কৃষি মার্কেটে আগুন

ভরসা এখন আধপোড়া পণ্য

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে গেছে অনেক ব্যবসায়ীর স্বপ্ন। তাই আধপোড়া পণ্য বিক্রি করে কিছু নগদ অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছেন তারা।
কৃষি মার্কেট, কৃষি মার্কেটে আগুন, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, মোহাম্মদপুর,
আধপোড়া সাবান, ডিটারজেন্টের প্যাকেট ও অন্যান্য পরিষ্কারক পণ্য বিক্রির চেষ্টা। ছবি: মো. আসাদুজ্জামান/স্টার

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে গেছে অনেক ব্যবসায়ীর স্বপ্ন। তাই আধপোড়া পণ্য বিক্রি করে কিছু নগদ অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছেন তারা। গতকাল কৃষি মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, রিকশা-ভ্যানে করে দুই যুবক কয়েকটি কনটেইনারে আধপোড়া সাবান, ডিটারজেন্টের প্যাকেট ও অন্যান্য পরিষ্কারক পণ্য বিক্রির চেষ্টা করছেন।

এর আগে, বৃহস্পতিবার আগুনে পুড়ে যায় মার্কেটটি। এ ঘটনায় ৩০০টিরও বেশি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাদের একটি হলো সততা এন্টারপ্রাইজ। পুড়ে যাওয়া ওই দোকান থেকে আধপোড়া কিছু পণ্য উদ্ধার করে বিক্রির চেষ্টা করছিলেন ওই দুই কর্মী। তাদের উদ্দেশ্য ছিল কিছু নগদ অর্থ সংগ্রহ করা, তাই তারা বাজার দরের চেয়ে অনেক কম দামে এগুলো বিক্রির চেষ্টা করছিলেন।

জানা গেছে, ওই দুই যুবক সততা এন্টারপ্রাইজে কাজ করতেন। আগুনে সেখানের প্রায় ৮০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। তারা সেখান থেকে কিছু অর্ধপোড়া পণ্য উদ্ধার করে মালিক মোহাম্মদ ইব্রাহিমের পাশে দাঁড়াতে চাইছিলেন।

ভরসা এখন আধপোড়া পণ্য
আগুনে পুড়ে যাওয়া চাল। ছবি: মো. আসাদুজ্জামান/স্টার

দোকান মালিক মোহাম্মদ ইব্রাহিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা আয়ের একমাত্র উৎস হারিয়েছি ফেলেছি। আগুন আমাদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। এটা আমাদের জন্য সান্ত্বনা মাত্র। আমরা জানি না, এখন কীভাবে জীবন চলবে।'

যখন ইব্রাহিম ও তার কর্মীরা এভাবে অর্ধপোড়া পণ্য বিক্রির চেষ্টা করছিলেন, তখন অন্যান্য দোকানের মালিকরাও ছাইয়ের মধ্য থেকে অর্ধপোড়া জামাকাপড়সহ মুদি পণ্য থেকে শুরু করে বাড়ি ও প্রসাধনী পণ্য উদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন।

এই অগ্নিকাণ্ডে এখনো ক্ষয়ক্ষতির কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। তবে, মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান জানান, আগুনে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বাজারে মতিউরের দুটি গয়নার দোকান ও একটি মুদি দোকান ছিল। সেগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে ফোনে জানান তিনি।

ভরসা এখন আধপোড়া পণ্য
ধ্বংসস্তূপের পাশে সবজির দোকান দিয়েছেন এক ব্যবসায়ী। ছবি: মো. আসাদুজ্জামান/স্টার

একটু দূরে দাঁড়িয়ে পাঁচ বস্তা অর্ধপোড়া চাল বিক্রি করছিলেন মোহাম্মদ মাহবুব। আগুনে তার ভাই ইয়ামিনের চালের দোকান পুড়ে গেছে। ইয়ামিন তখন তার দোকান পরিষ্কারে ব্যস্ত ছিলেন।

মোহাম্মদ মাহবুব ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতি বস্তা চালের বর্তমান বাজার মূল্য আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। কিন্তু, আমি প্রতি বস্তা অর্ধপোড়া চাল বিক্রি করছি মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। এগুলো মানুষের খাওয়ার উপযুক্ত নয়। এটি হাঁস-মুরগি বা মাছের খামারে ব্যবহার করা যেতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রায় ১৪০-১৪৫ বস্তা সুগন্ধি চাল নষ্ট হওয়ায় ইয়ামিনের প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।'

গতকাল কিছু সবজির দোকান ও চাল ব্যবসায়ীকে নতুন পণ্য নিয়ে দোকান বসাতে দেখা গেছে।

ভরসা এখন আধপোড়া পণ্য
আগুনে পুড়ে যাওয়া চালের বস্তা। ছবি: মো. আসাদুজ্জামান/স্টার

তাদের একজন সবজি ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'আগুনে আমি সব হারিয়েছি। পরে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আজ নতুন করে দোকান খুলেছি। আমরা এখনো সিটি করপোরেশন বা বাজার ব্যবস্থাপনার কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না।'

তিনি আরও বলেন, 'ব্যবসা না করলে কীভাবে বেঁচে থাকব।'

সেখানে ঘুরে দেখা গেছে, পোশাক, জুতা, প্লাস্টিক পণ্য এবং গয়নাসহ বাজারের পশ্চিম পাশের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী দোকান থেকে ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে হিমশিম খাচ্ছেন।

মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ ওয়াহিদুল হক জানান, 'পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গতকাল বাজার পরিদর্শন করেছেন। তারা ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা সিটি করপোরেশনের কাছে যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছি।'

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পরিদর্শক ইফতেখারুল ইসলাম মুজিব বলেন, গতকাল থেকে তারা ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছেন।

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের বাজারের বাইরে থেকে বর্জ্য নিতে বলা হয়েছিল। আমার ব্যবসায়ীদের নিজদের দোকান পরিষ্কার করতে ও ধ্বংসাবশেষ বাইরে আনার অনুরোধ করেছিলাম।'

Comments