পোশাকের দাম বৃদ্ধি, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য কমিশনের শুনানির মুখে বিজিএমইএ সভাপতি
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের (ইউএসআইটিসি) এক শুনানিতে পোশাকের দাম বৃদ্ধি, সুতা ও তুলার উৎস, শ্রমিক অধিকারসহ নানান প্রশ্নের মুখে পড়েছেন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি।
বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান থেকে রপ্তানি হওয়া পোশাক পণ্যের ইউনিটপ্রতি আমদানি মূল্য হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে ইউএসআইটিসির তদন্তের অংশ হিসেবে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শুনানিতে অংশ নেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। শুনানিতে তিনি সুতা ও তুলার উৎস, কর্ম পরিবেশ, সামাজিক ও সুশাসন (ইএসজি) পরিমাপ, উৎপাদনশীলতা, শ্রম অধিকার, বেতন প্রদান, মজুরি কাঠামো এবং পোশাক শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হন।
জবাবে বিজিএমইএ প্রধান বলেন, তারা সব ধরনের ইএসজি ও অন্যান্য ব্যবস্থা মেনে চলছেন এবং 'অ্যাকর্ড' ও 'অ্যালায়েন্স' এর সুপারিশ অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা জোরদার করেছেন।
তিনি বলেন, 'স্থানীয় পোশাক উৎপাদনকারীরা তাদের কারখানা পরিচালনায় সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছেন, যেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা বেশি এবং শ্রমিকদের শারীরিক পরিশ্রম কমায়।'
শুনানিতে বাংলাদেশের উৎপাদন খরচ, শ্রম আইন সংশোধন, ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রম বিধিমালা নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। বিশেষ করে ইউএসআইটিসি জানতে চেয়েছিল, কম্বোডিয়ার তুলনায় বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন কম কেন?
তখন ফারুক হাসান বলেন, আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর চাহিদা অনুযায়ী সব রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন আছে।
তিনি আরও বলেন, 'সরকার ইতোমধ্যেই দু'বার শ্রম আইন সংশোধন করেছে এবং আরও সংস্কারের কথা ভাবা হচ্ছে।'
তিনি বলেন, কাঁচামালের উচ্চমূল্যের কারণে প্রতি ইউনিটে বাংলাদেশি পোশাকের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
'আমরা আপনাদের সুপারিশ অনুযায়ী সবকিছু করেছি, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আপনাদের ক্রেতারা পণ্যের ন্যায্য মূল্য পরিশোধ করছে না।'
তিনি ইউএসআইটিসিকে পোশাক সামগ্রীকে শুল্কমুক্ত আমদানি ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করারও আহ্বান জানান।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সরকার স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আমদানি করা ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্ক সুবিধা দিয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক সামগ্রী সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত নয়।
তিনি বলেন, ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সর্বোচ্চ ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করছে। যেখানে অন্যান্য দেশের শুল্ক কাঠামো ১ থেকে ৩ শতাংশের আশপাশে।
তিনি আমেরিকান তুলা থেকে তৈরি বাংলাদেশি পোশাক পণ্যের জন্য অন্তত শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিতে ইউএসআইটিসির কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
ফারুক হাসান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের যেসব অঙ্গরাজ্যে তুলা চাষ হয়, তিনি ইতোমধ্যে সেসব অঙ্গরাজ্যের স্থানীয় সরকারকে চিঠি লিখেছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশের বার্ষিক চাহিদার ১২ শতাংশের বেশি তুলার চাহিদা মেটাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট ৯০ লাখ বেল।
এছাড়া ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ভবন ধসের পর জিএসপি সুবিধা স্থগিত করার সময় ১৬টি শর্ত দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু, সরকার তা অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করলেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করেনি।
ফারুক হাসান শুনানিতে আরও বলেন, ২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির দিকে তাকালে দেখা যায়, মার্কিন ডলারের মূল্যের দিক থেকে বিশ্ব থেকে দেশটির আমদানি কমেছে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ, আর বাংলাদেশ থেকে বেড়েছে ৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
পরিমাণের দিক থেকে (বর্গমিটারের সমতুল্য) বিশ্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি কমেছে শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ, আর বাংলাদেশ থেকে বেড়েছে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
তিনি আরও বলেন, ২০১৩-২০২৩ সময়কালে বাংলাদেশের ইউনিট মূল্য শূন্য দশমিক ৯৯ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া বৈশ্বিক গড় ইউনিট মূল্য শূন্য দশমিক ০৪ শতাংশ কমেছে।
২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ইউনিট মূল্য মাঝারি ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অনুসরণ করেছে। ২০১৭ সালে গড় ইউনিট মূল্য ছিল ২ দশমিক ৭৪ ডলার, ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ২৩ ডলারে।
Comments