বিদ্যুৎ গেলেই নেটওয়ার্ক নেই টেলিটকের ৮৩০ টাওয়ারে

এক ঘণ্টার বেশি সময় বিদ্যুৎ না থাকলে টেলিটকের প্রায় ৪০ শতাংশ টাওয়ার সংযোগ দিতে পারে না।
বিদ্যুৎ গেলে নেটওয়ার্ক থাকে না টেলিটকের

টেলিটকের মোবাইল টাওয়ারগুলোর পর্যাপ্ত ব্যাটারি ব্যাকআপ না থাকায় এর সেবা নিয়ে গ্রাহকদের হতাশা আরও বেড়েছে। এমনকি, রাষ্ট্র পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক সংখ্যা ক্রমাগত কমছে।

সহজে নেটওয়ার্ক পেতে প্রতিষ্ঠানটির পাঁচ হাজার ৬৬১টি বেস ট্রান্সসিভার স্টেশন (বিটিএস) আছে। এর মধ্যে তিন হাজার ৮৫৬ টাওয়ারের ব্যাটারি দেয় টেলিটক। এর ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ টাওয়ার এক মিনিটের বেশি ব্যাকআপ দিতে পারে না।

অর্থাৎ, বিদ্যুৎ চলে গেলে ৮৩০ টাওয়ারের গ্রাহকরা নেটওয়ার্ক পান না।

একইভাবে এক ঘণ্টার বেশি সময় বিদ্যুৎ না থাকলে টেলিটকের প্রায় ৪০ শতাংশ টাওয়ার সংযোগ দিতে পারে না।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে টেলিকমের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শনে এলে এই ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশে বিটিএস বা টাওয়ারগুলো টেলিকম বা অন্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলো মোবাইল নেটওয়ার্ক দেখভালের দায়িত্বেও থাকে।

টেলিটকের কর্মকর্তাদের মতে, একটি টাওয়ারে মানসম্মত ব্যাটারি ব্যাকআপের সময় সাধারণত চার থেকে আট ঘণ্টা। অল্প বা বেশ কিছু সময় বিদ্যুৎ না থাকলে টাওয়ার চালু থাকে।

টেলিটক প্রায় পাঁচ বছর আগে থ্রিজির দ্বিতীয় ধাপ ও অন্য একটি প্রকল্প চালুর সময় তাদের টাওয়ারগুলোয় ব্যাটারি ও রেকটিফায়ার বসিয়েছিল।

সে সময় কিছু ব্যাটারি ও রেকটিফায়ার কেনা হলেও সেগুলো বড় সমস্যা মোকাবিলায় যথেষ্ট ছিল না।

ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে টেলিটকের টাওয়ার ও ট্রান্সমিশন লিংকে সমস্যা হয় এবং বিশাল সংখ্যক টাওয়ার বন্ধ হয়ে যায়।

প্রতিমন্ত্রী পলককে জানানো হয়, 'ব্যাটারি ব্যাকআপ না থাকায় টেলিটক মোবাইল সংযোগ চালু রাখতে পারছে না।'

টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম হাবিবুর রহমান প্রতিষ্ঠানটির নেটওয়ার্কের ভয়াবহ সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, 'এটা অস্বীকার করা যাবে না যে টেলিটকের ব্যাটারি ব্যাকআপ খুবই কম সময়ের জন্য পাওয়া যায়। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় গ্রাহকরা সিগন্যাল পান না বলে জানান।'

'বেশি সময় ব্যাটারি ব্যাকআপ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে,' উল্লেখ করে তিনি জানান, ব্যাটারি ও রেকটিফায়ারের জন্য ৪৫ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এটি পরিকল্পনা কমিশন দেখছে।

এছাড়াও, টেলিটকের ফাইভজি পরিষেবা প্রস্তুতির জন্য দুই হাজার ২০৪ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলছে। একেএম হাবিবুর রহমান বলেন, 'পরে প্রকল্পের অতিরিক্ত অর্থ আমরা এখনকার নেটওয়ার্কের পাওয়ার ব্যাকআপ সিস্টেমের জন্য খরচ করতে পারব।'

'টেলিটক ব্যবহার করতে পছন্দ করি কারণ অন্যান্য অপারেটরের তুলনায় এর ইন্টারনেট খরচ কম,' উল্লেখ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক টেলিটক ব্যবহারকারী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকলে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। এ কারণে ছয় মাস হলো টেলিটক ব্যবহার বাদ দিয়েছি।'

টেলিটকের গ্রাহক প্রতিনিয়ত কমছে। এর মাধ্যমে গ্রাহকদের অসন্তুষ্টির চিত্র প্রকাশ পায়।

গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসে দেশে মোবাইল গ্রাহক প্রায় এক কোটি ছয় লাখ বাড়লেও টেলিটক গ্রাহক হারিয়েছে দুই লাখ ৩০ হাজার।

টেলিটকের বাজার কমেছে তিন দশমিক ৩৮ শতাংশ। দেশে ১৯ কোটি আট হাজার গ্রাহকের মধ্যে টেলিটকের গ্রাহক ৬৪ লাখ ছয় হাজার।

যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহক হারাচ্ছে তাই এর অন্যান্য পরিষেবা কমছে। টেলিটককে আবার সচল করা যাবে কিনা তা নিয়ে অনেকে অনিশ্চিত।

গত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান ছিল এক হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি ধারাবাহিক লোকসানে আছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতিষ্ঠানটি শুধু ২০১০-১১ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে মুনাফা করেছে।

অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পাওয়ার ব্যাকআপ

দেশে চালু ৪৪ হাজার ৬২৯টি টাওয়ারের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার টাওয়ার ইডটকোর মাধ্যমে গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটকের গ্রাহকদের সেবা দেয়।

ইডটকো বাংলাদেশের ডিরেক্টর ফর অপারেশনস মনোয়ার সিকদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'টাওয়ারের অবস্থান ও কাঠামোর ওপর নির্ভর করে আমাদের দুই থেকে ছয় ঘণ্টা ব্যাকআপ দেওয়ার ক্ষমতা আছে।'

'টাওয়ারগুলো মূলত গ্রাহকের চাহিদা ও অবস্থান বিবেচনায় রেখে তৈরি করা হলেও জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ সব জায়গায় সমান নয়' জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'তাই টাওয়ারের অবস্থান ও আকৃতির ওপর ভিত্তি করে আমরা পাওয়ার ব্যাকআপ সিস্টেম বসিয়েছি।'

ইডটকোর একাধিক বিকল্প শক্তির ব্যবস্থা আছে। টাওয়ারগুলোর ১২ শতাংশ সৌরবিদ্যুৎ, ১৩ শতাংশ বায়ুশক্তি ও ১২ শতাংশ স্বয়ংক্রিয় ডিজেল জেনারেটরের মাধ্যমে চলতে পারে। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকলে বহনযোগ্য জেনারেটরের ব্যবস্থা আছে।

চার হাজার ২৩০টি টাওয়ার নিয়ে কাজ করা সামিট টাওয়ার জানিয়েছে, তারা নির্দিষ্ট এলাকার গ্রিডের সংযোগের ওপর ভিত্তি করে চার থেকে আট ঘণ্টার ব্যাটারি ব্যাকআপের ব্যবস্থা করে।

বিকল্প হিসেবে এর ২০ শতাংশেরও বেশি টাওয়ারের জন্য বহনযোগ্য জেনারেটর, ফিক্সড জেনারেটর ও সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা আছে।

Comments