ফোরজি গ্রাহক ১০ কোটির বেশি, এশিয়া প্রশান্ত অঞ্চলে পিছিয়ে বাংলাদেশ
![ফোরজি গ্রাহক ১০ কোটির বেশি, এশিয়া প্রশান্ত অঞ্চলে পিছিয়ে বাংলাদেশ বাংলাদেশে ফোরজি](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2023/12/13/phorji-2.jpg?itok=v4KbsAqd×tamp=1702472074)
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ফোরজির পরিধি ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। গত অক্টোবরে দেশে ফোরজি গ্রাহকের সংখ্যা ১০ কোটির মাইলফলক পার করেছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুসারে, গত অক্টোবর পর্যন্ত মোবাইল গ্রাহক ছিল ১৮ কোটি ৯৬ লাখ। তাদের মধ্যে ১০ কোটি পাঁচ লাখ গ্রাহক ফোরজি ব্যবহার করছেন।
অর্থাৎ, প্রায় ৫৩ শতাংশ গ্রাহক এখন ফোরজি সিম ব্যবহার করছেন। এটি উচ্চগতির মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবার জন্য ইতিবাচক।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন—ফোরজি অবকাঠামো সম্প্রসারণ, টেলিকম অপারেটরদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য সংযোগের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে এই প্রবৃদ্ধি ঘটেছে।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিটিআরসি মোবাইল ফোন অপারেটরদের ফোরজি লাইসেন্স দেয়। এটি বাংলাদেশকে চতুর্থ প্রজন্মের ডেটা সেবার যুগে নিয়ে যায়। ওই বছরের জুনে ফোরজি গ্রাহকের সংখ্যা ৫০ লাখে পৌঁছায়।
২০২০ সালের একই মাসে তিন কোটি ৫৩ লাখে পৌঁছানোর আগের বছরের জুনে ফোরজি গ্রাহক বেড়ে দাঁড়ায় এক কোটি ৮৭ লাখ।
২০২১ সালের জুনে দেশে পাঁচ কোটি ৯২ লাখ, ২০২২ সালের জুনে সাত কোটি ৯১ লাখ ও ২০২৩ সালের জুনে নয় কোটি ৩৯ লাখ ফোরজি গ্রাহক ছিল।
কিন্তু এসব অগ্রগতি সত্ত্বেও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে। সেসব দেশে আরও দ্রুতগতির ও বিস্তৃত ফোরজি নেটওয়ার্ক আছে।
জিএসএমএর দ্য মোবাইল ইকোনমি এশিয়া প্যাসিফিক ২০২৩-র তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে ভারতে ৭২ শতাংশেরও বেশি গ্রাহক ফোরজি ব্যবহার করেছেন। পাকিস্তানে এই সংখ্যা ৫৭ শতাংশ। এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ফোরজি ব্যবহারকারীর সংখ্যা গড়ে ৭০ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা এ শিল্পে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথা বলছেন। সেসব চ্যালেঞ্জের কারণে ফোরজির ব্যবহারকারীর সংখ্যা ধীরগতিতে বাড়ছে। যেমন, ফোরজি প্রযুক্তির স্মার্টফোনের দাম ও ফোরজি সংযোগে সমস্যাগুলো কম আয়ের মানুষদের মধ্যে এর ব্যাপক ব্যবহারকে বাধাগ্রস্ত করছে।
যেভাবে কাজ করছে অপারেটররা
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অপারেটর রবির গ্রাহকদের মধ্যে ফোরজি ব্যবহারকারীর সংখ্যা শতাংশের হিসাবে সবার ওপরে। এরপরেই আছে তৃতীয় বৃহত্তম অপারেটর বাংলালিংক ও তৃতীয় অবস্থানে আছে দেশের শীর্ষ অপারেটর গ্রামীণফোন।
সম্মিলিতভাবে, এই অপারেটরগুলো গ্রাহকদের দিক থেকে টেলিযোগাযোগ খাতে ৯৬ দশমিক ৬০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে টুজি ও থ্রিজি ব্যবহারকারীও আছেন।
রবির পাঁচ কোটি ৮০ লাখ গ্রাহকের ৬০ শতাংশের বেশি এখন ফোরজি ব্যবহার করছেন।
রবি আজিয়াটার চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার শাহেদ আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রথম মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর হিসেবে ২০১৮ সালে ৬৪ জেলায় ফোরজি সেবা চালুর পর রবির ধারাবাহিক বিনিয়োগের কারণে উল্লেখযোগ্যহারে গ্রাহক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'দুই হাজার ৬০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম ব্যবহার করায় রবির ফোরজি আগের তুলনায় এখন অনেক শক্তিশালী। ভয়েস ওভার এলটিই ব্যবহারকারীরা আমাদের শক্তিশালী ফোরজি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করায় তাদের ডিভাইসগুলো ভালো ভয়েস কোয়ালিটি পাচ্ছেন।'
শাহেদ আলম জানান, রবিতে এখন ফোরজি ব্যবহারকারীর সংখ্যা তিন কোটি ৫৩ লাখের বেশি।
সব মোবাইল অপারেটরের মধ্যে ফোরজি ব্যবহারকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। শুধু তাই নয়, রবির ডাটা ব্যবহারকারীদের প্রায় ৮০ শতাংশই ফোরজি গ্রাহক।
তিনি মনে করেন, এটি সম্ভব হয়েছে রবির নির্ভরযোগ্য নেটওয়ার্ক ও উদ্ভাবনী সেবার কারণে।
বাংলালিংকের চার কোটি ৩১ লাখ গ্রাহকের মধ্যে প্রায় ৪৯ শতাংশ ফোরজি ব্যবহার করছেন।
প্রতিষ্ঠানটির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রথম দিকে ফোরজি গ্রাহকের সংখ্যা কম থাকলেও গত দেড় বছরে তা অনেক বেড়েছে।'
তিনি জানান, তারা গত দুই বছরে বেস ট্রান্সসিভার স্টেশনের সংখ্যা ১০ হাজার থেকে প্রায় ১৬ হাজারে বাড়াতে অনেক বিনিয়োগ করেছেন।
তাইমুর রহমান বলেন, 'আমাদের গ্রাহকদের জন্য সর্বোত্তম ডেটা পরিষেবা দিতে নতুন স্পেকট্রাম কিনতে বিনিয়োগ করেছি। ডেটা পরিষেবায় সেরা গতি আমরা গ্রাহকদের দিচ্ছি।'
তার মতে, বাংলালিংক বিশ্বাস করে যে ডেটা পরিষেবা জনগণের মৌলিক প্রয়োজন। তাদের সব বেস ট্রান্সসিভার স্টেশন যেন ফোরজি সমর্থন করে তা তারা নিশ্চিত করেছেন।
বাংলালিংকের সেই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'এই ব্যবস্থার মাধ্যমে আমাদের প্রায় দুই কোটি ১০ লাখ বা ৫০ শতাংশ গ্রাহক নিয়মিত ফোরজি ব্যবহার করছেন। এই সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে।'
তার বিশ্বাস, দ্রুতগতির ফোরজি নিশ্চিত করতে ফোরজি হ্যান্ডসেটের দাম ও ডেটা পরিষেবা কর কমানো জরুরি। এটি ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।
গ্রামীণফোনের আট কোটি ২০ লাখ গ্রাহকের প্রায় ৪৯ শতাংশ ফোরজি ব্যবহার করছেন।
গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে ফোরজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও দুই হাজার ৬০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম স্থাপনে গ্রামীণফোন ২৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।
গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত এক বছরে এক হাজার ৯০০-র বেশি নতুন ফোরজি সাইট ও এক হাজার ৭০০ কভারেজ সাইট চালু করা হয়েছে।'
তিনি জানান, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে গ্রামীণফোনের ফোরজি সাইটের সংখ্যা ২১ হাজারে পৌঁছেছে। এটি দেশের মোট জনসংখ্যার ৯৭ দশমিক নয় শতাংশের জন্য নেটওয়ার্ক কাভারেজ সুবিধা দেবে।
Comments