আর্থিক সংকট: এক পাঞ্জাবিতেই দুই উৎসব

ঈদ
দোকানে পছন্দের পাঞ্জাবি খুঁজছেন এক ক্রেতা। ছবি: সংগৃহীত

বেসরকারি চাকরিজীবী মধ্যবয়সী শাকিল আহমেদ ঈদকে সামনে রেখে পাঞ্জাবি কেনার সময় সাধারণত তিনটি বিষয় বিবেচনায় রাখেন—দাম, রঙ ও মান। তবে এবার তাকে আরও কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে।

শুধু ঈদের নয়, দেশের আরেক বড় উৎসব পহেলা বৈশাখের জন্যও পাঞ্জাবি কেনার চিন্তা করছেন তিনি।

বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে কেনাকাটা করতে আসা শাকিল আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঈদে সাধারণত সাদা বা হালকা রঙের পোশাক পরি। পহেলা বৈশাখে পরি উজ্জ্বল রঙের পোশাক। কিন্তু, জীবনযাত্রার খরচ বেশি হওয়ায় ও আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।'

তিনি আরও বলেন, 'এবার ঈদ ও পহেলা বৈশাখ একসঙ্গে এসেছে। তাই একটি পাঞ্জাবি কিনতে চাই যা দুই উৎসবেই পরা যাবে।'

ঈদ ও পহেলা বৈশাখের মতো ঐতিহ্যবাহী উৎসব কাছাকাছি সময়ে পড়ায় শাকিল আহমেদের মতো অনেকে এবার পাঞ্জাবি কেনার আগে একই রকম চিন্তা করছেন।

ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার নিরাপত্তার প্রহরী গোলাম মওলা রাস্তার পাশের ভ্যানের ওপর পাঞ্জাবি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই দোকানে প্রতিটি পাঞ্জাবির দাম ৩০০ টাকা। তাই ভাবছিলাম একটা পাঞ্জাবি কেনা যায় কিনা। কিন্তু পরিবারের অন্যান্য খরচের কথা চিন্তা করে এখন আর কিনছি না।'

তিন ছেলে-মেয়ে মা-বাবাসহ পরিবারে সাত সদস্য ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে গ্রামের বাড়িতে থাকে উল্লেখ করে গোলাম মওলা বলেন, 'আমার ১২ হাজার টাকা বেতনের ছয় হাজার টাকা গ্রামে পাঠাই। এই টাকা দিয়ে কয়েক বছর আগে কোনোরকম সংসার চললেও এখন আর চলে না। এখন আর মা-বাবার ওষুধ কিনতে পারি না।'

'পাঞ্জাবির দাম মাত্র ৩০০ টাকা তো দূরের কথা ১৫০ টাকা হলেও আমার পক্ষে কেনা সম্ভব না। ঈদ কী আর বৈশাখ কী। আমাদের কাছে সব দিন সমান,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

দুটি অনুষ্ঠান ঘনিয়ে আসায় গত কয়েকদিন ধরেই পাঞ্জাবির দোকানে ভিড় বাড়ছে। অনেক বিক্রেতা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন—ঈদ ও পহেলা বৈশাখ একসঙ্গে হওয়ায় এ বছর পাঞ্জাবি বিক্রি বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সারা দেশে ২০টি আউটলেট থাকা 'রঙ বাংলাদেশ'র প্রধান নির্বাহী সৌমিক দাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছরের তুলনায় এ বছর পাঞ্জাবি বিক্রি ভালো।'

দেশের ২৩টি আউটলেটের অন্যতম শীর্ষ ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড 'অঞ্জনস'র কর্ণধার শাহীন আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের তুলনায় এ বছর পাঞ্জাবির উৎপাদন ১০ শতাংশ বেড়েছে।'

'শুধু বিশেষ অনুষ্ঠান নয়, সবসময়ই পাঞ্জাবি পরি' জানিয়ে ফার্মগেটে পাঞ্জাবি কিনতে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এহসানুল করিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাধারণত দুটি পাঞ্জাবি কিনি। একটি ঈদ ও অন্যটি পহেলা বৈশাখের জন্য। এ বছর জিনিসপত্রের দামের পাশাপাশি কাপড়ের দামও বেশি। তাই একটি পাঞ্জাবি কেনার চিন্তা করছি।'

দেশে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষদের সংকটে ফেলে দিয়েছে। গত বছরের মার্চ থেকে মূল্যস্ফীতি নয় শতাংশের বেশি।

সৌমিক দাস বলেন, 'গত বছর পাঞ্জাবির কাপড়ের গড় দাম গজপ্রতি ছিল ৯০-১০০ টাকা। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা।'

এক খুচরা বিক্রেতা জানান, গত বছর যে পাঞ্জাবি তিনি এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেছেন, এবার তার দাম নিচ্ছেন দেড় হাজার টাকা।

উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় মুনাফার পরিমাণ বেশ কিছুটা কমেছে বলেও জানান সৌমিক দাস।

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের বেশিরভাগ গ্রাহক মধ্যবিত্ত। তাই দাম বাড়ানোর আগে অনেক কিছু বিবেচনা করতে হয়।'

'অঞ্জনস'র মালিক শাহীন আহমেদ বলেন, 'সব কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তারপরও খুচরা দাম আনুপাতিক হারে বাড়ানো হয়নি। কারণ পাঞ্জাবির দাম বেশি হলে বিক্রিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।'

পাঞ্জাবি বাজারের বার্ষিক পরিসংখ্যান নেই। তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মূলত মধ্য ও উচ্চ আয়ের মানুষদের ফ্যাশন সচেতনতার কারণে গত দুই দশকে পাঞ্জাবির চাহিদা অনেক বেড়েছে।

বুড়িগঙ্গার তীরে পাইকারি পোশাক বিক্রয়কেন্দ্র কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুসলিম ঢালী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অন্যান্য পোশাকের তুলনায় এ বছর পাঞ্জাবির চাহিদা অনেক বেশি।'

তিনি আরও বলেন, 'এখন সবাই পাঞ্জাবি পরতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ছেলেদের পোশাকের প্রায় ৬০ শতাংশই পাঞ্জাবি।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh alleges border abuse by BSF

Those pushed-in allege torture, abuses in India

A Bangladeshi woman has alleged that India’s Border Security Force (BSF) tied empty plastic bottles to her and her three daughters to keep them afloat, then pushed them into the Feni river along the Tripura border in the dark of night, in a chilling account of abuse at the border.

5h ago