বাংলাদেশের শিল্প সাহিত্যের দিগন্তটা ছোট হয়ে যাচ্ছে: মামুনুর রশীদ

বাংলাদেশের শিল্প সাহিত্যের দিগন্তটা ছোট হয়ে যাচ্ছে: মামুনুর রশীদ
মামুনুর রশীদ। ছবি: শেখ মেহেদী মোরশেদ

একুশে পদক প্রাপ্ত নাট্যজন মামুনুর রশীদ ১৯৭২ সালের শুরুতে যুদ্ধফেরত কয়েকজন তরুণ মিলে প্রতিষ্ঠা করেন আরণ্যক নাট্যদল। আগামীকাল ২৭ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে আরণ্যক নাট্যদলের ৫০ বছর পূর্তির ৮ দিন ব্যাপী নাট্যোৎসব। শেষ হবে ৩ ফেব্রুয়ারি।

নাট্যোৎসবে মঞ্চায়ন হবে ওরা কদম আলী, ইবলিশ, ময়ুর সিংহাসন, রাঢাঙ, নানকার পালা, কহে ফেসবুক, কবর, সংক্রান্তি। এছাড়া লোকসংগীত, বেহালা, যন্ত্রসংগীত, সেমিনার ও প্রকাশনা অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশের নাট্যআন্দোলনের পথিকৃৎ মামুনুর রশীদ দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন তার ধানমন্ডির বাসায়।

আরণ্যক নাট্যদলের ৫০ বছরে এসে কাদের কথা মনে পড়ছে?

মামুনুর রশীদ: সবার কথা। আরণ্যক নাট্যদল আমরা যারা শুরু করেছিলাম তার মধ্যে আমিই একটিভ আছি। বেশিরভাগ মারা গেছেন। আলী যাকের নেই। সুভাষ দত্ত নেই। ড. ইনামুল হক নেই। মুজিব বিন হক দেশে নেই। নাজমুল হোসাইন অন্যক্ষেত্রে কাজ করেন। তারপর দলে নতুনরা এসেছেন। তার মধ্যে অনেকে আছেন আবার অনেকে নেই। আশির দশক থেকে অনেকে আছেন দলের সঙ্গে। দীর্ঘ দিন কাটিয়ে গেলেন মান্নান হীরা। আশির দশকে এসেছিলেন আরণ্যকে। তারপর মারা গেলেন বহু বছর দলের সঙ্গে থেকে। আমি সব সময় দলকে দেখেছি বছর দিয়ে নয়, কাজ দিয়ে। বছরের পর বছর  চলে যাচ্ছে কাজই হলো না তাহলে তো হবে না। কাজই আসল। ৫০ বছর পার করে এসে কত কথা, কত ঘটনা, কত স্মৃতি মনে পড়ছে।

মামুনুর রশীদ। ছবি: শেখ মেহেদী মোরশেদ

এবারের নাট্যোৎসব নিয়ে কিছু বলুন?

মামুনুর রশীদ: প্রথম যে নাটকটি করেছিলাম তার নাম কবর। সেই নাটকটিও এবারের নাট্যোৎসবে থাকছে। প্রতিদিনই নাটক মঞ্চায়ন হবে। সবশেষ প্রযোজনা হারুন রশীদের লেখা ও পরিচালনা রাজনেত্র। সেটাও থাকছে। আমরা অনেক পথনাটক করেছি সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমরা পথনাটক করতে পারছি না। বছরের যে কোনো সময় করব। পথনাটকের গুরুত্ব অনেক।

ওরা কদম আলী প্রায় ২৫ বছর পর মঞ্চে আসছে?

মামুনুর রশীদ: ২৬ বছর বয়সে ওরা কদম আলী নাটকটি লিখেছিলাম। তখন এই সূত্রগুলো কীভাবে পেলাম? নাটকের সূত্র, মানবিক সূত্র, শ্রেণী সংগ্রামের সূত্র, এগুলোর শিক্ষক হচ্ছে ষাটের দশকের আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধ। এইসব প্রেরণা থেকে নাটকটি করা। সেই সময়ে এটা ছিল সবচেয়ে মঞ্চায়িত নাটক। বাংলাদেশের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে এটি মঞ্চায়ন হয়নি। যেখানে মঞ্চ নাই সেখানেও করেছি। ৭০ দশকে গণমানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল নাটকটি।

আপনার হাত ধরে ও আপনার দলের মাধ্যমে আজিজুল হাকিম, ফজলুর রহমান বাবু, চঞ্চল চৌধুরীসহ বহু শিল্পী উঠে এসেছে। কেমন লাগে বিষয়টি?

মামুনুর রশীদ: দারুণ ভালো লাগায় মন ভরে যায়। খুব ভালো লাগে। মনে হয় আমিই তো। যখন ওদের প্রশংসা করা হয় মনে হয় ওটা আমি। অনেকে ঈর্ষান্বিত হয় জেনেছি। আমি নই। চঞ্চল, ফজলুর রহমান বাবু, আ খ ম  হাসানের যখন  প্রশংসা করা হয় তখন মনে হয় আমি ওটা। ওরা এই দল থেকে গড়ে উঠেছে। আমি প্রাইমারি স্কুলের মাস্টারের মতো কাজ করেছি। হাতেখড়ি দিয়েছি। এই অনুভূতি অসাধারণ। এই অনুভূতি আনন্দময়। আমি যখন কলকাতায় যাই, আমার চেয়ে বয়সে বড়রা আমাকে প্রণাম করে। কলকাতায় গেলে চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয়ের প্রশংসা করা হয় আমার কাছে। চঞ্চলও কলকাতায় গেলে আমার কথা বলে বিভিন্ন ইন্টারভিউয়ে। মানুষরা ভাবে এই ছেলেগুলোর হয়ত প্রাইমারি স্কুলের একটা হেডমাস্টার আছে। সেটা আমি।

উৎসব শেষ হবে কোন নাটক দিয়ে?

মামুনুর রশীদ: সংক্রান্তি দিয়ে। এটি ব্যাপক সাড়া জাগানো একটি নাটক। আমার পছন্দের নাটক তো বটেই।

দুই বাংলার তুলনা মঞ্চ নাটক নিয়ে?

মামুনুর রশীদ: নাটকের অগ্রসর যেটা, চিন্তার দিক থেকে হয়ত কাছাকাছি আমরা। নাট্য সংস্কৃতির দিক থেকে তারা এগিয়ে আছে। কিভাবে সেটা? বলছি। ওদের একটা দর্শক আছে। গ্রাম থেকে শুরু করে শহরে ওদের ব্যাপক দর্শক আছে। সমঝদার আছে। এখনো পশ্চিম বাংলা বা সারা ভারতজুড়ে ক্লাসিক্যাল মিউজিকের একটা জায়গা আছে। তার মধ্যে ওরা সমঝদার সৃষ্টি করতে পেরেছে। ক্রিটিক্যালি নাটক দেখার যে দর্শক তা এখানে নেই।

কোনো না পাওয়া কিংবা অপূর্ণতা আছে কি?

মামুনুর রশীদ: অপূর্ণতা আছে। মানুষের আকাঙ্ক্ষার শেষ নাই। বাংলাদেশের দিগন্তটা ছোট হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের শিল্প সাহিত্যের দিগন্তটা ছোট হয়ে যাচ্ছে। শিল্প সাহিত্যের যে দিগন্ত তা খুব ছোট হয়ে যাচ্ছে। এটা আরও ব্যাপকভাবে, বড় ভাবে মানুষের কাছে পৌঁছানোর যে আকাঙ্ক্ষা, বৃহত্তর মানুষের কাছে পৌঁছানোর যে আকাঙ্ক্ষা, সেই অপূর্ণতা থেকেই গেল।

আপনার জীবনের দর্শন কী?

মামুনুর রশীদ: মানুষকে ভালোবাসা। আমি প্রাচীন প্রবাদ বিশ্বাস করি- 'সবার ওপর মানুষ সত্য তাহার ওপর নাই'। মানুষই একমাত্র সমাজকে জাগাতে পারে, আবার মানুষই সমাজকে অবক্ষয়ের পথে নিয়ে যেতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English
Prof Yunus in Time magazine's 100 list 2025

Prof Yunus named among Time’s 100 Most Influential People of 2025

A tribute article on Prof Yunus was written by Hillary Clinton for the magazine

1h ago