ধানের ভরা মৌসুমেও চালের দাম ৫৫-৬০ টাকা

আমন ধানের ভরা মৌসুমেও বাজারে চালের দাম আগের মতো থাকায় হতাশ সাধারণ মানুষ। বেশি দামে চাল কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন খেটে খাওয়া দিনমজুররা।
চালের দাম
ধান শুকাতে ব্যস্ত কৃষক পরিবারের সদস্যরা। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

আমন ধানের ভরা মৌসুমেও বাজারে চালের দাম আগের মতো থাকায় হতাশ সাধারণ মানুষ। বেশি দামে চাল কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন খেটে খাওয়া দিনমজুররা।

বাজারে চালের দাম আদৌ কমবে কিনা তা নিয়ে তারা সন্দিহান। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি ঠিক রাখতে না পারায় অনেকে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। তাদের আয়ের অধিকাংশ খরচ করতে হচ্ছে চাল কিনতে।

বাজারে প্রতি কেজি চাল ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত ৪ মাস ধরে বাজারে চালের দাম প্রায় এরকমই আছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানায়, চলতি বছর লালমনিরহাটে আমন চাষ হয়েছে ৮৬ হাজার ৪৩৬ হেক্টর জমিতে। এতে চাল উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার ৬৩০ মেট্রিক টন।

কুড়িগ্রামে ধান চাষ হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে। এতে চাল উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন।

চালের দাম
ধান সিদ্ধ করছেন কৃষক পরিবারের সদস্যরা। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

লালমনিরহাট শহরের শহীদ শাহজাহান কলোনির রিকশাচালক মনতাজ আলী (৪৮) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভেবেছিলাম আমন মৌসুমে চালের দাম কমবে। কিন্তু, তা হয়নি। চালের দাম আগের মতোই থাকায় হতাশ।'

তিনি আরও বলেন, 'এখন যা আয় করছি তার অধিকাংশ চাল কিনতে খরচ হচ্ছে। একটু ভালো মানের চাল কিনতে গেলে প্রতি কেজিতে ৬০ টাকা খরচ হয়।'

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট গ্রামের দিনমজুর খেতাব আলী (৫৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর এ সময়ে প্রতি কেজি চাল ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকায় কিনেছিলাম। এ বছর তা কিনতে হচ্ছে ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকায়।'

'ধানের ভরা মৌসুমে কৃষকের ঘরে ঘরে ধান। তারপরও চালের দাম না কমায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বালারহাট গ্রামের কৃষক আক্কেল আলী (৬৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর ধানের ফলন আশানুরূপ হয়েছে। প্রতি মণ ধান ১ হাজার ১০০ টাকা দরে বিক্রি করতে পেরে খুশি। গত বছর এই সময়ে প্রতি মণ ধান ৯২০-৯৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়েছিল।'

'১২ বিঘা জমি থেকে ১৬৯ মন ধান পেয়েছি' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, '২৫ মণ ধান বিক্রি করেছি ১ হাজার ১০০ টাকা দরে। যদি ধানের দাম আরও বাড়ে তাই ধান বাড়িতে রেখেছি,' বলেন আক্কেল আলী।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বৈদ্যের বাজার গ্রামের কৃষক সুভাষ চন্দ্র বর্মণ (৬৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর ধান বিক্রি করার কয়েকদিন পরই ধানের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তাই এ বছর অপেক্ষা করছি।'

'১০ বিঘা জমি থেকে ১৪৬ মণ ধান পেয়েছি। ঘরে ভাতের অভাব নেই।'

লালমনিরহাট সদর উপজেলার দুড়াকুটি হাটের ধান ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর এই সময়ে কৃষকরা ১৮০০-২০০০ মণ ধান বিক্রির জন্য দুড়াকুটি হাটে নিয়ে আসতেন। এ বছর ২০০-২৫০ মণ ধান এসেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা কৃষকের কাছ থেকে বেশি দামে ধান কিনে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছি। ধানের দাম কমার সম্ভবনা নেই। তাই চালের দামও কমছে না।'

লালমনিরহাট শহরের গোশালা বাজারের চাল বিক্রেতা আফতাব উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মিলারদের কাছ থেকে বেশি দমে চাল কিনছি। তাই ক্রেতাদের কাছে বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। ধানের ভরা মৌসুমে চালের দাম না কমলে পরে দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছি।'

কুড়িগ্রাম শহরে চাল মিল মালিক রহিম বাদশা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কৃষকরা ধান বিক্রি করতে চাচ্ছেন না। বেশি দামে ধান কিনে চাল করতে হচ্ছে। বাজারে চালের দাম কমছে না। এ বছর চালের দাম কমার লক্ষণ নেই।'

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ হামিদুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর আমন রোপনের সময় বৃষ্টি কম হওয়ায় কৃষককে সেচের পানিতে চাষ করতে হয়েছিল। এতে ধানের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ধানের বর্তমান বাজার দরে কৃষকরা খুশি।'

Comments