১ বছরে সরকারের সুদ পরিশোধে খরচ বেড়েছে ২২ শতাংশ

সরকারের সুদের খরচ
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

মূলত ঋণ বেশি হওয়ায় গত অর্থবছরে সুদ পরিশোধে সরকারের খরচ এর আগের বছরের তুলনায় ২২ দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়ে ৯২ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারের সুদের খরচ ছিল ৭৫ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ত্রৈমাসিক ঋণ বুলেটিনের তথ্য অনুসারে, সরকারি সিকিউরিটিজের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় খরচ বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি।

২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে সরকারের মোট বকেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ছিল নয় লাখ ৪৪ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা ও বকেয়া বৈদেশিক ঋণ ছয় লাখ ৭২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা।

এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের বিপরীতে ৮৩ হাজার ৮৬ কোটি টাকা ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে বাকি নয় হাজার ৪৫২ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রগুলোর মধ্যে ব্যাংকিং খাতের ঋণের বিপরীতে সুদ বাবদ ৩০ হাজার ২৯০ কোটি টাকা, জাতীয় সঞ্চয়পত্রের (এনএসসি) বিপরীতে ৪৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ও প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে ঋণ বাবদ সাত হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সরকার।

ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে সরকার মূলত ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকটের কারণে সম্প্রতি সরকারি সিকিউরিটিজের সুদ বেড়েছে।

গত বছরের জানুয়ারি থেকে রিজার্ভ প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে। ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমেছে ২৮ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে চলমান অস্থিতিশীলতাও তারল্য ঘাটতির আরেকটি প্রধান কারণ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপি-ঋণের হারের অনুপাত ছিল ৩৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ৫৫ শতাংশের সীমারেখার তুলনায় অনেক কম।

বুলেটিনে আরও বলা হয়, ব্যাংক থেকে ঋণ ও ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ঋণের মধ্যে ব্যবধান কমেছে। তবে ঋণ-জিডিপি অনুপাত ক্রমাগত বাড়ছে। ২০২১-২২ সালে তা ছিল ৩৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'সরকারের সুদের খরচ তিন কারণে বেড়েছে। এগুলো হলো—ক্রমবর্ধমান সুদের হার, টাকার ক্রমাগত অবমূল্যায়ন ও ঋণ বৃদ্ধি।'

'মোট ঋণ মোট রাজস্বের চার গুণ' উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, 'রাজস্ব প্রবৃদ্ধির তুলনায় সরকারের সুদের খরচ দ্রুত বাড়ছে। এটি একটি চ্যালেঞ্জ।'

২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে এক লাখ ৭২ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এটি আগের বছরের একই সময়ের এক লাখ ৭৯ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা থেকে চার দশমিক শূন্য চার শতাংশ কম।

এর মধ্যে স্থানীয় উৎস থেকে এসেছে এক লাখ এক হাজার ৭১৪ কোটি টাকা ও বিদেশি উৎস থেকে এসেছে ৭০ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা।

তবে জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ঋণ নেওয়া কমেছে। নিট ঋণ কমে হয়েছে তিন হাজার ২৯৬ কোটি টাকা।

বুলেটিনে আরও বলা হয়, অনলাইন ইস্যু প্রক্রিয়া, যৌক্তিক বিনিয়োগসীমা ও একাধিক সুদের হার প্রবর্তনের মতো সংস্কারের উদ্যোগ সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমাতে অবদান রেখেছে।

সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে সরকার বার্ষিক ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

এতে আরও বলা হয়, গত অর্থবছরে সরকারের বৈদেশিক ঋণ লক্ষ্যমাত্রা ৮৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকার তুলনায় ১৫ দশমিক ৮০ শতাংশ কম।

ব্যাংকিং খাতে সরকারের পাওনা পাঁচ লাখ ৭ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা এবং নন-ব্যাংকিং খাতে চার লাখ ৩৬ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা।

Comments

The Daily Star  | English
US election outcome’s likely impact on the Russia-Ukraine war

US election outcome’s likely impact on the Russia-Ukraine war

The endgame of the Ukraine war remains uncertain with US policy likely to be influenced by the outcome of the US election.

3h ago