বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দর

বে টার্মিনালে ৮০০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা

১৮৮৮ সালের ২৫ এপ্রিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার অ্যাক্ট-১৮৮৭ (বেঙ্গল) কার্যকর হওয়ার পর থেকে দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে।
চট্টগ্রাম বন্দর
চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল থেকে বঙ্গোপসাগরের রাসমণিঘাট পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার জমির ওপর বে টার্মিনাল তৈরি করা হচ্ছে। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় বে টার্মিনাল প্রকল্পে সরাসরি ৮০০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসতে পারে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহেল।

গতকাল বুধবার ১৩৭তম বন্দর দিবস উদযাপনের প্রাক্কালে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, 'আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে এ বিষয়ে চুক্তিগুলো সই করার জন্য কাজ করছি।'

১৮৮৮ সালের ২৫ এপ্রিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার অ্যাক্ট-১৮৮৭ (বেঙ্গল) কার্যকর হওয়ার পর থেকে দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে।

চবক চেয়ারম্যান বন্দরের ছয় নতুন টার্মিনাল তৈরির অগ্রগতি সম্পর্কেও সংবাদমাধ্যমকে জানান তিনি। এর মধ্যে আছে বে টার্মিনালের চারটি ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনাল।

বে টার্মিনাল প্রকল্পের দুটি কন্টেইনার টার্মিনাল, একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল এবং একটি তেল ও গ্যাস টার্মিনাল সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।

তিনি বলেন, 'মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনাল তৈরির কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আমরা তা মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।'

তার বিশ্বাস, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে এই অঞ্চলটি একটি হাব বন্দরে পরিণত হবে। দক্ষিণ এশিয়ার চাহিদা মেটাতে বড় জাহাজগুলো এখানে ভিড়তে পারবে।

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল থেকে বঙ্গোপসাগরের রাসমণিঘাট পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার জমির ওপর বে টার্মিনাল তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে।

আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের সঙ্গে চবকের যৌথ উদ্যোগে বহুমুখী টার্মিনালটি তৈরি করা হবে।

আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ বহুমুখী টার্মিনাল তৈরির জন্য এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে।

চবক চেয়ারম্যান আরও বলেন, 'আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের প্রতিনিধি দল আগামী মে মাসের প্রথমার্ধে বন্দর পরিদর্শন করবে। সে সময় একটি প্রাথমিক চুক্তি হতে পারে বলে আশা করছি।'

সরকার ইতোমধ্যে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে বে টার্মিনালের দুটি কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য সিঙ্গাপুরের পিএসএ এবং আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছে।

পিএসএ সিঙ্গাপুর ও ডিপি ওয়ার্ল্ড প্রত্যেকে ১৫০ কোটি ডলার করে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানান চবক চেয়ারম্যান।

লিকুইড বাল্ক টার্মিনালের পরিকল্পনাটি সম্প্রতি গ্রহণ করা হয়েছে।

তেল-গ্যাস টার্মিনালের জন্য সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'স্থানীয় ইস্ট কোস্ট গ্রুপ ও কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এটি তৈরি করবে।'

টার্মিনাল তৈরির পর দেশের জ্বালানি ধারণ ক্ষমতা ২৫ দিন থেকে বেড়ে দুই মাস পর্যন্ত বাড়বে বলে আশা করেন চবক চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, 'বে টার্মিনালের জন্য অ্যাক্সেস চ্যানেল ড্রেজিং ও ব্রেকওয়াটার তৈরির জন্য বিশ্বব্যাংক ৫৯০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।'

চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহেল আরও বলেন, 'বে টার্মিনালের জন্য মাস্টারপ্ল্যান তৈরি হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের পাশাপাশি নকশার কাজও শেষ হওয়ার পথে। এখন আমরা বে টার্মিনালের কাজের গুণগত মান ও খরচ প্রাক্কলন প্রস্তুত করছি।'

আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে এসব কাজ শেষ হবে। এরপরই টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানান তিনি।

এ ছাড়া, চট্টগ্রাম বন্দরে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জন্য এপি মোলার মার্স্কের প্রস্তাব ইতোমধ্যে পিপিপি প্রকল্প হিসেবে নেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পটি নিয়ে সব ধরনের সমীক্ষা করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, 'চলতি বছরের মধ্যে চুক্তি হওয়ার আশা করছি।'

Comments