পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠানের মঞ্চে ভাঙচুর: মামলা হয়নি, আটক ৫ জনকেও ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

চট্টগ্রামে পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠানের মঞ্চে ভাঙচুর হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামে পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠানের মঞ্চে ভাঙচুর হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম নগরীর ডিসি হিল এলাকায় রোববার রাতে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের করা বর্ষবরণ ব্যানার, ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা এবং মঞ্চ ভাঙচুরের ঘটনাস্থল থেকে আটক পাঁচজনকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, তাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দেয়নি। তাই সোমবার ভোরে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারের দাবিতে সোমবার সকালে সিআরবি সাত রাস্তার মাথায় মানববন্ধন করেছে গণতান্ত্রিক জোট চট্টগ্রাম জেলা শাখার নেতাকর্মীরা।

আটক ওই পাঁচজন হলেন—মো. আলমগীর (৪২), মো. নিজাম উদ্দিন (৪২), মো. রফিকুল ইসলাম (৫৩), মো. শাহ আলম (৬৫) ও মো. ফারুক (৪২)। থানা পুলিশের একাধিক সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, এই পাঁচজন বিএনপির অনুসারী এবং থানা থেকে তাদের ছাড়িয়ে নিতে রাতে একাধিক বিএনপির নেতাকর্মীরা থানায় ভিড় করেছেন।

ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল করিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা পাঁচজনকে ঘটনাস্থল থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এনেছিলাম। তারা বলেছে, তারা ২০-২৫ জনের মতো গ্রুপ ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়তে এসেছিল। তবে রাত অবধি তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না আসায় আমরা তাদের জিডি মূলে জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছি।'

জিডি মূলে কাদের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছেন জানতে চাইলে ওসি বলেন, 'সেটা জিডি দেখে বলতে হবে।'

ঘটনাস্থলের আজ সকাল ৭টার দৃশ্য। ছবি: স্টার

পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সাধারণত এই ধরনের ভাঙচুর কিংবা সন্দেহজনক আটকের ঘটনায় থানা পুলিশ সিএমপির ৮৮ ধারায় আদালতে আটকদের চালান দিয়ে থাকে। তবে তাদের ক্ষেত্রে সেটি হয়নি।

৮৮ ধারায় কেন চালান হলো না, সেই বিষয়ে ওসি বলেন, 'আমার একটি জরুরি কল এসেছে, আপনি বিষয়টি নিয়ে সিনিয়র স্যারদের জিজ্ঞাসা করেন।'

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. আলমগীর হোসেনকে একাধিক ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। পরে সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) মো. হুমায়ুন কবির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আপনি এডিসি পাবলিক রিলেশনের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলুন।'

পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের সূত্র জানায়, বিএনপি-সমর্থিত জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) ও সমমনা সংগঠনগুলো সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের ডিসি হিলের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানটি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল। ফলে গত দুই দিন ধরে সেখানে অনুষ্ঠান আয়োজনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

এই বিষয়ে রোববার বিকেলে ডিসি অফিসে জাসাসের সঙ্গে একটি বৈঠক হলেও কোনো সমাধান হয়নি।

সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের সমন্বয়ক সুচরিত দাশ খোকন ডেইলি স্টারকে বলেন, '৩০-৪০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে "ফ্যাসিস্ট দোসররা হুঁশিয়ার সাবধান, আওয়ামী লীগের দালালরা সাবধান"—স্লোগান দিতে দিতে, পুলিশের সামনেই এসে মঞ্চ ভাঙচুর করে। এই ঘটনার প্রতিবাদে আমরা এবারের পহেলা বৈশাখে সব কর্মসূচি বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোনো প্রোগ্রাম হবে না।'

ঘটনাস্থলের আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দৃশ্য। ছবি: স্টার

'চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ইন্ধনেই এই ঘটনা হয়েছে বলে আমরা মনে করি। রোববার বিকেলেই ডিসি অফিস আমাদেরকে ২৩টি সংগঠনের তালিকা দেয় যেখানে বোধন, উদীচী, প্রমাসহ আরও কিছু সাংস্কৃতিক সংগঠন—যাদের স্টেজে পারফর্ম না করতে বলা হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা,' যোগ করেন তিনি।

সোমবার সকালে ডিসি হিলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো প্রোগ্রাম হয়নি। অনেকে এমনি এসে ঘুরে গেছেন। তবে সেখানে পুলিশে উপস্থিতি দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকজনের সমাগমও বেড়েছে। ডিসি হিলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান সকাল সাড়ে ৬টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল। প্রায় ৫৫টি সাংস্কৃতিক সংগঠন সেখানে তাদের পরিবেশনার জন্য নাম নিবন্ধন করেছিল। তবে রোববারের হামলার ঘটনার পর সেখান থেকে সব খুলে ফেলেছেন আয়োজকরা।

সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭৮ সাল থেকে নন্দনকাননের ডিসি হিলে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয়। ৪৭ বছরে চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের মেলায় রূপ নিয়েছে ডিসি হিলের বাংলা বর্ষবরণ উৎসব। ডিসি হিলে স্থায়ী মঞ্চে পয়লা বৈশাখ, রবীন্দ্র–নজরুলজয়ন্তী, বসন্ত উৎসব, লোকসংস্কৃতি উৎসবসহ বড় বড় আয়োজন হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠনও প্রায় প্রতিদিন সেখানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছিল। কিন্তু ছয় বছরের বেশি সময় ধরে জেলা প্রশাসন থেকে পয়লা বৈশাখ ও রবীন্দ্রজয়ন্তী ছাড়া অন্য অনুষ্ঠানের অনুমতি বন্ধ রেখেছে। ডিসি হিল খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনও করে আসছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। নববর্ষ বরণের পাশাপাশি অন্যান্য অনুষ্ঠান আয়োজনের জোরালো দাবি তাদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, যেখানে ভাঙচুর হয়েছে, সেটা জেলা প্রশাসকের বাসভবন এলাকা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো দরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। কে এই বিষয়ে অভিযোগ করবে, তাও নিশ্চিত নয়।

Comments

The Daily Star  | English

Students’ unions: Legal bars, admin delays stall polls in many universities

Of 56 public universities across the country, only seven have the legal provision for a central students' union

8h ago