আইএমএফের ঋণ

রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা ১৮ বিলিয়ন ডলার হতে পারে

আইএমএফের ঋণ

আগামী জুনে নিট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভের (এনআইআর) লক্ষ্যমাত্রা ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে আনার প্রস্তাব আইএমএফকে দিয়েছে সরকার। কেননা, চলমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন।

বর্তমানে আইএমএফ জুনের জন্য রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। সংস্থাটির ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় ঋণের চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার অন্যতম শর্ত এটি।

গতকাল সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থ বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যৌথসভায় আইএমএফের সফররত দলকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে আইএমএফ দলের বৈঠক হওয়া কথা।

এরপর তারা অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খানের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করবেন।

আজ অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আইএমএফ দলের সঙ্গে সংস্কার কর্মসূচির পরবর্তী করণীয় নিয়ে বৈঠক হবে।

ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে আট সদস্যের আইএমএফ দল ঋণ কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যালোচনার জন্য গত ২৪ এপ্রিল থেকে ঢাকায় আছে। এরপর ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের ঋণের তৃতীয় কিস্তি দেওয়া হবে।

জুনে আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ একটি ছাড়া সব শর্ত পূরণ করেছে। গত ডিসেম্বরে সংশোধিত রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় তা ৫৮ মিলিয়ন কম ছিল।

লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও তৃতীয় কিস্তি সময়মতো পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী সরকার।

কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আইএমএফ চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির জন্য নতুন বা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হতে পারে।

আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর থেকে বাংলাদেশ রিজার্ভের জন্য নির্ধারিত শর্ত পূরণ করতে পারেনি।

গত বছরের জুনে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারলেও ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ছাড় পায় বাংলাদেশ।

কর্মকর্তাদের মতে, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় আগামী জুনে নির্ধারিত রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন হবে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য বাজেট সহায়তা পাবে বলে আশা করা হয়েছিল। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়া জুনের মধ্যে আর কোনো সহায়তা পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।

তাছাড়া বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা চলমান থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার কমার সম্ভাবনা কম।

২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে দেশের বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব বলছে, এ ধারা আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতে পারে।

এটি দেশের রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। কারণ, দেশের বকেয়া স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ ২০২২ সালের মাঝামাঝি ১৬ বিলিয়ন ডলার থেকে গত ফেব্রুয়ারিতে ১১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

এ ছাড়াও, ব্যালেন্স অফ পেমেন্টের (বিওপি) আর্থিক অ্যাকাউন্টের ওপর চাপ কমার লক্ষণ নেই।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিওপির অন্যতম প্রধান উপাদান চলতি হিসাবের ব্যালেন্স দাঁড়িয়েছে ৪৭০ কোটি ডলার।

অন্যদিকে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এবং স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণসহ বিওপির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ আর্থিক হিসাব ৮৩০ কোটি ডলার ঘাটতি দেখিয়েছে।

এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় চারগুণ ঘাটতি দেখায়।

অন্যদিকে রপ্তানি আয় কমে যাওয়ায় একই সময়ে নিট বাণিজ্য ঋণ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৫ কোটি ডলার। এটি আগের বছর ছিল ৩৫৫ কোটি ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সফররত আইএমএফ দল বৈদেশিক পরিস্থিতির বাস্তবতা মেনে নিয়েছে। তারা রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধনে রাজি হয়েছে।'

এদিকে বাংলাদেশ গত বছরের ডিসেম্বরে তৃতীয় দফার ফ্লোর ট্যাক্স রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করলেও জুনের মধ্যে চতুর্থ কিস্তিতে তিন লাখ ৯৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা পূরণ নাও হতে পারে।

জুনে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কর-রাজস্ব আদায়ে ২০ দশমিক ৩৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন।

তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে কর-রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, জুন শেষে সর্বোচ্চ তিন লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা আদায় হতে পারে।

মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা আইএমএফকে কর-রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা সংশোধনের অনুরোধ করেছেন, তবে তারা রাজি হবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়।

Comments

The Daily Star  | English

Thousands of crores of taka of citizens wasted on unnecessary projects: commerce adviser

The adviser, however, added that liabilities of foreign-funded projects should still be repaid

52m ago