ইন্টারনেট বন্ধ ও কারফিউ

ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়ার আশঙ্কা, কমবে মুনাফা

মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ, মূল্যস্ফীতি, খেলাপি ঋণ,
গ্রাফিক্স: রেহনূমা প্রসূন

দেশব্যাপী কারফিউ জারি ও পাঁচ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে ব্যাংকের মুনাফা কমার আশঙ্কাও করছেন তারা।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয় বলেন, বাংলাদেশে চলমান অস্থিরতার কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই খেলাপি ঋণ আরও বাড়তে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা এই খাতের বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ১০ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিন্তু ব্যাংক খাতের মন্দ ঋণের প্রকৃত পরিমাণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানের চেয়ে অন্তত তিনগুণ বেশি।

এছাড়া আগামীতে দেশে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে বলে জানান নাসের এজাজ বিজয়।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ, যা সরকারের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি।

নাসের এজাজ বিজয় বলেন, 'চলমান অস্থিরতার কারণে কেবল দেশের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, এতে দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গায় সংকট তৈরি হবে। তাই এখন অগ্রাধিকার হওয়া উচিত পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।'

ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, চলমান পরিস্থিতির কারণে অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংক ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা হারিয়েছেন। তাই খেলাপি ঋণ আরও বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, এক সপ্তাহের ওই অস্থিরতার কারণে ইতোমধ্যে পোশাক খাতের কিছু রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, উচ্চ খেলাপি ঋণের কারণে বেশি প্রভিশন রাখতে গেলে ব্যাংকগুলোর মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

চলমান অস্থিরতা ব্যাংকিং খাত ও সামগ্রিক অর্থনীতিতে বহুমুখী প্রভাব ফেলবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের প্রতি আস্থা হারাবেন।

'পরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা খুব কঠিন হবে।'

তিনি জানান, অবকাঠামোগত ক্ষতির কারণে দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতাও কমে যাবে।

আনিস এ খান বলেন, 'ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজের প্রয়োজন হবে, কিন্তু সরকার নিজেই নগদ অর্থের সংকটে ভুগছে। তাই সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা ততটা ভালো নয়।'

পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ ও কারফিউয়ের কারণে ঋণগ্রহীতারা ঋণ ও অন্যান্য বিল পরিশোধ করতে পারেননি। এটি ব্যাংকের মুনাফার পাশাপাশি ব্যাংক খাতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

গত সপ্তাহে ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত প্রতিষ্ঠানগুলোকে (এনবিএফআই) ঋণ ও সঞ্চয় স্কিমের কিস্তি ও ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধে দেরি হলে জরিমানা বা সুদ আরোপ না করার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর আগে, দেশব্যাপী ইন্টারনেট বন্ধের কারণে ১৮ জুলাই রাত নয়টা থেকে ব্যাংকিং সেবা বন্ধ রাখা হয়। অবশ্য গত ২৪ জুলাই থেকে সীমিত আকারে ব্যাংকিং সেবা চালু হয়। কিন্তু ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে অনেক ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেন করতে পারছে না।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক অস্থিরতার কারণে সামনের দিনগুলোতে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অনেক অনিশ্চয়তা দেখা দেবে।

তিনি মন্তব্য করেন করোনা মহামারির চেয়ে অর্থনীতিতে দ্বিগুণ ধাক্কা আসবে।

তার ভাষ্য, 'এর একটি কারণ ইন্টারনেট বন্ধ থাকা ও আরেকটি কারণ দেশব্যাপী কারফিউ। এতে দেশের আমদানি-রপ্তানিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh, Pakistan, China launch trilateral cooperation mechanism

A working group will be formed to follow up on and implement the understandings reached during the meeting

2h ago