বেক্সিমকোর শেয়ার কারসাজি: ৯ বিনিয়োগকারীকে ৪২৮ কোটি টাকা জরিমানা

বেক্সিমকো

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারের দাম নিয়ে কারসাজির দায়ে পাঁচ প্রতিষ্ঠান ও চারজনকে ৪২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

গতকাল মঙ্গলবার কমিশন সভায় গ্রুপের শেয়ারের দাম নিয়ে কারসাজি করে প্রায় ৪৮০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করায় তাদের জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

যদিও তাদের আরও কিছু মুনাফা হতে পারে সব শেয়ার বিক্রি করার পর, তবুও নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেবল যে মুনাফা হয়েছে সেটিই বিবেচনায় নিয়েছে।

এর আগে ২০০৮ সালে শেয়ারের দাম কারসাজির দায়ে এবি ব্যাংকের মার্চেন্ট ব্যাংকিং উইংকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারী মোসফেকুর রহমানকে ১২৫ কোটি, মমতাজুর রহমানকে ৫৮ কোটি, মারজানা রহমানকে ৩০ কোটি ও আব্দুর রউফকে ৩১ কোটি টাকা জরিমানা করেছে।

এ ছাড়াও, ক্রিসেন্ট লিমিটেডকে ৭৩ কোটি, আর্ট ইন্টারন্যাশনালকে ৭০ কোটি টাকা, জুপিটার বিজনেস লিমিটেডকে ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, অ্যাপোলো ট্রেডিং ১৫ কোটি ১ লাখ টাকা ও ট্রেডনেক্সট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে চার কোটি এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এটি শেয়ার কারসাজিকারীদের সতর্ক করবে।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা সব সময় নিয়ম-নীতির পূর্ণ প্রয়োগের প্রশংসা করি। তবে অবশ্যই জরিমানা করতে হবে।'

'একই সঙ্গে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কীভাবে সিকিউরিটিজ বিধিমালা লঙ্ঘন করেছে সে বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা বা ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত ছিল' বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

২০২২ সালে বেক্সিমকোর শেয়ার লেনদেন নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। যারা বেক্সিমকোর শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন করেছেন তাদের ওপর নজর দিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জ জানতে পেরেছে, এই বিনিয়োগকারীরা কোনো না কোনোভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত।

জুপিটার বিজনেস, অ্যাপোলো ট্রেডিং ও আর্ট ইন্টারন্যাশনালের মালিক শীর্ষ ব্যবসায়ী মোসফেকুর রহমান ও মমতাজুর রহমান সম্পর্কে দুই ভাই।

তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে, তারা বেক্সিমকোর শেয়ারের দামে প্রভাব বিস্তার করতে এর ধারাবাহিক কেনাবেচায় জড়িত ছিলেন।

তারা সম্মিলিতভাবে প্রতিষ্ঠানটির ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার কিনলেও কোনো ঘোষণা দেননি।

এসব কার্যক্রম সিকিউরিটিজ নিয়মনীতির লঙ্ঘন বলে জানিয়েছে ডিএসই।

অন্যান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো একই ধরনের অপরাধ করেছিল।

তারা প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের জন্য মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর ক্রয়াদেশ দিয়ে আইন লঙ্ঘন করেছেন।

শীর্ষস্থানীয় এক ব্যাংকের কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিএসইসির উচিত উপকারভোগী মালিকদের অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করা, যাতে তারা জরিমানা পরিশোধ এড়াতে না পারেন।'

তার ভাষ্য, 'এই জরিমানা বিদেশি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো ইঙ্গিত। এটি বোঝায় যে কারসাজি রোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এখন আরও কঠোর। তবে সংস্থাটিকে সব ক্ষেত্রে কঠোর হতে হবে। নিয়ম প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে।'

'অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের নেতৃত্বে বিএসইসি যথাযথভাবে জরিমানা আরোপ শুরু করলেও ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি,' বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
soybean oil price

Soybean oil prices hiked by Tk 14 per litre

The decision came following a review meeting at the secretariat on the import and supply of edible oil.

7m ago