দাম সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত ট্রাকে পণ্য বিক্রি চলবে: টিসিবি চেয়ারম্যান

টিসিবি এমন এক সময় ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি শুরু করলো যখন দেশে প্রায় এক যুগের মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি।
টিসিবির পণ্য
মো. আরিফুল হাসান। ছবি: স্টার

দাম সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত ঢাকার ৩০টি স্থানে ট্রাকে করে স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চেয়ারম্যান মো. আরিফুল হাসান।

দ্য ডেইলি স্টারকে সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, সাধারণ মানুষের সংসার খরচের চাপ বেড়ে যাওয়ায় পণ্য বিক্রির পুরোনো পদ্ধতিতে ফিরেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। প্রতি ট্রাক থেকে এখন প্রতিদিন অন্তত ৩০০ মানুষ পণ্য কিনতে পারছেন।

টিসিবি এমন এক সময় ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি শুরু করলো যখন দেশে প্রায় এক যুগের মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি।

দেশের অন্যান্য শহরের তুলনায় ঢাকা শহরে জীবনযাত্রার খরচ বেশি। এখানে ভাসমান লোকের সংখ্যাও বেশি। তাই আপাতত শুধু ঢাকাকে কেন্দ্র করেই ট্রাকে পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান আরিফুল হাসান।

এখন ঢাকায় প্রতিদিন নয় হাজার সাধারণ ক্রেতা ভর্তুকি দামে চার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছেন বলেও জানান তিনি।

টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা দুই কেজি করে মসুর ডাল, আলু ও পেঁয়াজ ও দুই লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারেন। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৫০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, মসুর ডাল ৭০ টাকা ও প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১০০ টাকা।

টোকেন পাওয়া প্রতিজন একটি প্যাকেজে ৪৮০ টাকার বিনিময়ে এসব পণ্য পেয়ে থাকেন, যা বাজারদরের প্রায় অর্ধেক।

টিসিবির এই কর্মকর্তা জানান, ঢাকায় ৩০টি ট্রাকে সব মিলিয়ে প্রতিদিন ৭২ টন পণ্য বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে গত বছরের মাঝামাঝি ট্রাকে পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দেয় টিসিবি। পরিবার কার্ডের মাধ্যমে সারা দেশে এক কোটি পরিবারের মধ্যে পণ্য বিক্রি শুরু করে এই সংস্থাটি।

পরে, চলতি মাসে আবার ট্রাকে পণ্য বিক্রি শুরু হয়।

'এক কোটি পরিবারের পাশাপাশি নতুন আরও নয় হাজার সাধারণ ক্রেতা ভর্তুকি দামে পণ্য কিনতে পারছেন। এই সংখ্যাটা যদি আরও বাড়ানো যেত তাহলে ভালো হতো। সরকারের দিকটাও মানুষকে বুঝতে হবে।'

আরিফুল হাসান আরও বলেন, 'এক কোটি পরিবারের পাশাপাশি নতুন আরও নয় হাজার সাধারণ ক্রেতা ভর্তুকি দামে পণ্য কিনতে পারছেন। এই সংখ্যাটা যদি আরও বাড়ানো যেত তাহলে ভালো হতো। সরকারের দিকটাও মানুষকে বুঝতে হবে।'

টিসিবির পণ্য বিক্রির স্পটগুলো ভিজিট করলে দেখা যায়, অনেকেই পণ্য কিনতে না পেরে খালি হাতে ফিরছেন। এই পরিস্থিতিতে টিসিবির পণ্য বিক্রির পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, 'ঢাকা শহরে ইতোমধ্যে ১০ লাখ মানুষের কাছে ভর্তুকি দাম পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। পাশাপাশি সম্প্রতি এই তালিকায় আরও দুই লাখ মানুষ যোগ হয়েছেন।'

তিনি মনে করেন, 'যেহেতু ভর্তুকি দামে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে, এই পণ্য কেনার জন্য মানুষের মধ্যে সব সময় আগ্রহ থাকবেই। এই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়।'

'এই ভর্তুকি দামের পণ্যগুলো শুধু তাদের জন্য যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়া তারা বিপর্যস্ত,' যোগ করেন তিনি।

২০২২-২৩ অর্থবছরে টিসিবি এক কোটি নিম্নআয়ের ফ্যামিলি কার্ডধারী পরিবারের কাছে মোট প্রায় ৭২ হাজার ৫৭৪ টন চিনি, এক লাখ ৮৭ হাজার ২২ টন মসুর ডাল, ১৮ কোটি ৬৫ লাখ লিটার ভোজ্য তেল, নয় হাজার ৪২৬ টন পেঁয়াজ, নয় হাজার ২৩০ টন ছোলা ও ৫৯০ টন খেজুর বিক্রি করে।

তবে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের মোট পণ্য বিক্রির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানান টিসিবির চেয়ারম্যান।

কয়েকটি পণ্য বিক্রির স্পট পরিদর্শনের সময় দেখা গিয়েছে, লাইনে ১০ মাস বয়সী শিশু সন্তান নিয়ে পণ্য কেনার জন্য দাঁড়িয়েছেন এক মা। আবার বেশি বয়সী মানুষও সেখানে আছেন। তাদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কেনার মতো অবস্থা নেই।

আরিফুল হাসান বলেন, 'আমাদের মধ্যে এখনো ওই সংস্কৃতিটা গড়ে উঠেনি। যদি একজন বয়স্ক মানুষ বা একজন নারী শিশু নিয়ে পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়ান তাহলে অন্যদের উচিত তাকে আগে পণ্য কেনার সুযোগ করে দেওয়া।'

তবে তিনি বলেন, 'আমরা এখন ওইরকম গুরুত্বারোপ করে পণ্য বিক্রি করতে পারব না। এটা করতে গেলে আলাদা ব্যবস্থাপনা লাগবে। সেটা এখন করা সম্ভব নয়।'

মানুষের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন হলেই এই সমস্যার সমাধান হবে বলে মন্তব্য করে টিসিবির চেয়ারম্যান।

Comments