মোটরসাইকেলের বিক্রি ২ মাসে কমেছে ৩০ শতাংশ

স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে গড়ে ৫০ হাজার ইউনিট মোটরসাইকেল বিক্রি হতো, যা গত ২ মাসে নেমে এসেছে ৩৫ হাজারে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ এবং মোটরসাইকেল কেনার আগে বাধ্যতামূলক ড্রাইভিং লাইসেন্স নিশ্চিত করার নীতির কারণে গত ২ মাসে বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের বিক্রি ৩০ শতাংশ কমেছে।
রাজধানীর একটি মোটরসাইকেলের শোরুম। স্টার ফাইল ছবি

উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ এবং মোটরসাইকেল কেনার আগে বাধ্যতামূলক ড্রাইভিং লাইসেন্স নিশ্চিত করার নীতির কারণে গত ২ মাসে বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের বিক্রি ৩০ শতাংশ কমেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে গড়ে ৫০ হাজার ইউনিট মোটরসাইকেল বিক্রি হতো, যা গত ২ মাসে নেমে এসেছে ৩৫ হাজারে।

একইভাবে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষে (বিআরটিএ) মোটরসাইকেল নিবন্ধন কমেছে ২৭ শতাংশ। ২০২২ সালে প্রতি মাসে গড়ে মোটরসাইকেল নিবন্ধন হতো ৪২ হাজার ২৪২টি, যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৫০১টিতে।

জাপানি ব্র্যান্ড ইয়ামাহার স্থানীয় পরিবেশক এসিআই মোটরসের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, 'ডলারের দাম বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক সংকট ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে মোটরসাইকেলের বিক্রি ৩০ শতাংশ কমেছে।'

গত কয়েক বছরে যানবাহন, বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলারের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির ফলে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে৷ এর ফলে মোটরসাইকেল নিয়ে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করছে সরকার।

খসড়া অনুসারে, শহরের ভেতরে মোটরসাইকেলের গতিসীমা হবে ৩০ কিলোমিটার এবং ১২৬ সিসির নিচের মোটরসাইকেলগুলো মহাসড়কে চলতে পারবে না। এ ছাড়া, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কাউকে মোটরসাইকেল কিনতে দেওয়া হবে না।

বাংলাদেশে মোটরসাইকেল নির্মাতা ও বিক্রেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে এই খসড়ার বিরোধিতা করেছে।

সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, এই খসড়া মোটরসাইকেল বিক্রির ওপর প্রভাব ফেলেছে।

বাংলাদেশে গত ১ বছর ধরে উচ্চ ভোক্তা মূল্যের কারণে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের উচ্চ মূল্যের কারণে আগস্টে মূল্যস্ফীতি পৌঁছে গিয়েছিল ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে, ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে।

মার্কিন ডলারের দাম উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির কারণেও মোটরসাইকেলের দাম বেড়েছে। গত ১ বছরে টাকার বিপরীতে ডলার প্রায় ২৫ শতাংশ শক্তিশালী হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশে আমদানি ব্যয় বেড়েছে।

সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, হাই-এন্ড মোটরসাইকেলের বিক্রি অবশ্য একই রয়ে গেছে।

ভারতীয় মোটরসাইকেল জায়ান্ট বাজাজের পরিবেশক উত্তরা মোটরস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দিলীপ ব্যানার্জি জানান, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তাদের বিক্রি প্রতি মাসে ১৬ হাজার থেকে কমে সাড়ে ১৪ হাজার ইউনিট হয়েছে।

কোম্পানিটি স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে প্রায় ২২ হাজার ইউনিট বিক্রি করে।

দিলীপ ব্যানার্জি বলেন, 'মানুষ বর্তমানে মোটরসাইকেলকে আর অপরিহার্য পণ্য হিসেবে বিবেচনা করছেন না।'

জাপানের হোন্ডা মোটর কোম্পানি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ স্টিল ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগ বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের সিইও শাহ মুহাম্মদ আশেকুর রহমান জানান, সরকারের খসড়া নীতি বাজারে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছে। শহরের ভেতরে মোটরসাইকেলের যে গতিসীমার কথা বলা হয়েছে তা নিয়ে মানুষ বিভ্রান্ত।

গত ২ মাসে হোন্ডা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের বিক্রি ৪২ শতাংশ কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে মোটরসাইকেলের দাম ১৮ শতাংশ বেড়েছে।'

এই শিল্পের অভ্যন্তরীণরা জানান, টিভিএস, হোন্ডা, রানার ও অন্যান্য ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের বিক্রি ২০ থেকে ৪২ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

ভারতের টিভিএস মোটরসের স্থানীয় পরিবেশক টিভিএস অটো বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও বিপ্লব কুমার রায় জানান, বিক্রি কমে যাওয়ায় গত ৮ মাস ধরে দেশের মোটরসাইকেল শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তাদের বিক্রি প্রায় ৪০ শতাংশ কমে প্রতি মাসে ১০ হাজার ইউনিট থেকে ৬ হাজার ইউনিটে নেমে এসেছে। তারা ২০২২ সালে প্রতি মাসে ৮ হাজার ইউনিট বিক্রি করেছিল।

বিপ্লব কুমার রায় বলেন, 'উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে বেশিরভাগ পরিবারের কাছে মোটরসাইকেল বিলাসবহুল পণ্য হয়ে উঠেছে।'

সুব্রত রঞ্জন দাস সতর্ক করে বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে স্থিতিশীলতা না ফেরা পর্যন্ত মোটরসাইকেলের বাজার স্বাভাবিক হবে না।

তিনি বলেন, বরং ডলারের দাম আরও বাড়লে দাম বাড়তে পারে।

দিলীপ ব্যানার্জিও মনে করেন না যে এ বছর মোটরসাইকেলের বাজারে বিক্রির গতি ফিরবে। কারণ যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় অর্থনীতি স্থিতিশীল হতে সময় লাগবে।

Comments

The Daily Star  | English

Turning the tide: Critical reforms to correct 15 years of misrule

As Bangladesh enters a new era following the ouster of the Sheikh Hasina-led Awami League government, which ruled over the nation for 15 years and is responsible for countless financial wrongdoings, the need of the hour is to reform the overall system of governance.

16h ago