বাজেট সহায়তা হিসেবে এডিবি-বিশ্বব্যাংকের কাছে ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ চায় সরকার

উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় আসার জন্য আরও এক বিলিয়ন ডলার ঋণের বিষয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে এডিবি।
বাজেট সহায়তা
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত সংস্কার ও ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় আসার জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বিশ্বব্যাংক থেকে বাংলাদেশ তিন বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পেতে পারে।

গত বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের জন্য এক বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা চেয়ে এডিবিকে চিঠি দিয়েছে।

এছাড়া উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় আসার জন্য আরও এক বিলিয়ন ডলার ঋণের বিষয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে এডিবি।

এর মধ্যে ৪০০ মিলিয়ন ডলার দেবে এডিবি। আশা করা হচ্ছে, বাকি ৬০০ মিলিয়ন ডলার আসবে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) থেকে।

গত রোববার বাজেট সহায়তা হিসেবে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সংস্কারের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে আরও এক বিলিয়ন ডলার চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

গত বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশকে দেওয়া চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলারের বাইরে আরও তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মিশন আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসছে।

সব মিলিয়ে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গত মাসে দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার আরও ছয় বিলিয়ন কোটি ডলার চেয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার রিজার্ভকে শক্তিশালী করতে চায়। গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে রিজার্ভ ক্রমাগত কমছে। মুদ্রার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা ও অর্থনীতিতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে চায় সরকার। এ বিষয়গুলো গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে পড়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এডিবিকে পাঠানো চিঠিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সংস্কারের জন্য বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

চিঠিতে উল্লিখিত বিষয়গুলোর মধ্যে আছে খাতভিত্তিক প্রশাসনের উন্নতি, অনুকূল নীতিমালা, নিয়ন্ত্রক কাঠামোর বিকাশ, আর্থিক কার্যকারিতা, খাতগুলোর উন্নয়ন, বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি নিয়ে পরিকল্পনা করা।

চিঠিতে আরও বলা হয়, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ আমদানিতে সরকারের খরচ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এছাড়া দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন কমে যাওয়ায় আরও জ্বালানি আমদানি করতে হবে।

এ প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যমান বিদ্যুৎ উৎপাদন পদ্ধতি ও ক্রয় প্রক্রিয়া পর্যালোচনার জন্য কমিটি গঠন করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা জানান, তারা এডিবির কাছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলারের দুটি কিস্তিতে এক বিলিয়ন ডলার চেয়েছেন।

সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এডিবি বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হতে রাজস্ব, বাজেট, আর্থিক নীতি, সরকারি ক্রয় ও লজিস্টিকসসহ বেশ কয়েকটি খাতে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে।

কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় আসার পর বাংলাদেশ রেয়াতি ঋণ ও শুল্ক সুবিধাসহ বেশকিছু সুবিধা হারাবে।

তবে উন্নয়নশীল দেশ হলে বাংলাদেশের জন্য অন্যান্য সুযোগ তৈরি হবে। এসব সুযোগ কাজে লাগাতে বাংলাদেশকে অবশ্যই বাণিজ্য কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার পথে বাধা দূর করতে হবে এবং আরও বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকৃষ্ট করার উদ্যোগ নিতে হবে।

তারা ভাষ্য, বাংলাদেশকে অবশ্যই এডিবির আওতায় সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় আসার পর বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জে পড়তে না হয়।

কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার জন্য চলতি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে বিশ্বব্যাংকের মিশন ঢাকা সফর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছ থেকে সহায়তা পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।'

আইএমএফ মিশন ঢাকায় এলে অতিরিক্ত তিন বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রাথমিক আলোচনা শুরু হবে।

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ভার্চুয়াল সভায় এ ঋণ চেয়েছেন।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আইএমএফের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে অতিরিক্ত ঋণ সহায়তার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন।

আইএমএফ কর্মকর্তারা অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানিয়েছেন, সংস্থাটি বাংলাদেশকে কী পরিমাণ ঋণ দিতে পারে তারা তা মূল্যায়ন করছেন।

চলমান চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির আওতায় আইএমএফ এ পর্যন্ত দুই দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার দিয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অপর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আইএমএফ মিশন মূলত অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারমূলক উদ্যোগের প্রাথমিক মূল্যায়নের চেষ্টা করবে।'

তবে আগামী অক্টোবরে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভার ফাঁকে ঋণ ব্যবস্থা নিয়ে বৈঠক হতে পারে। বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা আছে।

বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বলেন, 'বাজেট সহায়তার বিষয়ে গভর্নর ও অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।'

তিনি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সহায়তা দেওয়ার বিষয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আহসান এইচ মনসুর অগ্রাধিকারের তালিকা তৈরি করেছেন। এর একটি হলো রিজার্ভ বাড়ানো।

রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর পাশাপাশি আইএমএফসহ ঋণদাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বাজেট সহায়তা চাচ্ছে সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জ্বালানি খাতে সরকারের দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ আছে। এছাড়া বিদ্যুৎ ও এলএনজিসহ অন্যান্য চাহিদা মেটাতে দেশে প্রতি মাসে প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হয়।'

Comments

The Daily Star  | English

Post-August 5 politics: BNP, Jamaat drifting apart

The taunts and barbs leave little room for doubt that the 33-year-old ties have soured. Since the fall of Sheikh Hasina’s government on August 5, BNP and Jamaat-e-Islami leaders have differed in private and in public on various issues, including reforms and election timeframe.

7h ago