বিলম্ব-দুর্নীতিতে ৮ মেগা প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৭.৫২ বিলিয়ন ডলার: টাস্কফোর্স প্রতিবেদন

পরিকল্পনা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ত্রুটি এবং দুর্নীতি ও প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে আটটি মেগা প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলিত বাজেটের চেয়ে ৬৮ শতাংশ বা ৭ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের টাস্কফোর্সের এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।

প্রকল্পগুলো হলো—পদ্মা সেতু প্রকল্প, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, যমুনা রেল সেতু প্রকল্প, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু টানেল, ঢাকা এমআরটি লাইন ৬, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প এবং বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লাইন-৩ প্রকল্প।

এই প্রকল্পগুলোর প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার, যা পরে বেড়ে ১৮ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

অর্থনীতি চাঙা করতে এবং টেকসই উন্নয়নের কৌশল নির্ধারণ করতে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদকে প্রধান করে এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়।

১২ সদস্যের এই টাস্কফোর্স গত সপ্তাহে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যয় বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলোর মধ্যে আছে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে দুর্বলতা ও ভুল সিদ্ধান্ত, ভূমি অধিগ্রহণে বিলম্ব, দুর্নীতিগ্রস্ত ও দীর্ঘায়িত ভূমি মূল্যায়ন প্রক্রিয়া, অধিগ্রহণকৃত জমির অপব্যবহার ও অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নকশা।

প্রতিবেদন অনুসারে, বেশিরভাগ প্রকল্প শীর্ষ পর্যায় থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে; যেখানে মন্ত্রী, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক দাতাদের ভূমিকা ছিল।

এতে বলা হয়, 'পরে এটি প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিয়ে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়।'

এরপর প্রকল্পটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ধরে সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম পরিচালনা ও উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রস্তুত করা হয়, যাতে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা যায়। কারণ, এগুলো ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রকল্প।

সবমিলিয়ে প্রকল্পগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন বা অগ্রাধিকারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। এখানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ছিল খুবই সীমিত।

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, 'প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের বিষয়টি প্রায় ক্ষেত্রেই ছিল নিছক আনুষ্ঠানিকতা। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তথাকথিত "পাগলাটে মেগা প্রকল্পগুলোর" ক্ষেত্রে প্রকল্পের সুবিধা বাড়িয়ে দেখানো এবং ব্যয় অবমূল্যায়নের প্রবণতা দেখা গেছে।'

এতে আরও বলা হয়, জমি অধিগ্রহণের কাজটি প্রায়ই শুরু করা হয় প্রকল্প বাস্তবায়নের পর্যায়ে। তাতে এই কাজে অনেক দেরি হওয়ার পাশাপাশি খরচও বাড়ে। এছাড়া জমির মূল্যায়ন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা এবং ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়নের মতো একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়াটিও দুর্নীতির কারণে বিঘ্নিত হয়েছে।

আবার জমিতে মূল পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে বিলাসবহুল বাংলো, সাত তারকা হোটেল, বড় আকারের সেনানিবাস অথবা বন্দর কিংবা শিপইয়ার্ড নির্মাণের মতো প্রকল্পবহির্ভূত কার্যক্রমে সরিয়ে নেওয়ার ‍উদাহরণও দেখা গেছে; যা হয়তো প্রকল্পের উদ্দেশ্যর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চলমান ও প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলির সঙ্গে দ্বন্দ্ব সমন্বয়ের কাজটি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। এ কারণে সময় ও ব্যয় বেড়েছে।

যেমন—ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে এমআরটি-৬ প্রকল্পের বিরোধ এবং এই এক্সপ্রেসওয়ে রাজউকের কুড়িল ফ্লাইওভারের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।

এদিকে সম্ভাব্যতা যাচাই, অর্থায়ন বা ঋণ সমঝোতা, প্রকল্পের অনুমোদন প্রাপ্তি, দরপত্র প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য পদক্ষেপের কারণেও অনেক সময় ১-৩ বছর লেগে যায়, যা প্রকল্পের কাজ যথেষ্ট বিলম্বিত করেছে।

এছাড়াও অবকাঠামোগত প্রকল্পের অর্থায়ন প্রক্রিয়াগুলো প্রায়শ কঠোর এবং প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পড়েছে। তখন তহবিলের ধীর বিতরণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজকে ধীর করে ফেলেছে।

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলো উচ্চ নির্মাণব্যয়ের জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে প্রাথমিকভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি বা অপ্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের কারণে।

 

সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে এই Taskforce report: 8 mega projects cost $7.5b more for graft, delay লিংকে ক্লিক করুন

Comments

The Daily Star  | English
Global fashion brands are reaping triple-digit profits on Bangladeshi garments

Fast fashion, fat margins: How retailers cash in on low-cost RMG

Global fashion brands are reaping triple-digit profits on Bangladeshi garments, buying at $3 and selling for three to four times more. Yet, they continue to pressure factories to cut prices further.

12h ago