যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে চীন-ভিয়েতনামকে ছাড়াল বাংলাদেশ

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাব
স্টার ফাইল ফটো

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীন ও ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলেছে  বাংলাদেশ। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ ও বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি এর মূল কারণ।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির পোশাক আমদানি ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়ে ৯৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যা ২০২১ সালে ছিল ৮১ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ থেকে দেশটির পোশাক আমদানি ২০২২ সালে ৩৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে ৯ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা ২০২১ সালে ছিল ৭ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৮ সালে ছিল ৫ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার।

এর ফলে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্টের বাজারের ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ ধরে রেখে তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক সরবরাহকারী দেশ হয়েছে, যা ২০২১ সালে ছিল ৮ শতাংশ ৭৬ শতাংশ।

তৈরি পোশাক সরবরাহকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক হাসান মনে করেন, বৈশ্বিক পোশাক বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব বাড়ানোর বিরাট সুযোগ আছে।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ডেনিম রপ্তানিকারক দেশ হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, 'বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরির পণ্যতে আমাদের প্রবেশ বাড়ানোর সম্ভাবনা আছে। এখনো বেশ কয়েকটি মার্কিন ব্র্যান্ড বাংলাদেশের পণ্য নেয়নি বা সীমিত আকারে নিয়েছে। যদিও আমরা বাজারে বৈচিত্র্য আনার উপায় খুঁজছি। আমি মনে করি বর্তমান বাজারগুলোতে এখনো অনেক সুযোগ আছে।'

পরিমাণের দিক দিয়ে সব ধরনের গার্মেন্টস পণ্য সরবরাহকারী প্রধান দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ছিল। কেবল ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশের ওপরে ছিল এবং দেশটি ২৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পোশাক আমদানি গত বছর ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩ দশমিক ১৪ বিলিয়ন বর্গমিটার সমতুল্য (এসএমই) হয়েছে। এটি রপ্তানি বা আমদানি ফ্যাব্রিক ও পোশাকের পরিমাণ পরিমাপের একটি মাধ্যম। ২০২১ সালে যা ছিল ২ দশমিক ৬০ বিলিয়ন এসএমই।

২১ দশমিক ৭৫ শতাংশ বাজার ধরে রাখা যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পোশাক আমদানকারক দেশ চীন। ২০২২ সালে চীনের পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেড়ে ২১ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালে যা ছিল ১৯ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৮ সালে ২৭ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার।

তবে, পরিমাণের দিক দিয়ে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি কমেছে ৩ দশমিক ১১ শতাংশ।

ভিয়েতনাম ২০২২ সালে ১৮ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে, যা ২০১৮ সালে ছিল ১২ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২১ সালে ১৪ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্রের মোট পোশাক আমদানিতে ভিয়েতনামের অংশ ২০১৮ সালের ১৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ১৮ দশমিক ২৬ শতাংশ হয়েছে।

গত বছর ভারত ও ইন্দোনেশিয়া আগের বছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশেরও বেশি রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। তাদের অংশীদারিত্ব ২০১৮ সালে যথাক্রমে ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ ছিল, ২০২২ সালে তা বেড়ে ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ ও ৫ দশমিক ৬১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

কম্বোডিয়ার পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার বেড়েছে ২৫ দশমিক ০৮ শতাংশ, পাকিস্তানের বেড়েছে ২৪ শতাংশ, হন্ডুরাসের বেড়েছে ১৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং মেক্সিকোর বেড়েছে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক বাজারে এসব দেশেরও অংশীদারিত্ব বেড়েছে।

২০১৮ সালে শুরু হওয়া বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে চীন বৈশ্বিক পোশাক বাজারে আধিপত্য হারানোয় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রতি বছর বাড়ছে।

বৈশ্বিক পোশাক ব্যবসায় ২০০০ সালে চীনের অংশ ছিল ১৮ দশমিক ২ শতাংশ, ২০০৫ সালে ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ২০১০ সালে ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু, ২০২২ সালে তা হয়েছে ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ।

করোনা মহামারিতে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিকারক দেশে হিসেবে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করতে পেরেছিল। কারণ, তখন বেশির প্রতিদ্বন্দ্বি দেশে পোশাক কারখান দীর্ঘদিন বন্ধ রাখলেও বাংলাদেশ চালু রেখেছিল।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির বাধ্যতামূলক ফুমিগেশন মওকুফ করেছে। ফলে, আমদানিকারকদের টেক্সটাইল কাঁচামাল আনতে প্রয়োজনীয় সময় ও খরচ সাশ্রয় হবে।

ফারুক হাসান বলেন, আমরা এখন যুক্তরাষ্ট্রের তুলা ব্যবহার করে তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকারের বিষয়টি বিবেচনা করতে মার্কিন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। এতে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা উৎপাদনকারী, পোশাক ব্র্যান্ড ও ভোক্তারা লাভবান হবে এবং বাংলাদেশ বাড়তি সুবিধা পাবে।

Comments

The Daily Star  | English

Last push to beat US tariff deadline

As US President Donald Trump prepares to roll out sweeping new tariffs on countries without bilateral trade deals, Bangladesh has entered final negotiations in Washington, DC, scrambling to shield its economy from the threat of a 35 percent duty on its exports.

7h ago