২০২৪ সালে দেশে চা উৎপাদন কমেছে ১ কোটি কেজি

চা উৎপাদন
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের এক চা বাগানে পাতা তোলায় ব্যস্ত শ্রমিক। ছবি: শেখ নাসির/স্টার

২০২৩ সালে দেশে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদনের পর ২০২৪ সালে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে দেশে চা উৎপাদন কমেছে।

এ ছাড়াও, ভালোমানের চায়ের জন্য বাছাই করা পাতার পরিমাণ কম হওয়ায় উৎপাদন কম।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে নয় কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। ২০২৩ সালে ছিল ১০ কোটি দুই লাখ কেজি।

'২০২৪ সালের জুলাইয়ের পর দেশে চা চাষের উপযোগী বৃষ্টি হয়নি,' উল্লেখ করে বাংলাদেশ চা বোর্ডের সদস্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) ড. পীযূষ দত্ত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত কয়েক বছর ধরে উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলোয় ভালোমানের চা উৎপাদন হয়নি।'

তবে ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে উত্তরবঙ্গের বাগানগুলোয় উৎপাদিত চায়ের মান ভালো হয়েছে। ভালোমানের চা উৎপাদন করতে গেলে পরিমাণ কমবে এটাই স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ ছাড়া, রাষ্ট্রায়ত্ত ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের ১২ চা বাগান ১০ সপ্তাহেরও বেশ বন্ধ ছিল। উৎপাদন কমে যাওয়ার পেছনে এটিও একটি কারণ।

তিনি জানান, চা বোর্ড উৎপাদন বাড়াতে ও গুণগত মান নিশ্চিত করতে কাজ করছে।

চা বাগান মালিকদের ভাষ্য, উৎপাদন কম হওয়ার কারণে দেশের বাজারে চায়ের সংকট হবে না। কারণ ২০২৩ সালের উদ্বৃত্ত উৎপাদন এই ঘাটতি পূরণ করবে। তাদের মতে, দেশে চাহিদা কমে যাওয়ায় চা আমদানির প্রয়োজন নেই।

বাংলাদেশ চা অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কামরান তানভিরুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চা চাষের জন্য নিয়মিত ও মাঝারি বৃষ্টি প্রয়োজন। ২০২৪ সালে অতিরিক্ত বৃষ্টি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।'

দেশে বর্তমানে দুই দশমিক আট লাখ একরেরও বেশি এলাকায় ১৬৯ চা বাগান আছে। এর মধ্যে, মৌলভীবাজারের ৯০ বাগান থেকে দেশের মোট উৎপাদনের ৫৫ শতাংশ আসে। দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদক হবিগঞ্জ থেকে আসে ২২ শতাংশ চা।

দেশে প্রধান চা উৎপাদন মৌসুম জুন থেকে নভেম্বর। বর্তমানে দেশে বার্ষিক চাহিদা সাড়ে আট কোটি কিলোগ্রাম থেকে নয় কোটি কিলোগ্রামের মধ্যে।

নতুন উচ্চতায় চা রপ্তানি

২০২৪ সালে বাংলাদেশ সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ চা রপ্তানি করেছে। প্রতিযোগিতামূলক দামের কারণে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মতো প্রধান রপ্তানিকারকদের তুলনায় বাংলাদেশ বাড়তি সুবিধা পেয়েছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য বলছে—২০২৪ সালে সাড়ে ২৪ লাখ কেজি চা রপ্তানি হয়েছে। ২০১৭ সালের পর সর্বোচ্চ। ২০১৭ সালে এই পরিমাণ ছিল ২৫ লাখ ৬০ হাজার কেজি। ২০২৪ সালে রপ্তানি আয় ছিল চার কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

তবে চা বোর্ডের তথ্যে দেখা গেছে—বিগত কয়েক বছরে রপ্তানি ওঠানামা করেছে।

২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ছয় লাখ কেজি চা রপ্তানি হয়েছে। ২০১৯ সালে তা কমে হয়েছিল ছয় লাখ কেজি।

এরপর ২০২০ সালে তা বেড়ে হয় ২১ লাখ ৭০ হাজার কেজি। তবে ২০২১ সালে কমে হয় ছয় লাখ ৮০ হাজার কেজি।

২০২২ সালে রপ্তানি বেড়ে হয় সাত লাখ ৮০ হাজার কেজি। ২০২৩ সালে আরও বেড়ে হয় ১০ লাখ ৪০ হাজার কেজি।

মধ্যপ্রাচ্যসহ যে সব দেশে প্রবাসী বাঙালিদের বসবাস সেখানে বাংলাদেশি চায়ের চাহিদা বেশি বলে জানান চা রপ্তানির সঙ্গে জড়িত এক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা।

বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে নবম বৃহত্তম চা উৎপাদক। বৈশ্বিক উৎপাদনে এর অবদান দুই শতাংশ। বিশ্বের বৃহত্তম চা উৎপাদনকারী চীন। এরপর ভারত, শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে চা রপ্তানি করে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় রপ্তানি কমবেশি হওয়া সত্ত্বেও ২০২৫ সালে বাংলাদেশ চা বোর্ড দেড় কোটি কেজি রপ্তানির লক্ষ্য নিয়েছে।

২০০২ সালে বাংলাদেশ এক বছরে সর্বোচ্চ দেড় কোটি কেজি চা রপ্তানি করেছিল।

Comments

The Daily Star  | English
NID cards of Sheikh Hasina and family locked

NIDs of Hasina, 9 family members 'locked'

The NIDs of the 10 listed individuals were locked through an official letter on April 16

1h ago