সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন ব্যয় কমেছে

গত অর্থবছরে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন ব্যয় কমেছে

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে সরকার উন্নয়ন বাজেটের ৮৪ দশমিক ১৬ শতাংশ ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছে। যা সাম্প্রতিক দশকের গড়ের চেয়ে অনেক কম এবং বার্ষিক উন্নয়ন ব্যয় কমেছে।

সরকারের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ব্যয় আগের বছরের তুলনায় ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ কমেছে।

মোট সংশোধিত এডিপি ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা থেকে মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ব্যয় করেছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে যা ছিল ২ লাখ ৩ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা।

২০২০ ও ২১ অর্থবছরে করোনা মহামারি অর্থনীতিতে মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলেছিল, তখনকার উন্নয়ন ব্যয় বাদ দেওয়া হলে ২০০৭-০৮ অর্থবছরের পর বিদায়ী অর্থবছরের ব্যয় হলো সর্বনিম্ন।

এডিপির ব্যয় সাধারণত ৯০ শতাংশের কাছাকাছি থাকে।

গত অর্থবছরে উন্নয়ন ব্যয় কম প্রত্যাশিত ছিল। কারণ, মার্কিন ডলার সংকট ও প্রত্যাশার চেয়ে রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় সরকার কৃচ্ছ্রতাসাধন করেছে, প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিয়েছে ও বরাদ্দ কমিয়েছে।

তবে, এডিপির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতার জন্য প্রায়ই মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অদক্ষতাকে দায়ী করা হয়।

বিদায়ী অর্থবছরে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো ব্যয় করেছে ১ লাখ ২৫ হাজার ১৬২ কোটি টাকা, যা সরকারের নিজস্ব কোষাগার থেকে বরাদ্দ ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬ কোটি টাকার ৮১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এটি অন্তত ১৯ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যাওয়ায় সরকার দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক ঋণদাতাদের পরিচালিত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন দ্রুত করার পরিকল্পনা করেছিল। তারপরও বৈদেশিক ঋণের ব্যবহার ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ পয়েন্ট কমে ৯০ দশমিক ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে।

এডিপির ব্যয় কমে যাওয়া প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, 'প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি সরকারের কৃচ্ছ্রতাসাধনের প্রভাব।'

কৃচ্ছ্রতামূলক উদ্যোগগুলো যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্নও তোলেন এই অর্থনীতিবিদ।

তিনি বলেন, 'সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে চাহিদা নিয়ন্ত্রণে রেখে অথবা ধীরগতিতে ডলার সংকট মোকাবিলা করাই ছিল কৃচ্ছ্রতাসাধনের উদ্দেশ্য। এটি সরকারি প্রকল্পের জন্য প্রযোজ্য ছিল, কিন্তু বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর জন্য নয়।'

তিনি জানান, সংশোধিত এডিপিতে গত অর্থবছরে বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর বাজেট মূল প্রকল্প থেকে কমিয়ে আনা হয়েছে। তারপরও সরকার লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারেনি।

'এটি উদ্বেগের বিষয়,' বলেন হোসেন।

তিনি বলেন, 'সুতরাং এটি স্পষ্ট নয় যে, সামগ্রিক বাস্তবায়নের হার কৃচ্ছ্রতামূলক উদ্যোগের ফল নাকি বাই ডিফল্ট হিসেবে ঘটেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'কম অগ্রাধিকার পাওয়া প্রকল্পগুলোর ধীর বাস্তবায়নের কারণে যদি এডিপি বাস্তবায়নের হার কম হয়, তাহলে বলা যেতে পারে যে এটি ব্যয় কমানোর উদ্যোগের অংশ।'

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, যখন বিদেশি অর্থায়নের প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের হার কমে যায়, তখন অভ্যন্তরীণ অর্থায়নের ব্যবহারও কমে যায়। কারণ, কোনো প্রকল্পই পুরোপুরিভাবে বাহ্যিক সম্পদ দিয়ে অর্থায়ন করা হয় না।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন জানান, এডিপি বাস্তবায়নের হার কমে যাওয়া বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর কম সক্ষমতার প্রতিফলন।

তিনি বলের, 'আমরা যখন অর্থনৈতিক চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, তখন উচ্চ এডিপি বাস্তবায়ন আশা করেছিলাম। কারণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আয় বৃদ্ধিতে সরকারি ব্যয় প্রয়োজন। বিদেশি সহায়তার প্রকল্পগুলোর ধীর গতির মানে হচ্ছে বিদেশি ঋণের বিতরণ কমে যাওয়া। যা মোটেও উৎসাহব্যঞ্জক নয়।'

উন্নয়ন বাজেটের সর্বোচ্চ ১৫টি খাতের মধ্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ গত অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৪ লাখ ১৭ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা ব্যয় করেছে, যা মোট বরাদ্দের ১০৩ শতাংশ।

৯৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সেতু বিভাগ এবং ৯৩ শতাংশ ব্যয় নিয়ে তৃতীয় স্থানে বিদ্যুৎ বিভাগ। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ছিল সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যার। এর ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা, যা বাজেটের ৬৮ শতাংশ। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় যথাক্রমে ৭১ শতাংশ ও ৭৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ ব্যয় করেছে।

Comments

The Daily Star  | English

Why landscape-based knowledge is critical for Bangladesh

How will we build the country without landscaping knowledge?

16h ago