খারাপ সময় পার করছে দেশের প্যাকেজিং শিল্প

প্যাকেজিং শিল্প এমন একটি শিল্প, যা মূলত খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও তৈরি পোশাকের মতো অন্যান্য খাতের ওপর নির্ভরশীল। ফলে, চলমান অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে গত ১৮ মাস ধরে এই শিল্পটি সংকটে আছে।
মূল্যস্ফীতি, প্যাকেজিং, প্যাকেজিং শিল্প, ডলার,

বাংলাদেশের প্যাকেজিং শিল্পের প্রবৃদ্ধি ধীর গতিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এর মূল কারণ চলমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং মার্কিন ডলার, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব।

প্যাকেজিং শিল্প এমন একটি শিল্প, যা মূলত খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও তৈরি পোশাকের মতো অন্যান্য খাতের ওপর নির্ভরশীল। ফলে, চলমান অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে গত ১৮ মাস ধরে এই শিল্পটি সংকটে আছে।

বাংলাদেশ ফ্লেক্সিবল প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাফিউস সামি আলমগীর বলেন, 'চলমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মার্কিন ডলারের উচ্চ বিনিময় হার এবং গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণে অন্যান্য খাতের মতো প্যাকেজিং শিল্পও খারাপ সময় পার করছে।'

তিনি বলেন, ২০০০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এ শিল্প বার্ষিক ১০ থেকে ১২ শতাংশ হারে সম্প্রসারণ হয়েছে। এমনকি করোনা মহামারির আগের দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে এ শিল্পের প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ২০ শতাংশ।

'স্থানীয়ভাবে ভোক্তা পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে এর বাজার বেড়েছিল। কিন্তু, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব এবং দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে চাহিদা কমেছে,' বলেন তিনি।

বাংলাদেশে প্যাকেজিং শিল্পের সামগ্রিক বাজার প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার এবং প্যাকেজিং পণ্যের বার্ষিক চাহিদা ২ লাখ টন।

সাফিউস সামি আলমগীর ট্যাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এটি দেশের অন্যতম প্যাকেজিং পণ্য নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এবং ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

বর্তমানে বাংলাদেশে ১০০টিরও বেশি প্যাকেজিং কারখানা আছে, যদিও উৎপাদনকারীর সংখ্যা কম।

বৃহৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- আরবাব পলি প্যাক লিমিটেড, এজিআই, ফেমাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, মার্চেন্ট প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ, প্রেমিয়াফ্লেক্স প্লাস্টিকস, শাজিনাজ এক্সিমপ্যাক, মেঘনা প্যাকেজিং, আর-প্যাক বাংলাদেশ এবং মোহনা প্যাকেজস। এসব প্রতিষ্ঠান মোট চাহিদার অর্ধেকের বেশি পূরণ করে।

সাফিউস সামি আলমগীরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একটি মাঝারি আকারের প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি স্থাপনে ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হয় এবং এ খাতের উদ্যোক্তারা ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছেন।

আকিজ বিয়াক্স ফিল্মস লিমিটেডের (এবিএফএল) পরিচালক (অপারেশনস) এম হোসেন ইরাজ বলেন, এই শিল্পটি বর্তমানে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কারণ এটি যেসব শিল্পের ওপর নির্ভরশীল সেগুলোও টিকে থাকতে লড়াই করছে।

ক্রমবর্ধমান বাজারের একটি অংশ দখল ও দেশের রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে ২০১৮ সালে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ নিয়ে এই শিল্পে প্রবেশ করে আকিজ বিয়াক্স ফিল্মস লিমিটেড।

এম হোসেন ইরাজ বলেন, এবিএফএল দেশের একমাত্র কারখানা যেখানে সিঙ্গেল লেয়ার আনপ্রিন্টেড ফ্লেক্সিবল প্যাকেজিং ও মাল্টিলেয়ার প্রিন্টেড ফ্লেক্সিবল প্যাকেজিংয়ের জন্য ফিল্ম তৈরি করে। বছরে এর উৎপাদন ক্ষমতা ৮০ হাজার টন।

তিনি অভিযোগ করেন, এমন অনেক আমদানিকারক আছেন যারা বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধার আওতায় প্যাকেজিংয়ের কাঁচামাল নিয়ে আসেন এবং স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। যদিও সেগুলো কেবল রপ্তানিমুখী পণ্যে ব্যবহৃত হয়।

তার মতে, চলমান সংকটে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বাজারে সঠিক পরিবেশ গড়ে তোলা প্রয়োজন।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ২০১০ সালে নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত পণ্যে ব্যবহারের জন্য একটি প্যাকেজিং প্ল্যান্ট স্থাপন করে। প্রাণের প্লান্টটি নিজেদের চাহিদা মেটানোর পরে খুব সীমিত আকারে অন্যান্য সংস্থার কাছে প্যাকেজিং পণ্য বিক্রি করে।

প্রতিষ্ঠানটির বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, অনেক সময় অতিরিক্ত পণ্যের প্রয়োজন হলে অন্যের কাছ থেকে কিনতে হয়।

তিনি আরও বলেন, 'উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে, তাই চাহিদাও কমেছে।'

বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে উচ্চ পর্যায়ে আছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, সরকারের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশের বিপরীতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভোক্তা মূল্য সূচক ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ০২ শতাংশে পৌঁছেছে।

বর্তমান সংকটের জন্য উৎপাদনকারীদের অতিরিক্ত বিনিয়োগ ও অত্যধিক সক্ষমতাকে দায়ী করেন আরবাব পলি প্যাকের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম লিখন।

তিনি বলেন, ২ লাখ টন প্যাকেজিং উপকরণের চাহিদার বিপরীতে এই খাতের সামগ্রিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৪ লাখ টনে পৌঁছেছে।

'আমরা ৩৮ বছর আগে এই বাজারে প্রবেশ করেছিলাম, তখন উৎপাদনকারীর সংখ্যা কম ছিল এবং ব্যবসায়ের প্রবৃদ্ধিও ভালো ছিল,' বলেন তিনি।

অতিরিক্ত সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও প্যাকেজিং উপকরণের চাহিদার ২০ শতাংশ পূরণের জন্য বাংলাদেশকে এখনো বাইরের বাজারের ওপর নির্ভর করতে হয়। কারণ এমন কিছু উপকরণ আছে, যা স্থানীয় নির্মাতারা উৎপাদন করে না।

অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসা পর্যন্ত প্যাকেজিং শিল্পের সংকট কাটিয়ে আগের জায়গায় ফেরার সম্ভাবনা দেখছেন না বাংলাদেশ ফ্লেক্সিবল প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাফিউস সামি আলমগীর।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago