বিদায়ী বছরে লাভের মুখ দেখতে পারেনি পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা

পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য বিদায়ী বছর তেমন কোনো লাভের মুখ দেখাতে পারেনি। দেশের শেয়ারবাজারের প্রধান সূচকগুলো ছিল নিম্নমুখী। প্রতিদিনের লেনদেনেও তেমন কোনো প্রবৃদ্ধি ছিল না। লাভ করার মতো কোনো ভালো প্রতিষ্ঠানও পুঁজিবাজারে আসেনি এ বছর।

গত এক বছরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৬ শতাংশ। একই সময়ে ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোর সূচক ডিএস৩০ কমেছে সাত শতাংশ।

২০২৩ সালটি ছিল এমন যে পুঁজিবাজারে সূচক একই জায়গায় আটকে ছিল। ফ্লোর প্রাইস আরোপের কারণে বাজার নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে।

২০২২ সালে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজারে পতন থামাতে প্রতিটি শেয়ারের জন্য ফ্লোর প্রাইস বেধে দেয়। এই নিয়মে শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম ধরে দেওয়া হয়।

করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার মধ্যে এটি করা হয়েছিল।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর বিএসইসির গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল হলে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হয়। এতে অন্তত পুঁজিবাজার নিষ্প্রাণ অবস্থা থেকে ফিরে এসেছে।

এদিকে দীর্ঘদিন পর ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পর সূচক কমলেও ডিএসইর দৈনিক গড় লেনদেন এ বছর পাঁচ শতাংশ বেড়ে ৬৩২ কোটি টাকা হয়।

সাধারণত পুঁজিবাজারে যখন কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হয় তখন বিনিয়োগকারীরা তা থেকে সামান্য কিছু আয় করতে পারেন।

কিন্তু, গত এক বছরে মাত্র চারটি আইপিও হয়েছে। ২০২৩ সালে ছিল তিনটি, এটি প্রায় দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। ফলে গত দুই বছর ধরে আইপিও থেকেও কোনো লাভ করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম একে 'অত্যন্ত হতাশার বছর' বলে আখ্যা দিয়েছেন।

তার মতে, বছরের প্রথম তিন মাস ফ্লোর প্রাইস ছিল। এটি বাজার ও বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করেছে।

এরপর চরম বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ায় নির্বাচন পরবর্তীতে সাধারণত পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা যেসব সুফল দেখতে পায়, তা এবার পায়নি।

সাইফুল ইসলাম বলেন, 'গণঅভ্যুত্থানের পর বাজার কিছুটা গতি পায়। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে সেটি স্থায়ী হয়নি।'

অন্তর্বর্তী সরকার যদি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে চায় তাহলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে হবে।

'এটি পুঁজিবাজারের প্রধান সমস্যা। এখানে বিনিয়োগ করার মতো যোগ্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম।'

তিনি মনে করেন, শুধু নীতিগত সংস্কার দেখলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে না। বরং ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোই বাজার চাঙ্গা করতে পারে।

'সরকারের কার্যক্রম এমন হতে হবে, যাতে পুঁজিবাজার সম্পর্কে মানুষের ধারণার পরিবর্তন হয়।'

২০২৪ সালে এসএমই মার্কেটে দৈনিক গড় লেনদেন প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ১৫ কোটি টাকা হয়েছে। একই বছর ট্রেজারি বন্ডের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিকল্প ট্রেডিং বোর্ডেও লেনদেন বেড়েছে।

দরপতনের সঙ্গে সঙ্গে বাজারের মূল্য-আয় অনুপাত (যা শেয়ারপ্রতি আয়ের তুলনায় বর্তমান শেয়ারের দাম পরিমাপ করে) দাঁড়িয়েছে সাড়ে নয় শতাংশ। আগের বছর তা ছিল ১৩ দশমিক ১২ শতাংশ।

এটি ইঙ্গিত দেয় যে পুঁজিবাজারে ভালো শেয়ারগুলোয় বিনিয়োগ করা হলে তা যথেষ্ট লাভজনক।

 

Comments

The Daily Star  | English
Unhealthy election controversy must be resolved

Unhealthy election controversy must be resolved

Just as the fundamental reforms are necessary for the country, so is an elected government.

12h ago