খেলাপি ঋণ আগামী বছর দ্বিগুণ হতে পারে

খেলাপি ঋণ
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পূরণে আগামী মার্চের মধ্যে সব ধরনের ঋণ শ্রেণিকরণ নীতিমালা কঠোর করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের সহযোগী ব্যবসায়ীদের দেওয়া ঋণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ রেকর্ড দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে—গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৪ দশমিক আট শতাংশ বা ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে ঋণ শ্রেণিবিন্যাসের জন্য খসড়া দিকনির্দেশনা তৈরি করেছে।

শিগগিরই এই দিকনির্দেশনা প্রকাশ করা হবে। ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে তা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা হুসনে আরা শিখা।

খসড়া নির্দেশিকা অনুসারে, ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত তারিখের পর তিন মাসের মধ্যে কিস্তি পরিশোধ না করলে ব্যাংক যে কোনো ধরনের ঋণকে বকেয়া হিসেবে গণ্য করবে।

বর্তমানে কোনো ঋণগ্রহীতা সময়মতো কিস্তি দিতে না পারলে ঋণ পরিশোধের তারিখের ছয় মাস পর সেই ঋণকে বকেয়া হিসেবে গণ্য হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুই ধাপে শ্রেণিবদ্ধকরণের নিয়ম কঠোর করছে।

প্রথম দফায় মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে মেয়াদ ছয় মাস থেকে কমিয়ে তিন মাস করা হয়েছে।

মেয়াদি ঋণ হচ্ছে ব্যাংক থেকে নেওয়া নির্দিষ্ট পরিমাণের ঋণ। এটি পরিশোধের নির্দিষ্ট সময়সূচি আছে। এর নির্দিষ্ট বা ভাসমান সুদের হার আছে।

গত সেপ্টেম্বরে এর প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কৃষি ও এসএমই ঋণসহ সব ধরনের ঋণ কঠোর শ্রেণিবিন্যাস বিধিমালার আওতায় আসবে। এটি আগামী মার্চের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে বাস্তবায়ন করতে হবে।

নতুন ঋণ শ্রেণিবিন্যাসের নিয়ম মানা হলে খেলাপির পরিমাণ দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের অনুপাত এখন সবচেয়ে বেশি। দেশের মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশই মন্দ।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগামীতে খেলাপি ঋণ বাড়বে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।'

ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডিসেম্বর নাগাদ খেলাপি ঋণ তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।'

তার মতে, ঋণ শ্রেণিকরণের নিয়ম কঠোর করা হলে এটি আরও বেশি হবে।

ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে সহায়তার জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দল এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করছে। তারা এই সময়সীমার মধ্যে আন্তর্জাতিকমানের ঋণ শ্রেণিকরণ বিধিমালা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক একসময় ঋণ শ্রেণিকরণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রীতি অনুসরণ করলেও ২০১৫ সালে সেখান থেকে ধীরে ধীরে সরে আসে।

Comments

The Daily Star  | English

Cops get whole set of new uniforms

The rules were published through a gazette yesterday, repealing the previous dress code of 2004

1h ago