উচ্চ মূল্যস্ফীতি: খাদ্যপণ্য বিক্রির প্রবৃদ্ধি অর্ধেকে নেমেছে
![উচ্চ মূল্যস্ফীতি: খাদ্যপণ্য বিক্রির প্রবৃদ্ধি অর্ধেকে নেমেছে খাদ্যপণ্য বিক্রির প্রবৃদ্ধি](https://bangla.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2024/01/21/super_shop.jpg?itok=hLXrphFu×tamp=1705827053)
ক্রমাগত উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বাড়তি সুদের হার ও টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়নের কারণে দেশের অর্থনীতি কঠিন সময় পার করছে। এ পরিস্থিতিতে কেমন আছে শিল্পখাত? এ নিয়ে আমাদের এই পর্বে খাবার তৈরিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে।
কাঁচামালের দাম বাড়ায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও পানীয় তৈরি করা সব প্রতিষ্ঠানই গেল ২০২২-২৩ অর্থবছর তাদের পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। এরপরও টাকার অংকে তাদের বিক্রির প্রবৃদ্ধি অর্ধেকে নেমে এসেছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। ফলে মানুষ প্যাকেটজাত খাদ্যপণ্য, আইসক্রিম কম কিনছে বলেই এমনটা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ১২ খাদ্যপণ্য তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান ২০২২-২৩ সালের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, এক বছরের ব্যবধানে তাদের সম্মিলিত বিক্রি ১০ দশমিক সাত শতাংশ বেড়ে তিন হাজার ৮৩৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ২০ দশমিক সাত শতাংশ।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অ্যাপেক্স ফুডস'র বিক্রি কমেছে ৩১ শতাংশ, বঙ্গজ'র ১০ শতাংশ, ন্যাশনাল টি'র ১০ শতাংশ ও লোভেলো আইসক্রিমের দুই শতাংশ।
বিস্কুট তৈরিকারী প্রতিষ্ঠানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে প্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদা কমেছে।
২০২২-২৩ সালে ভোক্তা মূল্য সূচক বেড়েছে নয় দশমিক শূন্য দুই শতাংশ। এটি গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে তার প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি প্রবৃদ্ধি ভালো ছিল কারণ তারা যেসব খাদ্যপণ্য তৈরি করেন তা স্বল্প মূল্যেও পাওয়া যায় এবং মানুষ রাস্তাঘাটে ক্ষুধা নিবারণ করতে এ ধরনের খাবার পছন্দ করেন বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দাম সমন্বয় করা সত্ত্বেও বিক্রির প্রবৃদ্ধি কমেছে। তার মতে, 'অর্থাৎ ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় মানুষ কম পরিমাণে কিনছেন।'
বঙ্গজ'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল হক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলেন, 'করোনা-পরবর্তী প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়া ও পণ্যের উপকরণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি কমেছে।'
ক্রেতারা জরুরি পণ্য ছাড়া অন্যকিছু কিনতে চাচ্ছেন না। এটি বিক্রি কমাতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে, যোগ করেন তিনি।
২০২২-২৩ অর্থবছরে খাবার তৈরিকারী ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষে থাকা অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি বিক্রি করেছে। প্রাণ এএমসিএলের বিক্রি বেড়েছে দুই শতাংশ।
করোনা মহামারি ও যুদ্ধের প্রভাবে গত অর্থবছরে সরবরাহ ব্যবস্থা যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে তা তুলে ধরে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, 'এসব কারণে পণ্য রপ্তানি কঠিন হয়ে পড়েছে।'
পণ্যবাহী কন্টেইনার ও মাদার ভেসেলের ঘাটতি থাকায় পণ্যের খরচ বেড়ে গিয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে কাঁচামালের দামও।
কামরুজ্জামান কামাল আরও বলেন, 'এসবই খাদ্যপণ্যের বেশি দাম হওয়ার জন্য দায়ী।'
'যেসব দেশে রপ্তানি করা হয় সেসব দেশ বেশি মাত্রায় মূল্য-সংবেদনশীল হওয়ায় পণ্যের বিক্রি কমেছে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'দাম অপরিবর্তিত রাখতে অনেক ক্ষেত্রে পণ্যের আকার পরিবর্তন করায় স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব তুলনামূলক কম ছিল।'
এ দিকে, বিক্রির প্রবৃদ্ধি কমলেও গত অর্থবছরে তালিকাভুক্ত খাদ্যপণ্য তৈরিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত মুনাফা আগের বছরের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেড়ে ১২৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
এপেক্স ফুড'র আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে—যুদ্ধ ও বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির কারণে বেশি দামের পাশাপাশি চিংড়ির চাহিদা কমে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি কমেছে।
চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত প্ল্যান্টের মালিক এ প্রতিষ্ঠানটি শতভাগ পণ্য রপ্তানি করে।
বার্ষিক প্রতিবেদনে অ্যাপেক্স ফুডস'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার আহমেদ বলেন, '২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের চিংড়ির দাম ২৪ শতাংশ কমেছে।'
বাংলাদেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিংড়ি চাষ সনাতন পদ্ধতিতে চলছে। উৎপাদন দাঁড়িয়েছে হেক্টরপ্রতি ৩০০-৪০০ কেজি। এটি বিশ্বে সর্বনিম্ন। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হবে তিন থেকে চার টন।
চীন ও ভিয়েতনামের মতো শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারকদের বিপরীতে বাংলাদেশ এখনো উচ্চতর মূল্য সংযোজিত হিমায়িত চিংড়ি উৎপাদন করতে পারছে না। বিদেশে এর চাহিদা অনেক।
Comments