ডলার সংকটে ফল আমদানি কমেছে ৩৮ শতাংশ, দাম প্রায় দ্বিগুণ

চলমান ডলার সংকটে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার বিষয়ে নানা বিধিনিষেধের কারণে কমে গেছে ফল আমদানি।
খুলনার একটি ফলের দোকান। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

চলমান ডলার সংকটে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার বিষয়ে নানা বিধিনিষেধের কারণে কমে গেছে ফল আমদানি।

এর ফলে আমদানিকৃত ফলের দাম বেড়ে গেছে এবং আমদানিকারকরা সতর্ক করেছেন যে এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সামনে সংকট তৈরি হতে পারে।

যদিও ঢাকার বড় বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, দোকানে পর্যাপ্ত ফলের মজুদ রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়কালে ১৫৭ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ফল আমদানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৩৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ কম।

নিয়মিত আমদানি করা ফলের মধ্যে আপেল আসে দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, চীন ও অস্ট্রেলিয়া থেকে; ডালিম আসে ভারত থেকে; নাশপাতি আসে পাকিস্তান থেকে; কমলা আসে মিশর থেকে; মাল্টা আসে চীন ও ভারত থেকে; এবং আঙ্গুর আসে ভারত ও পাকিস্তান থেকে।

ঢাকার কারওয়ান বাজারে গত বছর লাল আপেল বিক্রি হতো ২১০-২২০ টাকায় এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৩১০-৩২০ টাকায় এবং সবুজ আপেল ২৩০-২৪০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন দাম ২৮০-২৯০ টাকা।

১২০-১৪০ টাকার কমলার দাম বেড়ে হয়েছে ২০০-২২০ টাকা, ১২০-১৩০ টাকার মাল্টার দাম এখন ২২০-২৩০ টাকা।

একই ভাবে ৩০০-৩২০ টাকা কেজির ডালিমের দাম বেড়ে হয়েছে ৪০০-৪২০ টাকা, ২৮০-৩০০ টাকার আঙ্গুর হয়েছে ৪০০-৪৫০ টাকা।

আমদানিকারকরা জানান, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফলের সরবরাহ কমে যাওয়ায় সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত আমদানি করা ফলের চাহিদা বেশি থাকে।

আমদানিকারক সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় বেড়েছে। তাই এসব ফলের খুচরা দাম অন্তত ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে।'

'বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে মানুষ কেবল অতি প্রয়োজনীয় জিনিসই কিনছেন। এর কারণে ফলের বিক্রি কমেছে। বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীরা কম লাভ করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন', যোগ করেন তিনি।

ক্রমবর্ধমান আমদানি ব্যয়ের কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় ডলারের দাম গত ১ বছরে টাকার বিপরীতে প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ডলারের ঘাটতির কারণে ফল আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে ২০২২ সালের মে মাসের শেষ সপ্তাহে নিয়ন্ত্রক শুল্ক আরোপ করে।

পরবর্তীতে ফল আমদানিতে ঋণ সুবিধাও বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত বছরের ২৪ মে এনবিআর অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল পণ্যের সঙ্গে সব ধরনের ফল আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে নিয়ন্ত্রক শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করে।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক রাকিব হোসেন বলেন, 'দেশের ফলের চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ মেটানো যায় দেশীয় ফল দিয়ে এবং বাকিটা আমদানি করতে হয়।'

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে। এই ধাক্কা সামলাতে দরকার বিনিয়োগ ও ব্যাংক ঋণ। কিন্তু সার্বিকভাবে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়েছে।'

মিরপুর-১১ এর খুচরা বিক্রেতা মোহাম্মদ আকবর হোসেন বলেন, 'বিদেশি ফলের বিক্রি অর্ধেকে নেমে গেলেও দেশীয় ফলের বিক্রি কিছুটা বেড়েছে।'

ঢাকার সবচেয়ে বড় কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারের ফল ব্যবসায়ী মাহফুজুর রহমান বলেন, '১ বছর আগে দৈনিক বিক্রি করতাম ৪০ হাজার টাকা। সেটা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা।'

তিনি বলেন, 'জানি না এই সংকট কবে কাটবে। আয় কমে গেছে, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। দৈনন্দিন খরচ থেকে কত কিছু যে বাদ দিয়েছি। স্ত্রী-সন্তানদের অনেক চাওয়াই পূরণ করতে পারি না। স্ত্রীর সঙ্গে এসব নিয়ে প্রায়ই ঝগড়াও হয়।'

 

Comments