বিএসইসিতে সংঘাতে ক্ষতি কার

বিএসইসি
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) বিভিন্ন দাবিতে যে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল এর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা।

এমনিতেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি হওয়ার নানাবিধ কারণ দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। এরমধ্যে এ ধরনের একটি সংবেদনশীল মার্কেটে বিএসইসিতে তৈরি হওয়া এই সংঘাতময় পরিস্থিতি আস্থার ঘাটতি আরও বাড়িয়েছে, সন্দেহ নেই।

গত সপ্তাহে বিএসইসির শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের পদত্যাগ দাবিতে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জোরালো আন্দোলন শুরু করেন।

তারা বিএসইসি চেয়ারম্যান এবং তিন কমিশনারকে প্রায় চার ঘণ্টার জন্য অবরুদ্ধ করেন, হুমকি দেন, তার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন ও কারা এই কাজে জড়িত তা যাতে কেউ শনাক্ত করতে না পারে সেজন্য ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) বন্ধ করে দেন।

এরপর সেনাবাহিনী তাদেরকে উদ্ধার করেন। সেসময় কিছু কর্মকর্তা লাঠিচার্জের শিকার হন। পরে গত শুক্রবার বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হয়। শনিবার এই আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষের নিন্দা জানায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বাসা)।

সরকারি চাকুরিজীবীদের মধ্যে এ ধরনের আন্দোলন প্রবণতা সেটিও তাদের অফিসের সিনিয়রদের বিরুদ্ধে খুবই বিরল দৃশ্য। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে মোটেও প্রশ্রয় না দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কারণ এটি আমলাতন্ত্রে খারাপ বার্তা দিতে পারে।

এই ঘটনায় আরেকটি বিষয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা হলো বিএসইসির কর্মকর্তাদের মধ্যে আস্থাহীনতা এবং দুঃশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে যারা জুনিয়র কর্মকর্তা তাদের অনেকেই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন।

কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকে আন্দোলনে যোগ দিলেও সবাইকে দোষীদের কাতারে ফেলে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসলে তা বিএসইসির দৈনন্দিন কার্যক্রম চালাতে সমস্যা তৈরি হতে পারে। বরং যারা এর পেছন থেকে কাজ করেছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা উচিত, বলে মনে করেন বাজারের স্টেকহোল্ডাররা।

এদিকে বিএসইসিতে ঘটে যাওয়া ঘটনার পর বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস বিষয়টি নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ফোন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

ভবিষ্যতে এই সংঘাত কোন দিকে মোড় নিতে পারে যে বিষয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা স্পষ্ট জানতে চেয়েছেন। তারা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। যদি সংঘাত চলতেই থাকে তাহলে পুঁজিবাজারে যথাযথ তদারকি থাকবে না। যা বাজারে তাদের বিনিয়োগকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কারণ, যদি নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিষ্ক্রিয় থাকে তবে বাজার কারসাজির সুযোগ বেড়ে যায়।

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী ঘটনাটিকে 'অনাকাঙ্ক্ষিত' ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধসহ আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ডকে 'সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য' বলে মন্তব্য করেছেন।

কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থাগুলো উচ্চ পর্যায়ের একটি রিভিউ কমিটি দিয়ে তদারকি করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে সমাধানের জন্য কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, 'তারা নিজেরা এই সমস্যার সমাধানের মতো অবস্থানে নেই।'

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী মনে করেন যে, কর্মকর্তারা যেভাবে আন্দোলন করেছেন এভাবে করার সুযোগ নেই। তাদের যথাযথ চ্যানেলের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের অভিযোগ জানানো উচিত ছিল।

শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করা, তাদের হুমকি দেওয়া, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ও সিসিটিভি বন্ধ করা 'অপরাধমূলক'। 'এগুলো সমর্থনযোগ্য হতে পারে না,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

'বিএসইসিতে যা ঘটেছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত ও নজিরবিহীন' আখ্যা দিয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নেতিবাচক বার্তা পাবেন।'

তিনি পরিস্থিতির তাৎক্ষণিক সমাধান এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থায় এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে তার নিশ্চয়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'বিষয়টি সমাধানে অর্থ মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে।'

আশার দিক হলো ইতোমধ্যে কর্মকর্তাদের একটি অংশ কাজে যোগ দিয়েছেন। তারা কাজ করতে শুরু করেছেন। সবারই উচিত দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে কাজে যোগ দেওয়া এবং যে কোন বিষয়ে দ্বিমত করলে তা যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা। পাশাপাশি কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।

এখন বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদেরেকে আশ্বস্ত করতে হবে যেন তারা নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারেন। তাদেরকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে যেন কর্মকর্তারা অযথা হয়রানির শিকার না হন কিংবা যারা পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন তারা যেন কাজ করতে অস্বস্তি বোধ না করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Trump Tariffs: World gets 90-day pause, except China

US President Donald Trump abruptly backed down yesterday in his global trade war with a 90-day tariff pause for most countries -- but slapped even more levies against China in what has become a brutal duel between the world’s two largest economies.

5h ago