ভারতে আরও চাপে পড়তে পারে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্য

ভারত, পাট, পাটজাত পণ্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, সিভিডি, কাউন্টারভেইলিং শুল্ক, অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক, এডিডি,
স্টার ফাইল ফটো

ভারত বাংলাদেশি পাট ও পাটজাত পণ্যের ওপর ওপর কাউন্টারভেইলিং শুল্ক (সিভিডি) আরোপের পরিকল্পনা করছে। তাই বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা প্রতিবেশী দেশটিতে আরও চাপের মুখে পড়তে পারে। কারণ, ইতোমধ্যে এই শিল্পকে ভারতে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কের (এডিডি) মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া ভর্তুকির কারণে ভারতের পাট শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছে নয়াদিল্লি। তাই ভারত সিভিডি আরোপের পরিকল্পনা করছে।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ৪ আগস্ট বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে ভারত। ওই চিঠিতে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষের সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়েছে প্রতিবেশী দেশটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তপন কান্তি ঘোষ গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, মন্ত্রণালয় এই বৈঠকের জন্য আরও দুই মাস সময় চেয়েছে।

সিভিডি হলো আমদানি করা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক, যা রপ্তানিকারক দেশের সরকারের দেওয়া ভর্তুকি অফসেট করতে আরোপ করা হয়। আর এডিডি হলো সংরক্ষণবাদী শুল্ক, যা কোনো দেশের সরকার বিদেশি পণ্য আমদানির ওপর আরোপ করে।

ভারতীয় পাটকল সমিতি (আইজেএমএ) দেশটির ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ট্রেড রেমিডিসের (ডিজিটিআর) কাছে অভিযোগ করেছে, পাট ও পাটজাত পণ্যে বাংলাদেশের ভর্তুকি ভারতীয় পাট শিল্পকে প্রভাবিত করছে।

ডিজিটিআর একটি আধা-বিচারবিভাগীয় সংস্থা এবং ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সুপারিশ করার আগে স্বাধীনভাবে তদন্ত করে।

বর্তমানে বাংলাদেশ পাটজাত পণ্য যেমন হেসিয়ান ও বস্তা রপ্তানিতে ১২ শতাংশ এবং সুতা ও টুইনের মতো পাটের তন্তু রপ্তানিতে ৭ শতাংশ প্রণোদনা দেয়। এছাড়া, প্রাকৃতিক তন্তু থেকে উৎপাদিত কার্বন ও পাটকণা বোর্ড রপ্তানির বিপরীতে ২০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হয়।

চিঠিতে আইজেএমএ উল্লেখ করেছে, চালের প্যাকেজিংয়ে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ স্থানীয়ভাবে তৈরি পাটের বস্তা রপ্তানি ও অনুরূপ ব্যাগ দেশের পাট শিল্পকে প্রভাবিত করছে।

সংগঠনটি ডিজিটিআরকে অবহিত করেছে, পাট শিল্পে ব্যবহৃত মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে বাংলাদেশ প্রচুর ভর্তুকি দিচ্ছে।

এতে বলা হয়, নগদ প্রণোদনা ও ভর্তুকি বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্য শিল্পকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলছে, যার প্রভাব পড়ছে ভারতীয় পাট শিল্পের ওপর।

ডিজিটিআরের প্রশ্নের জবাবে দিলীপ ঘোষ বলেন, বিষয়টি তদন্ত করতে সময় লাগবে এবং দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে স্থানীয় পাট ও পাটজাত পণ্য প্রস্তুতকারী শিল্পসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ করা প্রয়োজন।

আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এডিডি ইস্যু নিয়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এর আগে বাংলাদেশ বেশ কয়েকবার প্রস্তাব দিয়েছিল- ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এডিডি বিলুপ্ত হলে তা যেন ভারত আর আরোপ না করে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত ডিসেম্বরে ভারত সফরকালে এডিডি বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

জবাবে ভারত বলেছিল, বাংলাদেশের প্রথম ২ লাখ টন পাট ও পাটজাত পণ্য বার্ষিক শুল্কমুক্ত অবস্থায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। এর অতিরিক্ত হলে শুল্ক আরোপ করা হবে।

এডিডির কারণে ভারতে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি ৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ হোঁচট খেয়েছে।

২০১৭ সালে ভারত বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা পাটের ওপর ৫ বছরের জন্য টনপ্রতি ১৯ ডলার থেকে ৩৫২ ডলার পর্যন্ত এডিডি আরোপ করে। ২০২২ সালে এটি নবায়ন করা হয়।

গত বছরের অক্টোবরে ডিজিটিআর ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়কে আরও ৫ বছরের জন্য পুনরায় এডিডি আরোপের সুপারিশ করে। ফলে, বাংলাদেশ পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে।

বাংলাদেশ ২০১১ সাল থেকে সাউথ এশিয়ান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টের আওতায় ২৪টি অ্যালকোহল ও বেভারেজ আইটেম ব্যতীত সব পণ্যের জন্য ভারতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার ভোগ করে আসছে। ফলে দেশটিতে রপ্তানির পরিমাণ ধারবাহিকভাবে বাড়ছে।

বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া গার্মেন্টস পণ্যের ওপর সিভিডির পরিমাণ ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ।

Comments

The Daily Star  | English

Israeli military official: estimated to have struck two thirds of Iran's missile launchers

Iran and Israel traded further air attacks on Thursday as Trump kept the world guessing about whether the US would join Israel's bombardment of Iranian nuclear facilities.

17h ago