ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে অনলাইন শপিং

সম্প্রতি জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের কুরিয়ার সংস্থাগুলো তাদের ভাড়া বাড়ানোয় অনলাইনে কেনাকাটা ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের কুরিয়ার সংস্থাগুলো তাদের ভাড়া বাড়ানোয় অনলাইনে কেনাকাটা ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে।

দেশের শীর্ষ দুটি কুরিয়ার ও লজিস্টিক পরিষেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ই-কুরিয়ার ও পেপারফ্লাই ইতোমধ্যে পরিবহন ব্যয় বেড়েছে উল্লেখ করে তাদের চার্জ ২০ শতাংশ বাড়িয়েছে।

চলমান মুদ্রাস্ফীতি ও গত বছর ই-কমার্স সংশ্লিষ্ট নেতিবাচক কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এমনিতেই এই খাতে প্রবৃদ্ধির গতি বেশ ধীর ছিল। এর মধ্যে চার্জবৃদ্ধিতে ই-কমার্স খাতের প্রবৃদ্ধি আরও বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ই-কুরিয়ারের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিপ্লব জি রাহুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে আমরা বড় ও দূরপাল্লার ডেলিভারির ক্ষেত্রে চার্জ ২০ শতাংশ বাড়িয়েছি।'

যেহেতু বর্ধিত চার্জ ভোক্তাদেরকেই দিতে হবে, এর মানে ডেলিভারি ফিসহ আগে যে পণ্যের মূল্য ছিল ১০০ টাকা, এখন সেটির দাম হবে প্রায় ১৪০ টাকা।

একইভাবে ডকুমেন্ট পাঠানোর চার্জ আগে ২৫ টাকা থাকলেও এখন সেটি বেড়ে ৩৫-৪০ টাকায় দাঁড়াবে।

এই মূল্যবৃদ্ধি অনলাইন শপিং শিল্পকে সরাসরি প্রভাবিত করবে বলে মনে করেন বিপ্লব জি রাহুল।

'আমার কোম্পানির মতো অন্যান্য কুরিয়ার কোম্পানিগুলো যদি চার্জ না বাড়ায়, তাহলে তাদের বিপুল পরিমাণ লোকসান করতে হবে এবং অতিরিক্ত খরচ বহনের জন্য ৬ মাসের মধ্যেই তারা নেতিবাচক ফল পেতে শুরু করবে', যোগ করেন তিনি।

পেপারফ্লাইয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান বিপণন কর্মকর্তা রাহাত আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে ডেলিভারি খরচ বেড়ে গেছে এবং এ কারণেই আমাদেরকেও ডেলিভারি চার্জ বাড়াতে হয়েছে। এ ছাড়াও, অন্যান্য অনলাইন ও অফলাইন ভিত্তিক লজিস্টিকস ও ডেলিভারি কোম্পানিগুলোও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের চার্জ বাড়িয়ে দিয়েছে।'

'ডেলিভারি ফি সমন্বয় না করে আমাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। তবে, ফি বাড়ানোর নেতিবাচক প্রভাব আমাদের ব্যবসায় পড়বে। কারণ নিম্ন আয়ের ও ঢাকার বাইরের মানুষের এখন অনলাইনে কেনাকাটা কমিয়ে দেবে', বলেন তিনি।

সরকার সম্প্রতি ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং পেট্রোল ও অকটেনের দাম যথাক্রমে ৫১ দশমিক ১ শতাংশ ও ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়িয়েছে।

এর একদিন পর বাসভাড়া ২২ শতাংশ বাড়ানো হয়।

রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম পাঠাও মোটরসাইকেল ভাড়া গড়ে ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ বাড়িয়েছে। ভাড়া বাড়ানোর কথা ভাবছে উবারও।

এসএ পরিবহন ও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসও তাদের চার্জ বাড়িয়েছে।

ডিজিটাল এসএমই পার্সেল অ্যাগ্রিগেটর ডেলিভারি টাইগারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাশরুর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা এখনো দাম বাড়াইনি। আরও ২ মাস আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করব।'

'যেহেতু আমরা মূলত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ডেলিভারি করি, তাই হঠাৎ করে দামবৃদ্ধি তাদের জন্য একটি বড় বোঝা হবে। এ ছাড়া, আমাদের বেশিরভাগ ডেলিভারি সাইকেলের মাধ্যমে করা হয়', বলেন তিনি।

মাশরুর বলেন, 'দেশের ই-কমার্স ও এফ-কমার্স খাত এখনো ছোট। এরপরেও সরকার পারসেল ডেলিভারির ওপর ১৫ শতাংশ ও অনলাইন পণ্য বিক্রির ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট নেয়।'

'এই পরিস্থিতিতে ই-কমার্স কোম্পানিগুলোকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করার জন্য সরকারকে অবশ্যই ভ্যাট স্থগিত বা বাতিল করতে হবে', যোগ করেন তিনি।

Comments