শীতের জ্যাকেট উৎপাদনের নতুন হাব বাংলাদেশ

বাংলাদেশ, জ্যাকেট, বিজিএমই, রপ্তানি,
ছবি: স্টার

বাংলাদেশ ধীরে ধীরে শীতকালীন জ্যাকেটের একটি প্রধান উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। কারণ উচ্চ উৎপাদন ব্যয় এবং দক্ষ শ্রমিকের অভাবে মূলত চীন থেকে কাজের অর্ডারগুলো স্থানান্তরিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের জন্য শীতকালীন জ্যাকেট অপেক্ষাকৃত নতুন একটি রপ্তানি খাত। স্থানীয় পোশাক নির্মাতারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ধরণের মূল্য সংযোজন পোশাক আইটেম দিয়ে তাদের পণ্যে বৈচিত্র্য আনছে।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও চীন থেকে কাজের অর্ডার স্থানান্তর এবং মূল্য সংযোজন পোশাকের রপ্তানি বৃদ্ধি- এই দুটি কারণে বাংলাদেশের পোশাকের চালান বেড়েছে।

উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, প্রায় ৫০টি স্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক বর্তমানে শীতকালীন জ্যাকেট তৈরি করছে। যাম মূল্য ৩০ ডলার থেকে ৫০ ডলারের মধ্যে। ৫ বছর আগেও এটি শোনা যায়নি, কারণ দেশের পোশাক রপ্তানি মূলত বেসিক টি-শার্ট, ওভেন শার্ট এবং ট্রাউজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

এই শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, চীন ছাড়াও ভিয়েতনাম, ভারত, মিয়ানমার, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান থেকেও শীতকালীন জ্যাকেটের অর্ডার স্থানান্তরিত হচ্ছে।

এছাড়া, বাংলাদেশে তৈরি শীতকালীন জ্যাকেট ইউরোপের কয়েকটি স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ ছাড়াও রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় পাঠানো হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউরোপের বাজারে শীর্ষ খুচরা বিক্রেতার এক কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা স্থানীয় কিছু কারখানা থেকে শীতকালীন জ্যাকেট সংগ্রহের পরিমাণ বাড়িয়েছি। কারণ, তারা ইতোমধ্যে উৎপাদন ক্ষমতা উন্নত করেছে এবং প্রতিযোগিতামূলক দামে সরবরাহ করেছে।

শীর্ষস্থানীয় জ্যাকেট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান স্নোটেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম খালেদ বলেন, আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডের কাছ থেকে প্রচুর কাজের অর্ডার পাচ্ছে তার প্রতিষ্ঠান।

তিনি আরও বলেন, স্নোটেক্স বর্তমানে প্রতি মাসে ২৫ মিলিয়ন ডলার থেকে ৩০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের জ্যাকেট রপ্তানির সক্ষমতা রাখে।

একইভাবে পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, তার প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে ১০ ডলার মূল্যের শীতকালীন জ্যাকেট রপ্তানি করে থাকে।

শীতকালীন জ্যাকেট টিম গ্রুপের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন এবং এমনকি কিছু স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ, তাইওয়ান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ায় বাল্ক চালান পৌঁছেছে। আগে কোম্পানিটির রপ্তানি ওভেন এবং অন্যান্য সেলাই পণ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

ফকির অ্যাপারেলস লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার বখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিযোগিতামূলক দামে শীতকালীন জ্যাকেট সরবরাহ করতে পারায় দেশীয় নির্মাতারা বিশ্বব্যাপী খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছেন।

তিনি জানান, এই চাহিদার কথা বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানটি ৪ বছর আগে নারায়ণগঞ্জে একটি নতুন জ্যাকেট উৎপাদন ইউনিট স্থাপন করে। এই বাড়তি সক্ষমতা নিয়ে ফকির অ্যাপারেলস প্রতি মাসে ১ লাখ ৫০ হাজার জ্যাকেট বিদেশে পাঠাতে পারবে।

তিনি আরও জানান, এসব জ্যাকেটের দাম অন্যান্য গার্মেন্টস আইটেমের তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশি। ক্রেতারা সাধারণত প্রতি পিস জ্যাকেটের জন্য ৩০ থেকে ৫০ ডলারের মধ্যে দাম দেন।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বিভিন্ন কারণে ভিয়েতনামের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা যে পরিমাণ আয় করেন তার প্রায় অর্ধেক পান আমাদের স্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা। এর মানে ভিয়েতনামে তৈরি একটি টি-শার্টের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রেতারা ৫ ডলার দিলেও একই পণ্যটি বাংলাদেশে তৈরি হলে ২.৫ ডলার দেন। বাংলাদেশি গার্মেন্টস পণ্যের দাম কম হওয়ার পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে মৌলিক পণ্যের উৎপাদন।

তিনি জানান, তবে হাই-এন্ড ভ্যালু-অ্যাডেড পোশাকের উৎপাদনের সাম্প্রতিক বৃদ্ধি এই ব্যবধান কমিয়ে দিচ্ছে। কারণ বৈশ্বিক ক্রেতারা এ ধরনের পণ্যের জন্য ভালো দাম দিচ্ছেন।

বিজিএমইএ সভাপতি আরও জানান, স্থানীয় পোশাক প্রস্তুতকারকরা ভ্যালু-অ্যাডেড পণ্য সরবরাহ করে আরও ভাল দাম অর্জনের লক্ষ্য রাখে।

সাম্প্রতিক সময়ে পোশাকের চালান থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। আয় এখন ভলিউম ভিত্তিক নয় বরং প্রধানত মূল্যভিত্তিক, কারণ অনেক স্থানীয় রপ্তানিকারক উচ্চ মানের পণ্য উৎপাদন করছে। কঠিন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতেও পোশাক রপ্তানিতে দেশের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির এটি একটি বড় কারণ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে পোশাক রপ্তানি ১০ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩৬ কোটি ডলারে।

Comments

The Daily Star  | English
Amir Khasru Mahmud Chowdhury

People didn't sacrifice to give responsibilities to any 'Great Man': Amir Khasru

"Whichever government is elected by votes will be accountable to the people"

1h ago