গ্যাসের দাম বাড়ানোর এখনই কি সঠিক সময়?

গ্যাসের দাম
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) শিল্পকারখানার জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানি করবে আগামীকাল।

গত জানুয়ারিতে জমা দেওয়া প্রস্তাবে গ্যাস সরবরাহকারীরা বিইআরসির মাধ্যমে নতুন গ্যাস সংযোগের জন্য গ্যাসের দাম ১৫০ শতাংশ ও বিদ্যমান শিল্প কারখানা সম্প্রসারণের জন্য ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার পরামর্শ দিয়েছিল।

বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, গ্যাসের বাড়তি দাম এই সংকটময় সময়ে পণ্যের উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ করে শিল্পকারখানা ধ্বংস করে দেবে।

গ্যাসের দাম বাড়ানোর পেছনে সরকারের যুক্তি—জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানো ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের বাড়তি আমদানি দাম মেটানো।

শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশি দামে আমদানি করা জ্বালানির ওপর দেশ ক্রমবর্ধমান নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। ধারণা করা হচ্ছে—গ্যাসের মজুদ অনুসন্ধান করা না হলে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ আমদানি করা জ্বালানির ওপর ৯০ শতাংশেরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।

প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা বলেছেন—২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দেওয়ায় তারা অতিরিক্ত চাপে পড়েছেন। পর্যাপ্ত সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিট ১৬ টাকা থেকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৩২ টাকা করা হয়।

মালিকদের অভিযোগ, গ্যাস সরবরাহ বাড়েনি। সক্ষমতার অর্ধেক দিয়ে কারখানা চালাতে হচ্ছে।

একই সঙ্গে কম দামে ভারতীয় সুতার আমদানির কারণে কয়েকটি কারখানায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার অবিক্রীত সুতা পড়ে আছে। ভারত সরকার ভর্তুকি দেওয়ায় তা আরও সস্তা হয়েছে।

বাংলাদেশ ভর্তুকি কমিয়ে এক শতাংশ করেছে। ভারত ভর্তুকি দিচ্ছে তিন শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) তথ্য অনুসারে, গত পাঁচ বছরে গ্যাসের দাম ২৫৬ দশমিক পাঁচ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

তাই শিল্প সংশ্লিষ্ট ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন—এখন গ্যাসের দাম বাড়ানোর সঠিক সময় নয়। কারণ এতে শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।

দীর্ঘদিন ধরে চলা গ্যাস সংকটের পাশাপাশি করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ ও দেশব্যাপী রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে শিল্প খাত টিকে থাকার লড়াই করছে।

গত বছর বাংলাদেশে রাজনৈতিক আন্দোলন ও শ্রমিক অসন্তোষের কারণে পোশাকের অনেক কার্যাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোয় চলে যায়।

ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমে যাওয়া ও ব্যাংকে ডলার সংকটের কারণে রপ্তানিমুখী বস্ত্র ও পোশাক খাতও কার্যকরী মূলধনের ঘাটতিতে পড়ছে।

এ ছাড়াও, ব্যাংকের সুদের হার ১৫-১৬ শতাংশের মধ্যে। ফলে ঋণ পাওয়া কঠিন।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রবৃদ্ধি না হলে কারখানা অকেজো হয়ে পড়ে। প্রস্তাব অনুসারে গ্যাসের দাম বাড়ানো এখন ঠিক হবে না। কারখানাগুলো কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।'

একই কথা বলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

তিনি বলেন, 'দেশে গ্যাস নষ্ট হওয়ার ঘটনাও বেশি। এতে বোঝা যায়, এই খাতে সুশাসনের অভাব।'

'গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে সরবরাহ নাও বাড়তে পারে' বলে মনে করেন তিনি।

তার ভাষ্য, 'সংকট কাটাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোটা যথেষ্ট নাও হতে পারে। দাম বাড়িয়ে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো হবে এটা খোঁড়া অজুহাত।'

পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের (পিআরসি) চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বস্ত্র, পোশাক ও ইস্পাত খাত।'

গ্যাসের দাম বাড়লেও সরবরাহ বাড়বে না বলেও মনে করেন তিনি।

আউটপেস স্পিনিং মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব হায়দার বেশি দামে আমদানি করা তরলীকৃত গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন অর্থবছরে ভর্তুকি বরাদ্দ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ছিল এক লাখ ১৭৪ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ৪২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের সম্ভাবনা আছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের আগে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বরাদ্দ ছিল সাত হাজার কোটি টাকা থেকে নয় হাজার কোটি টাকা।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

3h ago