তীব্র গরমে বিপাকে দিনমজুর

তাপদাহ, তীব্র গরম, মূল্যস্ফীতি, দিনমজুর,
চলমান তাপদাহের দিনমজুরসহ দৈনিক মজুরিভিত্তিকে কাজ করা শ্রমিকের চাহিদা কমে গেছে। ছবিটি সম্প্রতি মিরপুর-১ থেকে তোলা। ফটো: প্রবীর দাস

চলতি বছরের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। তবে সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন দিনমজুর হিসেবে যারা কাজ করেন।

এদিকে গত বছরের মার্চ থেকে মূল্যস্ফীতি নয় শতাংশের ওপরে আছে, এতে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। এমন পরিস্থিতিতে তীব্র গরম শ্রমজীবীদের জীবনকে যেন আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

আবার তীব্র গরমে দিনমজুরদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত শ্রম না পাওয়ার আশঙ্কায় বেশিরভাগ নিয়োগকর্তা তাদের প্রকল্প বন্ধ রেখেছেন। ফলে কর্মহীন দিনমজুরের সংখ্যা বাড়ছে।

সম্প্রতি রাজধানীর কয়েকটি অস্থায়ী শ্রমবাজার ঘুরে দেখেছেন এই প্রতিবেদক। যেসব বাজারে ভোরের দিকে কাজের সন্ধানে ছুতোর ও রাজমিস্ত্রিসহ অন্যান্য পেশাজীবীরা জড়ো হন।

রাজধানীর মিরপুর-১, মিরপুর-১১ (পূরবী), মিরপুর-১২, মিরপুর-১৪, কাজীপাড়া, খিলগাঁও রেলগেট, শাহজাহানপুর, কমলাপুর, ইত্তেফাক মোড়, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল বিশ্বরোড, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, মোহাম্মদপুর টাউন হল, মোহাম্মদপুর রিং রোডসহ আরও কিছুন স্থানে এ ধরনের শ্রমবাজার আছে।

সাধারণত নিয়োগকর্তারা সকাল সাতটার দিকে এসব বাজারে যান এবং তাদের প্রয়োজন অনুসারে দিনভিত্তিক, স্বল্প বা দীর্ঘ সময়ের জন্য শ্রমিক নেন।

ভোর থেকে মিরপুর-১ নম্বরে ফুট ওভারব্রিজের নিচে ৫৫ বছর বয়সী আব্দুর রহিম অন্য দিনমজুরের সঙ্গে কাজ খুঁজছিলেন। তবে, কেউ তাদের কাজের জন্য নেননি।

টোলারবাগের পানির ট্যাংকি বাসস্ট্যান্ড থেকে আসা আবদুর রহিম ছয়দিন ধরে কর্মহীন।

আক্ষেপ করে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বেকার। প্রচণ্ড গরমের কারণে কেউ আমাদের কাজে নিচ্ছে না।'

তিনি আরও বলেন, 'আগে প্রতিদিন ৭০০ টাকা আয় করতাম। এখন ৫০০ টাকা চাইলেও কেউ কাজে নিচ্ছে না।'

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পাশে বাবা-মাসহ পাঁচ জনের পরিবারের সঙ্গে থাকেন মোহাম্মদ ইউনুস।

তিনি ও তার ভাই মোহাম্মদ ইব্রাহিম দিনমজুর ও পরিবারের আয়ের একমাত্র ঊতস।

মোহাম্মদ ইউনুস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সকাল ৬টায় এসেছি। এখন সকাল ১০টা বাজে। কেউ কাজ দেননি। তিন দিন ধরে বেকার।'

'কাজ না পেলে কীভাবে বাড়ি ভাড়া, দোকানের ধার মেটাবো? সংসারের খরচ আসবে কই থেকে?'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়েমা হক বিদিশা দিনমজুরদের বর্তমান দুর্দশার দুটি কারণ তুলে ধরে বলেন, 'হয়ত এটা সাময়িক সমস্যা। তীব্র গরমের কারণে শ্রমিকরা যদি কাজ না পান, তাহলে পরেও কাজ পাবেন না বিষয়টি এমন নাও হতে পারে।'

'তবে আমি মনে করি, সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এটা হয়েছে।'

'মূল্যস্ফীতির চাপের কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত এমনকি দিনমজুরদের মতো কম আয়ের মানুষরা সত্যিই কঠিন পরিস্থিতিতে আছেন।'

'হাতে টাকা না থাকলে মানুষ কিছু কিনতে পারেন না। বাজার ও প্রতিষ্ঠানের মালিকদের নিজেদের কর্মী থাকে। ফলে শ্রমিকদের কাজের সংকট হয়।'

'এমন শ্রমজীবী মানুষদের জন্য সরকারের সুরক্ষা কর্মসূচি নেই,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

'টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি দামে কিছু পণ্য বিক্রি হলেও তা যথেষ্ট নয়,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'সরকারের উচিত দিনমজুর, নিম্ন-মধ্যম ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষদের জন্য ভর্তুকি দামে আরও বেশি পণ্য দেওয়া। তাদের উচিত পণ্যের সংখ্যা ও পরিমাণ বাড়ানো।'

এ ধরনের প্রকল্পের অভাবে নিজ তাগিদেই পরিস্থিতি মোকাবিলা ছাড়া উপায় থাকে না।

মিরপুরের লালকুটি বাজার এলাকা থেকে কাজের সরঞ্জাম নিয়ে অস্থায়ী শ্রমবাজারে এসেছিলেন বছর চল্লিশের রাজমিস্ত্রি শফিকুল ইসলাম। দুর্ভাগ্যবশত, বেশ কয়েকদিন ধরে তিনি বেকার।

শফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ৭-৮ দিন ধরে কাজ নেই। প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টায় এখানে কাজের জন্য আসি। কিন্তু কাজ পাই না।'

মোহাম্মদ ইসরাফিল ও মোহাম্মদ আলমকেও কাজের অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়।

কাঠমিস্ত্রির কাজ করা কেরামুল ইসলাম দুই মাস আগে কাজের খোঁজে পঞ্চগড় থেকে সপরিবারে ঢাকায় আসেন।

'আমি যদি বেকারই থাকি, তাহলে এই কঠিন সময়ে পরিবারের মানুষদের কীভাবে খাওয়াব?'—এমন প্রশ্ন রেখে তিনি জানান পরিবারের সদস্য তিনজন।

কয়েকটি এলাকা থেকে নারী শ্রমিকরাও কাজের খোঁজে এসব জায়গায় আসেন।

নারী দিনমজুর ফাতেমা বেগম পাঁচ দিন ধরে কাজ পাচ্ছেন না।

ফাতেমা ও তার স্বামী দুজনেই কাজ করে ছয় জনের সংসার চালান। তবে সম্প্রতি কাজ না পাওয়ায় তারা সমস্যায় পড়েছেন।

বাঁশের ঝুড়ি ও নিড়ানি হাতে নিয়ে ফাতেমা প্রতিদিন মিরপুর-১ আসেন। তিনি বলেন, 'বেকার থাকায় সমস্যায় পড়েছি। একটা কাজ খুবই দরকার।'

'প্রতিদিনের খরচের পাশাপাশি বাসা ভাড়া ও দোকানের বাকি নিয়ে ভাবছি। মাস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এগুলো দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠে,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Shammo murder: DU students, teachers besiege Shahbagh Police Station demanding justice

The protesters left the area following a meeting with additional deputy commissioner of Ramna Zone

1h ago