যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি
স্টার ফাইল ফটো

থ্যাঙ্কসগিভিং ডে, ব্ল্যাক ফ্রাইডে ও সাইবার মন্ডেসহ যুক্তরাষ্ট্রে ছুটির মৌসুমে পোশাকের বিক্রি বাড়ে। কারণ, এ সময় ক্রেতারা বেশি কেনাকাটা করেন। ফলে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম রিটেইল ফেডারেশন ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশন (এনআরএফ) বার্ষিক জিডিপিতে ৩ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার অবদান রাখে। সংস্থাটি বছরের ১ নভেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বরকে ছুটির মৌসুম হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে।

দেশটিতে প্রতি বছরের ২৩ নভেম্বর থ্যাঙ্কসগিভিং ডে পালিত হয়, এই ছুটির পর প্রথম শুক্রবার ব্ল্যাক ফ্রাইডে এবং তার পরের সোমবার সাইবার মনডে পালিত হয়। আর ক্রিসমাস বা বড় দিন পালিত হয় ২৫ ডিসেম্বর।

এই ছুটির মৌসুমে পণ্য, বিশেষ করে গার্মেন্টস পণ্যের বিক্রি বাড়ে। কারণ এসময় ত্রেতাদের জন্য বিরাট ছাড় দেওয়া হয়, এতে তারা আকৃষ্ট হন।

পোশাক ব্যবসায়ীরা এ সময় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়ে থাকেন, বিশেষ করে মাঝারি ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের কেনাকাটায় উৎসাহী করতে এই ছাড় দেওয়া হয়।

এনআরএফ পূর্বাভাস দিয়েছে, এবার ছুটির ব্যয় রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা ৩ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশের মতো বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৯৫৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার থেকে ৯৬৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার হতে পারে।

ফেডারেশনের সাম্প্রতিক বিক্রির রেকর্ড দিয়ে জানিয়েছে, সবচেয়ে বিক্রি হওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে পোশাক ও আনুষাঙ্গিক ৪৯ শতাংশ, খেলনা ৩১ শতাংশ, উপহার কার্ড ২৫ শতাংশ, বই ও অন্যান্য মাধ্যম ২৩ শতাংশ এবং ২৩ শতাংশ ব্যক্তিগত পণ্য।

২৮ নভেম্বর এক বিবৃতিতে এনআরএফ জানিয়েছে, থ্যাঙ্কসগিভিং ডে থেকে সাইবার মনডে পর্যন্ত পাঁচ দিনের ছুটির সপ্তাহ শেষে রেকর্ড ২০০ দশমিক ৪ মিলিয়ন গ্রাহক কেনাকাটা করেছেন, যা গত বছরের ১৯৬ দশমিক ৭ মিলিয়নের রেকর্ড অতিক্রম করেছে।

এই পরিসংখ্যান এনআরএফের ১৮২ মিলিয়ন ক্রেতার প্রাথমিক প্রত্যাশাকে ১৮ মিলিয়নেরও বেশি ছাড়িয়ে গেছে।

এনআরএফের প্রেসিডেন্ট ও সিইও ম্যাথিউ শাই বলেন, 'থ্যাঙ্কসগিভিং ও সাইবার মনডের মধ্যে পাঁচ দিনের সময়টি বছরের ব্যস্ততম কেনাকাটার দিনগুলোর মধ্যে অন্যতম। এসময় ভোক্তাদের অর্থনৈতিক সামর্থ্যের প্রতিফলন ঘটে।'

তিনি বলেন, 'বিপুল সংখ্যক ক্রেতা আমাদের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। বড় ও ছোট খুচরা বিক্রেতারা ভোক্তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবা নিরাপদ, সুবিধাজনক ও সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহ করতে প্রস্তুত ছিল।'

এভাবে বিক্রি বৃদ্ধির পর আশা করা হচ্ছে, আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ওয়ার্ক অর্ডারে বড় ধরনের উত্থান ঘটতে পারে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক বৃহত্তম পোশাক রপ্তানি গন্তব্য এবং চীন ও ভিয়েতনামের পর যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ।

এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে চাহিদা মন্দা, পুরানো স্টক জমে যাওয়া ও মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মারাত্মক পরিণতির কারণে উদ্ভূত উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে রপ্তানি কমেছে।

গত বছর বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা সেখানে ১০ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছিল, যা এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

চলতি বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে বিশ্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানিও ২২ দশমিক ৮১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬০ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলারে।

মাহিন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (মাহিন) বলেন, নভেম্বর থেকে বিক্রি বেশি হওয়ায় আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের চালান বাড়তে পারে।

একই অভিমত জানান এভিন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আনোয়ার উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি এখনো ধীর গতিতে চলছে, কারণ ক্রেতাদের চাহিদা এখনো কম এবং আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে চালান বাড়তে পারে।

তবে বিগত বছরগুলোর মতো এবারও সাধারণ নির্বাচনের আগে ক্রেতারা আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, মৌসুমে বিক্রি বেড়েছে এটা ভালো খবর।

তাই আগামী বছরের শুরু থেকে দেশ থেকে রপ্তানিও বাড়বে বলে জানান ফারুক হাসান।

বাংলাদেশে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদও আশা করছেন, ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়বে।

Comments

The Daily Star  | English

In coffins, from faraway lands

Kazi Salauddin, a 44-year-old man from Cumilla, migrated to Saudi Arabia in October 2022, hoping to secure a bright future for his family. But barely a year later, Salauddin, the father of two daughters and a son, died suddenly.

6h ago