ঋণ ও বিনিময় হার এখনো বাজারভিত্তিক নয়: আইএমএফ

আইএমএফ প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বিনিময় হার যদি পুরোপুরি খোলা বাজারের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে এবং অর্থনীতির অন্যান্য খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদের হার নির্ধারণে গত জুনে একটি নতুন ফর্মুলা চালু করেছে এবং সম্প্রতি একক বিনিময় হার ঠিক করেছে। কিন্তু, এই দুটি এখনো বাজারভিত্তিক নয়।

সফররত আইএমএফ মিশন গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছে, বিনিময় ও সুদের হার এখনো নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

ওই বৈঠক সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

আইএমএফ মিশন প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রতিনিধিদল। মূলত বাংলাদেশ ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্ত পূরণ করেছে কিনা তা পর্যালোচনা করছে আইএমএফ।

দুই সপ্তাহের সফরে আসা প্রতিনিধিদলটি ২০২৩ সালের প্রথমার্ধের জন্য নির্ধারিত শর্ত অর্জনের পারফরম্যান্স পর্যালোচনা করবে।

দলটি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মুক্তবাজার দ্বারা নির্ধারিত হারের জন্য নীতিগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, নতুন সুদের হারের ফর্মুলা 'প্রায়' বাজারভিত্তিক।

এর আগে, ২০২০ সালের এপ্রিলে প্রবর্তিত ৯ শতাংশ সুদ হারের সীমা নির্ধারণ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে, চলতি বছরের জুনে কার প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। কারণ এটি আইএমএফের ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সুদের হার ফর্মুলা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো 'ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের চলমান গড় হারের' ওপর ৩ শতাংশ মার্জিন আরোপ করতে পারবে, যা স্মার্ট নামে পরিচিত।

সেপ্টেম্বরের স্মার্ট ৭ দশমিক ২০ শতাংশ, যা অক্টোবরে প্রযোজ্য হবে। আগস্টে ছিল ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।

আইএমএফ মিশন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বলেন, অক্টোবরে সর্বোচ্চ ঋণের হার হবে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ, প্রকৃতপক্ষে এটিও একটি সুদের সীমা।

অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বছরের জুনে একটি নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করে সমন্বিত ও  বাজারভিত্তিক একক বিনিময় হার ব্যবস্থা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়।

এটি খোলা বাজারকে টাকা ও মার্কিন ডলার বা অন্য কোনো বিদেশি মুদ্রার মধ্যে বিনিময় হার নির্ধারণের সুযোগ দেবে।

এরপর গত ৩১ আগস্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেডা) একক বিনিময় হার নির্ধারণ করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনানুষ্ঠানিক নির্দেশনা অনুযায়ী গত বছর থেকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার ক্রমাগত অবমূল্যায়ন করে আসছিল এই দুই সংগঠন।

আইএমএফ প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বিনিময় হার যদি পুরোপুরি খোলা বাজারের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে এবং অর্থনীতির অন্যান্য খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

তারা আরও বলেন, এছাড়া পরবর্তীতে এই হার কমিয়ে আনা কঠিন হবে, এ কারণেই বাফেডা ও এবিবি পর্যায়ক্রমে টাকার অবমূল্যায়ন করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, আইএমএফ প্রতিনিধিদল খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা ও খেলাপি ঋণের পরিস্থিতি নিয়েও জানতে চেয়েছে।

আইএমএফ মিশন নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে চেয়েছিল, কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বর্তমানে মরক্কোতে আইএমএফের বার্ষিক বৈঠকে আছেন। তাই তিনি ফিরে না আসা পর্যন্ত এটি পিছিয়ে দেওয়া হয়।

এছাড়া, পেট্রোবাংলা ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) পরিদর্শনের সময় পৃথক বৈঠক করেছে আইএমএফের প্রতিনিধিদল।

বিপিসির এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রতিনিধিদল 'ডায়নামিক ফুয়েল প্রাইসিং ফর্মুলা'র অগ্রগতি জানতে চেয়েছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা তাদের বলেছি- জ্বালানি মূল্য নির্ধারণে একটি গতিশীল ফর্মুলা চূড়ান্ত করেছি এবং মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখন সরকার সিদ্ধান্ত নেবে কখন তারা এটি বাস্তবায়ন করবে।'

আইএমএফ মিশন সংস্থাগুলোর অপারেশনাল ও আর্থিক কর্মক্ষমতা এবং গ্যাস ও জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের পরিস্থিতি নিয়েও জানতে চেয়েছিল।

পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা বলেছি- সরকার গ্যাস খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে বলে এখনই গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।'

Comments