প্রভাবশালীদের ঋণের পরিমাণ কত?

এই তালিকায় আছেন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার বোর্ড পরিচালক বা সদস্যরা আছেন।
প্রভাবশালীদের ঋণের পরিমাণ
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে এমন সব রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এই তালিকায় আছেন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার বোর্ড পরিচালক বা সদস্যরা আছেন।

সেইসব ব্যক্তিদের ঋণের বিপরীতে জামানতের বিবরণও জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদে স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুরকে নিয়োগ দেওয়ার পর ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এসব ব্যাংকের বেশিরভাগই চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ছিল।

আওয়ামী লীগের সাবেক রাজনীতিবিদ আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর আত্মীয় মোহাম্মদ সাইফুল আলম ১৯৮৫ সালে এস আলম গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। এটি এখন দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী।

ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সাল থেকে গত জুন পর্যন্ত ছয় ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপ ও এর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ৯৫ হাজার ৩৩১ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ায় ব্যাংকগুলো চরম অর্থ সংকটে পড়েছে।

এর মধ্যে ৭৯ শতাংশ বা ৭৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এসেছে ইসলামী ব্যাংক থেকে। এটি গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকটির মোট বকেয়া ঋণের ৪৭ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংকগুলোর চলতি হিসাবের ঘাটতির মানে হলো তারা গভীর সংকটে পড়েছে।'

এর কয়েকদিন আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেছিলেন, এস আলমের মতো ঋণগ্রহীতার দায় সেইসব প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যাংকগুলোর নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে গভর্নর বৈঠক করবেন। নতুন পর্ষদ সদস্যদের ঋণ পুনরুদ্ধার, তারল্য পুনরুদ্ধার ও রেমিট্যান্স সংগ্রহ বাড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দিতে হবে।'

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের নবনিযুক্ত স্বতন্ত্র পরিচালক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ ও তারল্য পুনরুদ্ধার এবং রেমিট্যান্স বাড়ানোর পরিকল্পনা চেয়েছে।'

ব্যাংকগুলোকে চলতি হিসাবের নেতিবাচক ব্যালেন্স কমানোর পরিকল্পনা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া, নগদ সংরক্ষণ অনুপাত (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ তারল্য অনুপাত (এসএলআর) প্রয়োজনীয়তা পূরণে বিস্তারিত পরিকল্পনা চাওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ন্যাশনাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাবে নেতিবাচক ব্যালেন্স দেখা গেছে।

গত ৭ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বিত চলতি হিসাবের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬২১ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ব্যাংকগুলোর নগদ সংরক্ষণ অনুপাতের ঘাটতি বিবেচনায় নিলে মোট ঘাটতি ২০ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংকগুলোর চলতি হিসাবের ঘাটতির মানে হলো তারা গভীর সংকটে পড়েছে।'

সাধারণত ব্যাংকগুলো ক্লিয়ারিং ও পেমেন্ট সিস্টেমের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলতি হিসাব রাখে এবং অ্যাকাউন্টে মোটা অঙ্কের ব্যালেন্স রাখতে হয়।

তত্ত্বগতভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি হিসাবের ঘাটতি থাকলে ব্যাংকগুলোকে ক্লিয়ারিং ও পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে রাখতে পারে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কর্মকর্তা বলেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেইসব ব্যাংকের নেতিবাচক চলতি অ্যাকাউন্টের ভারসাম্য দূর করতে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তারল্য সহায়তা দিয়েছিল। সম্প্রতি সেই সহায়তা স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ওই ব্যাংকগুলোকেও রেমিট্যান্স সংগ্রহ বাড়ানোর পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রেমিট্যান্স সেই মাসেই আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৯ শতাংশ বেড়ে দুই দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার হয়।

Comments

The Daily Star  | English
Dhaka University suspends exams

DU bans all forms of politics on campus

Dhaka University Syndicate tonight decided to ban all forms of partisan politics by teachers, students and staff on the university campus until further notice

37m ago