বিশ্বব্যাংকসহ ঋণদাতাদের শর্তে সরকারি ক্রয়ে বিপিপিএ গঠন

বাংলাদেশ সরকারি ক্রয়ের জন্য বছরে ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় করে, যার প্রায় ৬৫ শতাংশ ই-জিপি সিস্টেমের মাধ্যমে করা হয়।
বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ)

সরকারি খাতে ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এই খাতের দক্ষতা বাড়াতে একটি খসড়া আইন তৈরি করেছে সরকার।

খসড়া আইন অনুযায়ী, সরকারি ক্রয় নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) গঠন করা হবে। শিগগির এই খসড়া আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা গত সপ্তাহে নিশ্চিত করেছেন, আইনটির খসড়া ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

সরকার বিশ্বব্যাংকসহ কয়েকটি বহুপাক্ষিক ঋণদাতার শর্ত অনুসারে বিপিপিএ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর আগে বিশ্বব্যাংক ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) সিস্টেমের পূর্ণ বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছিল, যা টেন্ডার আহ্বান থেকে চুক্তি হওয়া পর্যন্ত ক্রয় সময়সীমা গড়ে ৭০ দিন থেকে কমিয়ে ৫০ দিনে আনবে।

তবে এর জন্য বিপিপিএ আইন প্রণয়ন করতে হবে বলে বিশ্বব্যাংক তাদের আসন্ন বাজেট সহায়তার শর্তে উল্লেখ করেছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকারি ক্রয়ের জন্য বছরে ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় করে, যার প্রায় ৬৫ শতাংশ ই-জিপি সিস্টেমের মাধ্যমে করা হয়।

বিপিপিএর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হবেন পরিকল্পনামন্ত্রী এবং ভাইস-চেয়ারম্যান হবেন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব।

ক্রয়ের প্রয়োজনীয়তা ও পণ্যের প্রকৃতি বিবেচনায় আইএমইডি, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ৪টি ক্রয় কার্যালয়ের প্রধানদের নিয়ে গঠিত হবে পরিচালনা পর্ষদ।

বিগত অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ক্রয় কার্যালয়ের প্রধান হবেন ২ জন পর্ষদ সদস্য। সকল সদস্য অন্তত যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা হবেন।

সরকারি ক্রয়ে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা বা ক্রয় বিধি ও প্রবিধানের ওপর ব্যাপক জ্ঞান বিবেচনা করে বেসরকারি খাত থেকে ২ জন সদস্যকে এই পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার বিপিপিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাও পর্ষদের সদস্য হবেন।

পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৩ বছরের এবং সরকার প্রয়োজনে পর্ষদের আকার বাড়াতে বা কমাতে পারবে।

বিপিপিএ সঠিকভাবে চালানোর জন্য পর্ষদ ক্রয় কার্যক্রম, প্রবিধান নীতি এবং একটি আইনি কাঠামো তৈরি করবে।

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, বিপিপিএকে সব ক্রয় কার্যক্রমের ওপর একটি বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে এবং কীভাবে এই বিষয়ে দক্ষতা বাড়ানো যায়, তার সুপারিশসহ সরকারের কাছে জমা দিতে হবে।

এই কর্তৃপক্ষ সরকারি ক্রয়ে নিষিদ্ধ ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করবে, আপডেট করবে এবং রক্ষণাবেক্ষণ করবে। এই তালিকাটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

বিপিপিএর প্রধান দায়িত্ব হবে ই-জিপি সিস্টেমকে সঠিকভাবে চালানো এবং এর সম্পর্কিত ডেটা সংরক্ষণ করা।

বিশ্বব্যাংক ২০০৮ সাল থেকে ই-জিপি সিস্টেমের জন্য আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে আসছে।

২০২১ সালে বিশ্বব্যাংকের ৪০ মিলিয়ন ডলারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তার উদ্দেশ্য ছিল ই-জিপি কভারেজকে ১০০ শতাংশে উন্নীত করা।

ই-জিপি ব্যবহারের ফলে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে ক্রয় প্রক্রিয়ায় প্রায় ৭ শতাংশ খরচ কমেছে।

এই হিসাবে বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার বেঁচে গেছে।

এ ছাড়া, সব ধরনের দরপত্রের জন্য ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সময় লাগতে গড়ে ১০০ দিন, যা ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৭ দিনে নেমেছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) প্রধানত ই-জিপি প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল।

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur Nuclear Power Plant: First unit to start production in December

Project deadline extended by 2 years, but authorities hope to complete grid line work before scheduled commissioning

10h ago