ইসলামী ব্যাংকে নতুন অনিয়ম পেল বাংলাদেশ ব্যাংক

ইসলামী ব্যাংক
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

গত বছরের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের পরও বাংলাদেশ ব্যাংক এই শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকটির ঋণে নতুন অনিয়ম পেয়েছে।

এসব ঋণ অনিয়মের সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিলের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ব্যাংকিং নিয়ম লঙ্ঘন ধরা পড়ার পর গত ১২ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসলামী ব্যাংকের পাঁচ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বানুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

তবে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ট্রু ফেব্রিক্স লিমিটেডের জন্য ২১০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা ও নতুন করে ৪০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করে ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটি।

তদন্ত প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী কমিটির স্মারক পর্যালোচনা করা হয়। দেখা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই ঋণ পুনঃতফসিল ও নতুন ঋণ প্রস্তাব ব্যাংকের নির্বাহী কমিটিতে তোলা হয়েছে এবং অনুমোদন করা হয়েছে।

নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল এসবের জন্য দায়ী বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত অনুসারে, ট্রু ফেব্রিক্স লিমিটেড ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনিফিল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডে ছয় বছরের বেশি সময় ধরে আর্থিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন আবদুল জলিল।

গত ২৩ ডিসেম্বর ঋণ পুনঃতফসিল ও ঋণ অনুমোদন দুটোই বাতিল করে ইসলামী ব্যাংক।

তবে ১০ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন করে টাকা তোলার সুযোগ দেওয়া হয়। একে মারাত্মক অনিয়ম হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এক প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধসহ অন্যান্য অনিয়ম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ট্রু ফেব্রিক্স লিমিটেডকে ঋণের সীমা লঙ্ঘন করে ১০ কোটি ১৯ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্টের নির্দেশিকা মেনে প্রতিষ্ঠানটির পণ্য সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাও বিশ্লেষণ করা হয়নি।

ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে আবদুল জলিলের জন্য কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনের লঙ্ঘন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আবদুল জলিল তার এক আত্মীয়কে ব্যাংকটির এক সহযোগী প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিয়েছেন। একে ব্যাংকের স্বার্থবিরোধী হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মাওলার সঙ্গে দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু গতকাল বুধবার রাত পর্যন্ত তারা ফোন ধরেননি।

এ বিষয়ে আবদুল জলিল ডেইলি স্টারকে জানান—শুধু তিনি নন, পরিচালনা পর্ষদ ঋণ অনুমোদন করেছে।

তার ভাষ্য, 'এখানে কোনো অনিয়ম নেই, ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম আছে। এরা পুরাতন গ্রাহক।'

বিষয়টি এখন পরিচালনা পর্ষদ খতিয়ে দেখছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ব্যাখ্যা দিতে ব্যাংকটি প্রস্তুতি নিচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Can't afford another lost decade for education

Whenever the issue of education surfaces in Bangladesh, policymakers across the political spectrum tend to strike a familiar chord. "Education is our top priority," they harp

3h ago