাংকটি তদন্তের আওতায় এসেছে। যেমন, ব্যাংকিং নিয়ম লঙ্ঘন করে ২০২২ সালে ব্যাংকটি নয় প্রতিষ্ঠানকে সাত হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

ড. তৌফিক বলেন, 'ব্যাংক নিরাপদ বিকল্প কিনা তা নিয়ে অনেকে মাথা ঘামান না। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আয় করতে কীভাবে আমানতকারীদের টাকা ব্যবহার করে সে সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই বললেই চলে।'

'কম মুনাফা দিলেও বা আর্থিক সংকট থাকা সত্ত্বেও অনেকে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোয় টাকা রাখেন। প্রচলিত ব্যাংকগুলোয় সুদ এড়াতে অনেকে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকে টাকা রাখেন। এমনকি আমার কয়েকজন নিকটাত্মীয়ও আমার ব্যাংকে টাকা রাখেন না। এটি মানুষের বিশ্বাসের বিষয়।'

বেসরকারি ব্যাংকগুলোও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শাখা খুলে, মোবাইল আর্থিক পরিষেবা ও অনলাইন ব্যাংকিং চালু করে ব্যবসার প্রসার ঘটাচ্ছে। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা দ্রুত আমানত বাড়াচ্ছে। এদিক থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পিছিয়ে।

শাখার সংখ্যার দিক থেকে সোনালী ব্যাংক এখনো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এটি ইসলামী ব্যাংক থেকে অনেক এগিয়ে।

২০২৩ সাল শেষে ইসলামী ব্যাংকের শাখা ছিল ৩৯৪টি ও সোনালী ব্যাংকের শাখা ছিল এক হাজার ২৩২টি। এ ক্ষেত্রে ৯৭৮ শাখা নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে অপর রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ব্যাংক ও ৯২৮ শাখা নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে জনতা ব্যাংক।

ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরীর ভাষ্য, 'সোনালী ব্যাংককে অনেক সরকারি সেবা দিতে হয়। এটি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মতো আমানত সংগ্রহের দিকে খুব মনোযোগ দিতে পারে না। তবে ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।'

সাধারণত, রাষ্ট্র-পরিচালিত ব্যাংকগুলোর ওপর মানুষের আস্থা বেশি ছিল। এসব ব্যাংক সারা দেশে শাখার সংখ্যা বাড়িয়েছে। ফলে তারা তুলনামূলকভাবে বেশি আমানত পায়।

গত বছর তৃতীয় সর্বোচ্চ আমানত পেয়েছে জনতা ব্যাংক। এর পরিমাণ এক লাখ ১০ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। অগ্রণীর আমানত ৯৮ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা, রূপালীর ৬৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা ও পূবালীর ৬০ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা।

গত বছর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ সর্বোচ্চ আমানত পেয়েছে ৪১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এটি এর আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি।

পূবালী ব্যাংকের আমানত ১৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৬০ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। এটি দেশের প্রচলিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।

এক শীর্ষ ব্যাংক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আমানতকারীরা সাধারণত প্রচলিত ব্যাংকগুলোয় টাকা রাখেন না। তাই ইসলামি ব্যাংকগুলোয় আমানতকারীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তবে প্রচলিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে আর্থিকভাবে সচ্ছল ও ভালো সেবা দেওয়া ব্যাংকগুলো বেশি আমানত পায়।'

২০২৩ সালে ইসলামী ব্যাংক ঋণ (বিনিয়োগ) দিয়েছে এক লাখ ৪১ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। এক লাখ দুই হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে সোনালী ব্যাংক আছে দ্বিতীয় অবস্থানে।

শীর্ষ ঋণ বিতরণকারীদের মধ্যে আছে জনতা, অগ্রণী ও পূবালী ব্যাংক।

আমানত আকৃষ্ট ও ঋণ দেওয়ায় শীর্ষে থাকলেও লাভজনক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ইসলামী ব্যাংকের অবস্থান উপরের দিকে নেই।

২০২৩ সালে দেশে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ। এইচএসবিসির মুনাফা ৯৯৯ কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকের ৮২৭ কোটি টাকা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ৮০১ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংকের ৭৪৭ কোটি ও পূবালী ব্যাংকের ৬৯৭ কোটি টাকা। আর ইসলামী ব্যাংক মুনাফা করেছে ৬৩৫ কোটি টাকা।

অপর শীর্ষ ব্যাংক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কম মুনাফা দিলেও বা আর্থিক সংকট থাকা সত্ত্বেও অনেকে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোয় টাকা রাখেন।'

'প্রচলিত ব্যাংকগুলোয় সুদ এড়াতে অনেকে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকে টাকা রাখেন। এমনকি আমার কয়েকজন নিকটাত্মীয়ও আমার ব্যাংকে টাকা রাখেন না। এটি মানুষের বিশ্বাসের বিষয়,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Tribute to July uprising: Drone show lights up Dhaka's sky

In 12 vivid motifs, the July uprising came alive, tracing the heroism of Abu Sayed and the stirring role of women in the movement

12h ago