১ বছরে শুল্ক ছাড় বেড়েছে ২০ শতাংশ

শুল্ক ছাড়
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের বিবেচনায় দেশের কর-জিডিপি অনুপাত কম। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বিষয়টিকে যৌক্তিক করার সুপারিশ দিলেও বছরের পর বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) শুল্ক ছাড় দিয়ে যাচ্ছে।

এনবিআর কর্মকর্তাদের মতে—দেশীয় শিল্পায়নের সুবিধার্থে, রপ্তানি আরও সহজ করতে ও নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে এসব ছাড় দেওয়া হয়।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে কর প্রশাসন বেশ কয়েকটি খাতের পাশাপাশি শিল্প ও কৃষিতে ৩৩ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা শুল্ক ছাড় দিয়েছে। এটি পরোক্ষ করের অংশ।

এই ছাড় এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরের শুল্ক ছাড়ের তুলনায় বেশি প্রায় ৪৭ শতাংশ।

গত ৯ আগস্ট প্রকাশিত 'কাস্টমস ট্যাক্স এক্সপেন্ডিচার রিপোর্ট ২০২২-২৩'-এ এমন তথ্য প্রকাশ করে এনবিআর।

আইএমএফের চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমবারের মতো প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কর কর্তৃপক্ষ।

২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় আসার পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফের কর ছাড়কে যৌক্তিক করার পরামর্শ তেমন প্রভাব ফেলেনি।

গত অর্থবছরে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত ছিল সাত দশমিক ৩০ শতাংশ। এটি বিশ্বে সর্বনিম্ন।

প্রতিবেশী ভারতের কর-জিডিপি অনুপাত ১১ দশমিক সাত শতাংশ। দেশটি সম্প্রতি কর আদায়কে যৌক্তিক পর্যায়ে এনেছে।

মোট কর ছাড়ের পরিমাণ যদি মোট কর আদায়ের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, তবে গত অর্থবছরে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত শূন্য দশমিক ৭৬ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে যাবে। অর্থের জোগান পেতে ঋণের ওপর রাষ্ট্রের নির্ভরতা কমবে।

অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দিনের পর দিন কর ছাড় দেওয়া যায় না। কর কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই ছাড় কমাতে এর অগ্রাধিকারের তালিকায় পরিবর্তন আনতে হবে।'

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তারেরও একই মত।

তার মতে, শিল্পের কাঁচামালের জন্য 'এন্ড-ইউজার কনসেশনের' জন্য প্রযোজ্য উৎপাদন বা অন্যান্য খাতে কর ছাড় যৌক্তিক করার যথেষ্ট সুযোগ আছে।

জায়েদী সাত্তার বলেন, 'তৈরি পণ্যের ওপর সংরক্ষণমূলক শুল্ক সমন্বয় না করে কাঁচামালের ওপর শুল্ক ছাড় দেওয়া বা বাড়ানোর প্রবণতার কারণে সংরক্ষণবাদের অবসান হচ্ছে না।'

রপ্তানি সম্ভাবনা আছে এমন আমদানি পণ্যের দাম প্রতিযোগিতার কারণে আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রপ্তানি বহুমুখীকরণের অগ্রগতিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

তবে সব ধরনের শুল্ক ছাড় তুলে নেওয়া উচিত হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

যেমন, নির্দিষ্ট উৎপাদন খাতে কাস্টমস শুল্কের মধ্যে যদি পোশাক খাতের ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি আমদানিতে শুল্ক না থাকে, তবে বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানির জন্য সমান ক্ষেত্র তৈরিতে এই খাতে বৈশ্বিক দাম নিশ্চিত করতে কর ছাড় খুবই প্রয়োজন।

বর্তমানে বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বেশি কর ও রাজস্ব ছাড় দিয়ে থাকে।

এনবিআরের প্রতিবেদন বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে বিদ্যুৎ খাত। এই খাত পেয়েছে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। মোট ছাড়ের সাড়ে ২০ শতাংশ।

মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে দেওয়া ছাড় দ্বিতীয় বৃহত্তম। এর পরিমাণ ১৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এরপর আছে কিছু নির্দিষ্ট পণ্য উত্পাদন ও প্রতিরক্ষা খাত।

'রাজনৈতিক কারণে বিদ্যুৎ অগ্রাধিকার পেয়েছে' উল্লেখ করে সিপিডি'র তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, 'দেশে অনেক খাত বড় হচ্ছে। গণছাড়ের সংস্কৃতি দূর করতে পরিকল্পনা প্রয়োজন।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আইএমএফ আমাদেরকে ধীরে ধীরে কর ছাড়কে যৌক্তিক করতে বলেছে। এর মানে, যেসব খাতে কর ছাড় প্রয়োজন শুধু সেখানে ছাড়ের অনুমতি দেওয়া উচিত।'

'মোট টাকার পরিমাণ বাড়ুক বা না বাড়ুক তাতে কিছু যায় আসে না।'

সরকার বছরের পর বছর ধরে শুল্ক ছাড় পেয়ে আসা খাতগুলোকে চিহ্নিত করতে চাচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'ওই খাতগুলোয় ছাড় কমানোর পাশাপাশি রাজস্ব সংগ্রহ ও কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর দিকেও নজর দেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Beyond development paradox & unnayan without democracy

As Bangladesh seeks to recalibrate its path in the aftermath of recent upheavals, the time is ripe to revisit an oft-invoked but under-examined agenda: institutional reform. Institutions are crucial to understand, as they are foundational for governance, transformation, and economic development.

15h ago